শুক্রবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১৫

মা আমার মা

পাখিদের কলরব হাজারো, মনে হয়  বাকি আছে কিছু আরো
ফুলের খুসবুতে এ যাহা ভরা ,মনে হয় ভালো হত যদি থাকত মা আমারো

বাগিচায় গোলাপের কমি নাই সামান্য
থাকত যদি মা , তো হত কতই অনন্য

নসিব আমার এত খারাপ মায়ের মমতা থেকে বঞ্চিত
মিলেনা মায়ের মমতা , আছে হাজারো দৌলত সঞ্চিত

রমজানে আর এক রং ছিল সেহরী আর ইফতারে
আছে রমজান, সেহরী ও ইফতার ,
মিলেনা সেই খুসবু যা দিত মা আমারে


তুমি পাশে থাকলে , এ কলম থাকত লিখতে আর লিখতে
আমি ঘুমিয়ে পড়তাম , মা , তুমি এসে দেখতে

তোমার ছেলের মনের কান্না কতই পাতায়  ভরা !
আজ আমি মা তোমার জন্য হয়ে আপন হারা

কাঁদি মা কতই কাঁদি ! শুধুই তোমার জন্য
ভাল লাগানো কোন কিছু মা ছারা আর ভিন্ন

দুনিয়া হায় আজ আছে নাই , এই দুনিয়াত রীতি
তাই তো আমার মা কে নিয়ে গেল কঠিন বীধী

দোয়া করি আজ দুহাত তুলে আয় খোদা দয়া ময়
আমার মায়ের নসিবে যেন বেহেস্ত নসীব হয়। আমীন।


ইমান আর ইবাদত

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।  

লক্ষ  কোটি সালাম ও দরুদ সেই মহান রাসুলে আকরাম সাল্লেল্লাহু আলায়হে ওয়া সাল্লামের প্রতি যিনি আল্লাহর দীন এ ইসলাম কে পূর্ণাঙ্গ রূপে প্রকাশ করেছেন। আরো সালাম  খোলাফায়ে রাশেদিনদের প্রতি ও সকল আহলে বায়েতের প্রতি।  

সালাম এক লক্ষ চব্বিশ হাজার আম্বিয়া কেরামের গনের  প্রতি ও ১২ ইমামের প্রতি।  সালাম খাজা খাজেগানের প্রতি ও কাদেরিয়া ,চিস্তিয়া , নকশাবন্দী , মুজাদ্দেদিয়া  তরিকার ছাড়াও সকল তরিকার শায়েখ দের প্রতি ও যাদের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর করুনা লাভ করেছি।  

আল্লাহ তাদের প্রত্তেকের ইজ্জাত বুলন্দ থেকে উচ্চতর বুলন্দ করুন  (আমিন) 


পর কথা এই যে আমরা সকলে মুসলমান (আলহামদুলিল্লাহ) 

আমরা সবাই এক কথায় সীকার করি আল্লাহ এক ও অদিতিয় ও নবী হজরত মোহাম্মদ সাল্লেললাহু আলায়হে ওয়া সাল্লাম আমাদের রাসুল ও আমাদের দ্বীন ইসলাম। ও আমরা এটা ও সীকার করি কিয়ামতের দিনে আমাদের কে হিসাব নিকাশের কাতারে দন্ডায়মান হতে হবে , আল্লাহ বেহতর জানেন কি মসিবত আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে সেই কঠিন দিনে।  


আমাদের ইমান যদি মজবুত হয় তা হলে আমরা সেই দিন আল্লাহর করুনা লাভ করতে সক্ষম হব।  অন্যথায় আমাদের জায়গা হবে সেই জাহান্নাম যে খানে অন্তহীন দুক্ষ কষ্ট ছাড়া কিছুই নাই।  

তাই আগে আমাদের ইমান কে মজবুত করা প্রয়োজন   .


কথা আজ ইমান নিয়ে।  নিজের ইমান কোন খাতে আছে তা একটু দেখে নিন  



ইমান হচ্ছে সেই আখরোট ফলের মত।  যার উপরে শক্ত একটা খোল।  সেটা  ভেদ করে ভিতরে গেলে থাকে সেই মগজ।  সেই মগজে যদি মেহনত করা যায় তা হলে সেখান থেকে তেল বের করা সম্ভব   অন্যথায় নয়   .

ঈমানের প্রকার ;- 

(১) অন্তরের মধ্যে কোন প্রকার প্রত্যয় সৃষ্টি করা বেতীত মুখে (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা ) আজকের এই দিনে এরূপে উচ্চারণ করা মুসলিম কিন্তু কম নয়।  আর এরূপে উচ্চারণ করার মাঝে মোনাফেকরা বা বেদীন রা ও সামিল আছে।  হয়ত আপনি ও দেখেছেন কথার মাঝে কোন বেধর্মী ও কালেমা পরেছে।  আর যদি না দেখে থাকেন তো মনে করে দেখুন অনেক বেধর্মী আছে যারা যুদ্ধ ক্ষেত্রে মুসলিম মুজাহিদ বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মুখে কালেমা উচ্চারণ করে থাকে।  আর তখন সেই সকল বেধর্মী কে ও মুসলিম বাহিনী হেফাজাত করতে বাধ্য হয়ে যায় কালেমা উচ্চারণ করার কারণে।  

কিন্তু তাদের সেই বিপদে পরে কালেমা পাঠ করে মুসলিম বাহিনী থেকে ও নিরাপত্তা তো পায় , কিন্তু আল্লাহ পাকের কাছে কি তাদের সেই মোনাফেকাত গোপন থাকে ? নিশ্চয় থাকে না. /


তারা সেই দিন এই মোনাফেকাতের শাস্তি অবশ্যই পাবে।  

ঠিক এমনি অনেক মুসলিম ও আছেন যারা মুসলিম ঘরে জন্ম নিয়েছেন , মসজিদে যান নামাজ ও পড়েন রোজা ও রাখেন নিজেকে মুসলিম হিসেবে প্রকাশ  করার জন্য।  আর সেই কারণে তারা মুসলিম সমাজে মুসলিম হিসেবেই গণ্য হয়ে থাকে , আর মুসলিম হিসেবে সকল সুযোগ সুবিধা ও ভোগ করে থাকেন। 

কিন্তু তাদের বিশ্বাস দৃর থাকে না. শুদু নিজের ফায়দার কারণে এমন করে থাকেন। এমন ইমান আপনার হুয়তো দুনিয়ায়র জীবনে অনেক ফায়্দামন্দ হতে পারে।  কিন্তু আল্লাহর কাছে তা কোন কাজে আসবে না. 


গুনিয়াতুত তালেবিন কিতাবে হযরাত বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানি কাদ্সর্হুল আজিজ রাহমাতুল্লাহে আলায়হে লিখেছেন যে ;- কিয়ামতের দিন আল্লাহ আল্লাহ ৩ প্রকার লোক কে ডাকবেন  (১) আলেম (২) শহীদ (৩) দানী বেক্তিকে /


আর আল্লাহ বলবেন আলেমকে তুমি কি করেছ  দুনিয়ার বুকে ? 

আলেম বলবে যে ইয়া আল্লাহ আমি তো সারাজীবন মসজিদের  ইমামতি করেছি।  লোকদের কে ওয়াজ ও নসিহত করেছি।  ইসলামের শিক্ষা দিয়েছি।  


ফেরেস্তারা সাক্ষী দিবে ; ইয়া আল্লাহ এ মিথ্যা বলছে।  আল্লাহ পাক ও বলবেন তুমি মিথ্যা বলছ।  কারণ তুমি মসজিদে ইমামতি , লোকদের কে ওয়াজ নসিহত , ও শিক্ষা দিয়েছো এই কারণে যে যাতে তারা তোমাকে বড় আলেম ও ইবাদত গুজার লোক বলে।  আর সাধারণ লোকেরা তা বলেছে ও মেনেছে আর তুমি ও তাই পেয়েছ যা তুমি চেয়েছিলে।  তুমি আমার জন্য এসব কিছুই কর নাই./ তাই তোমার জন্য আমার কাছে কিছুই নাই। 


তখন তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।  


আজ আমাদের মাঝে এমন কোটি কোটি লোক আছে আর হাজারো আলেম। যারা মানুষ কে ডাকে নিজেকে বড় করার জন্য।  নিজের ইলম ও ইবাদত প্রকাশ করার জন্য।  মানুষের বাহবা কুড়ানোর জন্য।  আর তারা এই দুনিয়ায়র বুকে তা পেয়ে থাকে।  


আল্লাহ পাক বলেছেন তোমরা যার জন্য ইবাদত করবে তাই তোমাদের কে দেয়া হবে।  যে দুনিয়ার জন্য ইবাদত করে মানুষ কে দেখানোর জন্য আল্লাহ তাকে তাই দান করেন। আর আল্লাহর কাছে তার জন্য কিছুই  থাকে না. / 


তাই আমাদের উচিত এই রকম মুখে কথা বলে অন্তরে প্রত্যয় সৃষ্টি না করে ইবাদত করে ও লোকদের  মাঝে ওয়াজ নসিহত করে কোন লাভ হবে না।  কারণ আপনার নিজের ও ফায়দা  হবে না আর না আখেরাতের , আর আপনার কথা সুনে মানুষ তো বাহবা দিবে কিন্তু তারা হেদায়াত ও  প্রাপ্ত  হবে না।  


তাই এসব থেকে দুরে থাকায় উত্তম।  


চলবে 

মঙ্গলবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০১৫

তাবলীগি দোর কে নবী পাকের সাথে তুলনা

ওহাবিদের মধ্য আক্কেল মন্দ কম আর বে-আক্কেল বেশি।  তাদের কিতাব পড়লে তাদের বিবেক বুদ্ধির পরিচয় পাওয়া যায়। আর ভিমের ঘোরে সপ্ন এদের দলিল ।

মানুষ যেমন ঘুম থেকে উঠে মাঝে মাঝে উল্টা পাল্টা কথা বলে ঠিক 
তেমনি একটা বিষয় ( মালফুজাত এ মাওলানা ইলিয়াছ) ৫৩ নং মালফুজাত এ বলেছেন যে :- তোমরা নবীদের মত মানুষের উপকার করার জন্য প্রেরিত হইয়াছ। 

এখন কথা হচ্ছে নবীদের মত কি কোন নবীর উমমত হতে পারে ? 
নিজেকে কি আপনি বলতে পারবেন আমি নবীর পাকের মত ? 
তবে হা  , আপনাদের আলেম কাশেম নানুতভী তো এ ও বলেছেন যে উমমত নিজ ইবাদতের দ্বারা কখনও কখনও নবীদের কে ও পিছনে ফেলে যায়(নাউযুবিললাহ ) 

যে বেক্তি বিশ্বাস করবে সে নবীর মত তার কি ইমান থাকবে ? 
নবী পাক বলেছেন ;- লাসতুকা আহাদিম মিনকুম ;- আমি তোমাদের কারো মতই না। 

তারা আর একটা কথা বলে আমরা তো ভাল কথা বলি।  সবাই কে নামাজের জন্য ডাকি।  
আর একটা আয়াত কে দলিল দেয় যো উপরে দেয়া আছে কিতাবের পাচায়। ;- তোমাদের মধ্য এমন এক দল হওয়া উচিত যারা ইসলাম বা কল্যানের দিকে ডাকবে , সৎ কাজের উপদেশ মন্দ কাজে নিষেধ করবে . তাঁরাই প্রকৃত সফলকাম ও কামিয়াব। (আল ইমরান আয়াত ১০৪) 

এই আয়াত কে দলিল দেয়। 
আর বলে আমরা সেই শ্রেষ্ট উমমত ।

 তারা ডাকে আমাদের(মুসলিম) কে মসজিদে ঘুমানোর জন্য মুসলিম হয়ে তাদের দলে যেতে।  কিন্তু হিন্দু খৃষ্টান কে কোন দিন কি ডেকেছে ? যদি ডেকে থাকে তো প্রমান দিন।  

আর আয়াত কাদের জন্য ? সবাই কে এই কাজ করতে পারে ? 
না।  বরং এই কাজ কে আল্লাহ এক দল কে উদ্দেশ্য করে বলেছেন। এটা সবার জন্য।  কিন্তু তারা বলে আমরাই সেই দল। 

তাদের দাবির কোন মুল্য নাই।  কারন এই কাজ শুধু আলেম সম্প্রদায় ও হক্কানী পীর মাশায়েখ গন করে আসছেন।
এমন কি হাদিসে এ ও আছে উমমতে মোহাম্মদি এর আলেম গন বনীইসরাইলের নবীগনের মত(কারো যদি চুলকানি হয় তো তাদের কিতাব থেকে প্রমান করব) ।  তাঁরাই হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান কে দীনের দাওয়াত দিয়ে মুসলমান করেছেন।  মুসলমান ডেকে ডেকে মসজিদ ভর্তি করে নাই।  পিকনিক স্পষ্ট বানায় নাই।     আর নির্ভরযোগ্য তাফসীর থেকে তা প্রমানিত।  কেউ প্রমান চাইলে দিতে রাজী আছি আমি।  


তো বল এখন কোথায় তোমাদের ইমান আর কোথায় থাকে তোমাদের তাবলীগ ? 
যা কোন কাজে আসবে না।  

নবী পাকের শরীর মোবারক যারা চুরি করতে গিয়েছিল তারা ও নামাজ পড়ত, নামাজ পড়ে আর আল্লাহ করে যদি জান্নাত পাওয়া যায় তা হলে কিন্তু তাদের কে ও জান্নাত দিতে হবে আল্লাহ পাক কে।  
তাই শুধু নামাজ কালাম না।  বরং আকিদা ও বিশুদ্ধ হতে হবে।  এমন আকিদা থাকা সমীচীন নয় যে আমরা নবীর মত।  আর নবী আমার মত।  
আর যদি থাকে তো জাহাননাম তোমার যায়গা তা মনে রাখ।  


সোহেল রানা 

সোমবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০১৫

মুসলিম ২ প্রকার ভন্ড ইলিয়াছ

বেদাতি তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইলিয়াছ মেওয়াতি এর (মালফুজাত এ মাওলানা ইলিয়াছ ) এত ৪২ নং মালফুজাত এ বলেছেন যে ;- মুসলমান হচ্ছে দুই প্রকার , তৃতীয় কোন প্রকার নাই।  (১) যারা আল্লাহর রাস্তায় (তাবলীগের) বাহির হইবে।  (২) যারা তাদের সহায়তা করবে।  মালফুজাত নং ৪২


এখন আমার কথা হচ্ছে যে মাওলানা ইলিয়াছ সাহেবের প্রতিষ্ঠিত তাবলিগ জামাত , তা সকলের জানা আছে।
কিন্তু মাওলানা ইