সম্প্রতি জনৈক দেওবন্দী লেখক এক আজব দাবি উত্থাপন করেছে যে মোল্লা আলী কারী তাঁর ‘শরহে শেফা’ গ্রন্থে নাকি আসলে বলেছিলেন, “মহানবী (দ:)-এর রুহ (মোবারক) মুসলমানদের ঘরে উপস্থিত নন ” (লা আন্না রুহাহু হাযিরাতুন ফী বুইউতিল্ মুসলিমীন), যা মোল্লা কারীর বক্তব্যের ঠিক উল্টো! ওই দেওবন্দী বলে:
”তিনি (মোল্লা আলী কারী) এই বিষয়ে তাঁর ‘শরহে শেফা’ গ্রন্থে আলোচনা করেছেন যে লা আন্না রুহাহু হাযিরাতুন ফী বুইউতিল মুসলিমীন - অর্থাৎ, মহানবী (দ:)-এর রূহ (মোবারক) মুসলমানদের ঘরে উপস্থিত মর্মে ধারণাটি ভুল। কিছু কিছু সংস্করণে (আরবী) 'লা' শব্দটি বাদ পড়ায় কোনো কারণ ছাড়াই কতিপয় ব্যক্তির মাঝে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে; এঁদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছেন মুফতী আহমদ এয়ার খান সাহেব (’জাআল হক্ক’ ১৪২ পৃষ্ঠা দেখুন)।.....মোল্লা আলী কারী স্বয়ং তাঁর সকল সুস্পষ্ট উদ্ধৃতিতে হাযের ও নাযেরের ধারণাকে নাকচ করে দিয়েছেন। যারা তাঁর সংক্ষিপ্ত ও অস্পষ্ট (অপ্রাসঙ্গিক) উদ্ধৃতিগুলোর ওপর নির্ভর করেন, তাঁরা সম্পূর্ণ ও নিশ্চিতভাবে ভ্রান্ত।” [নোট-১৫: সারফরাজ সাফদার কৃত ‘আঁখো কি দানদাক’ (পৃষ্ঠা ১৬৭-১৬৮)।]
ওপরের এই ধৃষ্টতাপূর্ণ দাবি কেউ তখনি উত্থাপন করতে পারে, যখন আরবী ভাষাগত জ্ঞানে সে মূর্খ হয়। কেননা, মোল্লা আলী কারী তাঁর বক্তব্য আরম্ভ করেন আরবী শব্দ ‘আয়’ (অর্থাৎ/মানে) দ্বারা, যার সাথে না-বাচক (নফি-সূচক) বাক্য জুড়ে দেয়া আরবী ব্যাকরণগত ভুল হবে; যেমন - ‘মহানবী (দ:)-এর রূহ মোবারক মুসলমানদের ঘরে উপস্থিত নন।’ সত্য হলো, আরবী ‘লা’শব্দটি বাদ পড়ে নি, কারণ তা প্রথমাবস্থায় সেখানে ছিলই না; আর তা ওখানে ছিল মর্মে দাবি করাটা তাহরিফ তথা দলিল রদ-বদলের অপচেষ্টার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। অধিকন্তু, মোল্লা আলী কারী ’উপস্থিত’ বোঝাতে যে (আরবী) শব্দ ‘হাযির’ ব্যবহার করেছেন, তা পুং-লিঙ্গে (মোযাক্কের); ‘হাযিরাতুন’ তথা স্ত্রী-লিঙ্গে (মোয়ান্নেস) নয়। কেননা, রুহের ক্ষেত্রে উভয় লিঙ্গ ব্যবহৃত হলেও মহানবী (দ:)-কে উদ্দেশ্য করার সময় মোযাক্কের ব্যবহার করা অধিক যথাযথ।
এক দেওবন্দী কর্তৃক নবুয়্যতের গুণাবলী অস্বীকার
দেওবন্দীদের অপর এক ব্যক্তি যাকে কেউ কেউ ’আলেম’ মনে করেন, সে হুযূর পাক (দ:)-এর প্রতি হাযের ও নাযের হওয়ার বৈশিষ্ট্য আরোপ করার বেলায় আপত্তি উত্থাপন করেছিল; কেননা তার দাবি অনুযায়ী এই বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলী একমাত্র আল্লাহতা’লারই অধিকারে। তর্কের ভিত্তি হিসেবে যদি এই কথাকে সত্য হিসেবে ধরেও নেয়া হয়, তথাপি যুক্তি ভুল। কেননা, এ কথা এই রকম শোনায় যে ‘আর্ রউফ’ ও ‘আর-রাহীম’ খোদায়ী গুণাবলী হবার কারণে সেগুলো নবুয়্যতের গুণাবলী হতে পারে না। ইমাম কাজী আয়ায (রহ:) তাঁর ‘শেফা শরীফ’ গ্রন্থে এই কূটতর্ককে খণ্ডন করেছেন এ কথা বলে:
”জেনে রেখো, আল্লাহ তাঁর আম্বিয়া (আ:)-দের অনেকের প্রতি সম্মানের নিদর্শনস্বরূপ তাঁর নিজের কিছু নাম মোবারক তাঁদেরকে দান করেছেন; উদাহরণস্বরূপ, তিনি হযরত এসহাক (আ:) ও হযরত ইসমাইল (আ:)-কে ‘আলিম’ (জ্ঞানী) ও ‘হালিম’(ধৈর্যশীল) নামে ডেকেছেন। ঠিক তেমনি হযরত ইবরাহীম (আ:)-কে ‘হালিম’, হযরত নূহ (আ:)-কে ‘শাকুর’ (কৃতজ্ঞ), হযরত মূসা (আ:)-কে ’কারীম’ (মহৎ) ও ‘ক্কাওয়ী’ (শক্তিশালী), হযরত ইউসুফ (আ:)-কে ‘হাফেয,’ ‘আলেম’ (জ্ঞানী অভিভাবক/রক্ষক), হযরত আইয়ুব (আ:)-কে ‘সাবুর’(ধৈর্যবান), হযরত ঈসা (আ:) ও হযরত এয়াহইয়া (আ:)-কে ’বারর’ (আত্মোৎসর্গিত), এবং হযরত ইসমাইল (আ:)-কে ‘সাদিক আল-ওয়াদ’আ’ (প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারী) নামে ডেকেছেন.....তথাপি তিনি আমাদের মহানবী (দ:)-কে বেছে নিয়েছেন (এঁদের মধ্যে) এই কারণে যে, তাঁরই মহাগ্রন্থে (আল-কুরআনে) এবং আম্বিয়া (আ:)-বৃন্দের পবিত্র জবানে বিবৃত তাঁর (বহু) নাম মোবারকের অঢেল সম্পদ তিনি মহানবী (দ:)-কে মন্ঞ্জুর করেছেন।” [নোট-১৬: ইমাম কাজী আয়ায প্রণীত ‘শেফা শরীফ’; ইংরেজি অনুবাদ - আয়েশা আবদ আর-রাহমান বিউলী (গ্রানাডা, মদীনা প্রেস, ১৯৯২), পৃষ্ঠা ১২৬।]
দেওবন্দীদের অপর এক ব্যক্তি যাকে কেউ কেউ ’আলেম’ মনে করেন, সে হুযূর পাক (দ:)-এর প্রতি হাযের ও নাযের হওয়ার বৈশিষ্ট্য আরোপ করার বেলায় আপত্তি উত্থাপন করেছিল; কেননা তার দাবি অনুযায়ী এই বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলী একমাত্র আল্লাহতা’লারই অধিকারে। তর্কের ভিত্তি হিসেবে যদি এই কথাকে সত্য হিসেবে ধরেও নেয়া হয়, তথাপি যুক্তি ভুল। কেননা, এ কথা এই রকম শোনায় যে ‘আর্ রউফ’ ও ‘আর-রাহীম’ খোদায়ী গুণাবলী হবার কারণে সেগুলো নবুয়্যতের গুণাবলী হতে পারে না। ইমাম কাজী আয়ায (রহ:) তাঁর ‘শেফা শরীফ’ গ্রন্থে এই কূটতর্ককে খণ্ডন করেছেন এ কথা বলে:
”জেনে রেখো, আল্লাহ তাঁর আম্বিয়া (আ:)-দের অনেকের প্রতি সম্মানের নিদর্শনস্বরূপ তাঁর নিজের কিছু নাম মোবারক তাঁদেরকে দান করেছেন; উদাহরণস্বরূপ, তিনি হযরত এসহাক (আ:) ও হযরত ইসমাইল (আ:)-কে ‘আলিম’ (জ্ঞানী) ও ‘হালিম’(ধৈর্যশীল) নামে ডেকেছেন। ঠিক তেমনি হযরত ইবরাহীম (আ:)-কে ‘হালিম’, হযরত নূহ (আ:)-কে ‘শাকুর’ (কৃতজ্ঞ), হযরত মূসা (আ:)-কে ’কারীম’ (মহৎ) ও ‘ক্কাওয়ী’ (শক্তিশালী), হযরত ইউসুফ (আ:)-কে ‘হাফেয,’ ‘আলেম’ (জ্ঞানী অভিভাবক/রক্ষক), হযরত আইয়ুব (আ:)-কে ‘সাবুর’(ধৈর্যবান), হযরত ঈসা (আ:) ও হযরত এয়াহইয়া (আ:)-কে ’বারর’ (আত্মোৎসর্গিত), এবং হযরত ইসমাইল (আ:)-কে ‘সাদিক আল-ওয়াদ’আ’ (প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারী) নামে ডেকেছেন.....তথাপি তিনি আমাদের মহানবী (দ:)-কে বেছে নিয়েছেন (এঁদের মধ্যে) এই কারণে যে, তাঁরই মহাগ্রন্থে (আল-কুরআনে) এবং আম্বিয়া (আ:)-বৃন্দের পবিত্র জবানে বিবৃত তাঁর (বহু) নাম মোবারকের অঢেল সম্পদ তিনি মহানবী (দ:)-কে মন্ঞ্জুর করেছেন।” [নোট-১৬: ইমাম কাজী আয়ায প্রণীত ‘শেফা শরীফ’; ইংরেজি অনুবাদ - আয়েশা আবদ আর-রাহমান বিউলী (গ্রানাডা, মদীনা প্রেস, ১৯৯২), পৃষ্ঠা ১২৬।]
ওপরে উদ্ধৃত প্রমাণাদি সন্দেহাতীতভাবে পরিস্ফুট করে যে ’হাযের’ ও ’নাযের’ নাম দুটো আল্লাহর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত যদি হয়ও, তথাপি তাঁর নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দাদের মধ্যে ওই বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলী সন্নিবেশিত থাকার সম্ভাবনায় কোনো রকম বাধা নেই। বস্তুতঃ এই বিষয়টি সর্বজন-জ্ঞাত যে কেরামন কাতেবীন তথা কাঁধের দুই ফেরেশতা, ‘কারিন’, যমদূত আযরাঈল ফেরেশতা এবং শয়তানও উপস্থিত; এরা সবাই দেখছে, শুনছে, আর সুনির্দিষ্ট যে কোনো সময়ে সংঘটিত মানুষের সকল কর্মের সাক্ষ্য বহন করছে।
উপরন্তু, ‘হাযের’ ও ’নাযের’ কি খোদায়ী (ঐশী) নাম ও গুণাবলীর অন্তর্ভুক্ত? ইমাম আহমদ ফারুকী সেরহিন্দী (মোজাদ্দেদে আলফে সানী)-কে এ মর্মে উদ্ধৃত করা হয় যে তিনি বলেছিলেন: “আল্লাহতা’লা প্রতিটি ও সকল ছোট ও বড় ঘটনা/পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকেফহাল এবং তিনি ’হাযের’ ও ’নাযের’। তাঁর সামনে প্রত্যেকের শরমিন্দা হওয়া উচিত।” [নোট-১৭: ‘মকতুবাত-এ-ইমাম-এ-রব্বানী, ১ম খন্ড, জব্বারী খানকে লেখা ৭৮ নং চিঠি।]
তবে খোদায়ী বৈশিষ্ট্য/গুণাবলী আজ্ঞাস্বরূপ এবং অনুমানেরও অতীত। যুক্তি-তর্ক, সাদৃশ্যপূর্ণ কোনো কিছুর সাথে তুলনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, কিংবা অন্য কোনো রকম ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ঐশী বৈশিষ্ট্য/গুণাবলী উপলব্ধির কাজে ব্যবহার করা হয় না, বরং শরীয়তের মৌলিক দুটো উৎস কুরআন ও হাদীসের মাধ্যমে প্রকাশিত ঐশী প্রত্যাদেশই শুধু এ কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সমস্ত না হলেও বেশির ভাগ আকিদার কেতাবে, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আল-মাতুরিদীর আকায়েদ, তাতে এই মৌলিক বিশ্বাসটি উপস্থিত রয়েছে। অতএব, আমরা ‘আল-হাযের’ সম্পর্কে কথা বলতে পারবো না, যখন ‘আল-নাযের’ ‘আশ্ শাহীদের’-ই অনুরূপ, যা’তে ঐশী দৃষ্টিক্ষমতার মানে হলো খোদাতা’লার জ্ঞান। ইমাম বায়হাকী বলেন:
”আশ-শাহীদ তথা সাক্ষীর অর্থ সেই মহান সত্তা (খোদা) যিনি ভালভাবে জ্ঞাত যে সকল সৃষ্টি উপস্থিত থাকা অবস্থায় সাক্ষ্যের মাধ্যমে জানতে সক্ষম.......কেননা, দূরে অবস্থানকারী কোনো মানুষ তার ইন্দ্রিয়গুলোর সীমাবদ্ধতায় ভোগে; পক্ষান্তরে, আল্লাহতা’লা ইন্দ্রিয়ের মুখাপেক্ষী নন এবং তিনি এর অধিকারী মানুষের মতো সীমাবদ্ধও নন।” [নোট-১৯: আল-বায়হাকী কৃত ‘আল-আসমা’ ওয়াস্ সিফাত’ (কাওসারী সংস্করণের ৪৬-৪৭ পৃষ্ঠা; হাশিদী সংস্করণের ১:১২৬-১২৭)।] {‘শাহীদ’ আল-কুরআনে বর্ণিত নবুয়্যতের একটি বৈশিষ্ট্যও}
উপরন্তু, ‘হাযের’ ও ’নাযের’ কি খোদায়ী (ঐশী) নাম ও গুণাবলীর অন্তর্ভুক্ত? ইমাম আহমদ ফারুকী সেরহিন্দী (মোজাদ্দেদে আলফে সানী)-কে এ মর্মে উদ্ধৃত করা হয় যে তিনি বলেছিলেন: “আল্লাহতা’লা প্রতিটি ও সকল ছোট ও বড় ঘটনা/পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকেফহাল এবং তিনি ’হাযের’ ও ’নাযের’। তাঁর সামনে প্রত্যেকের শরমিন্দা হওয়া উচিত।” [নোট-১৭: ‘মকতুবাত-এ-ইমাম-এ-রব্বানী, ১ম খন্ড, জব্বারী খানকে লেখা ৭৮ নং চিঠি।]
তবে খোদায়ী বৈশিষ্ট্য/গুণাবলী আজ্ঞাস্বরূপ এবং অনুমানেরও অতীত। যুক্তি-তর্ক, সাদৃশ্যপূর্ণ কোনো কিছুর সাথে তুলনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, কিংবা অন্য কোনো রকম ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ঐশী বৈশিষ্ট্য/গুণাবলী উপলব্ধির কাজে ব্যবহার করা হয় না, বরং শরীয়তের মৌলিক দুটো উৎস কুরআন ও হাদীসের মাধ্যমে প্রকাশিত ঐশী প্রত্যাদেশই শুধু এ কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সমস্ত না হলেও বেশির ভাগ আকিদার কেতাবে, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আল-মাতুরিদীর আকায়েদ, তাতে এই মৌলিক বিশ্বাসটি উপস্থিত রয়েছে। অতএব, আমরা ‘আল-হাযের’ সম্পর্কে কথা বলতে পারবো না, যখন ‘আল-নাযের’ ‘আশ্ শাহীদের’-ই অনুরূপ, যা’তে ঐশী দৃষ্টিক্ষমতার মানে হলো খোদাতা’লার জ্ঞান। ইমাম বায়হাকী বলেন:
”আশ-শাহীদ তথা সাক্ষীর অর্থ সেই মহান সত্তা (খোদা) যিনি ভালভাবে জ্ঞাত যে সকল সৃষ্টি উপস্থিত থাকা অবস্থায় সাক্ষ্যের মাধ্যমে জানতে সক্ষম.......কেননা, দূরে অবস্থানকারী কোনো মানুষ তার ইন্দ্রিয়গুলোর সীমাবদ্ধতায় ভোগে; পক্ষান্তরে, আল্লাহতা’লা ইন্দ্রিয়ের মুখাপেক্ষী নন এবং তিনি এর অধিকারী মানুষের মতো সীমাবদ্ধও নন।” [নোট-১৯: আল-বায়হাকী কৃত ‘আল-আসমা’ ওয়াস্ সিফাত’ (কাওসারী সংস্করণের ৪৬-৪৭ পৃষ্ঠা; হাশিদী সংস্করণের ১:১২৬-১২৭)।] {‘শাহীদ’ আল-কুরআনে বর্ণিত নবুয়্যতের একটি বৈশিষ্ট্যও}
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন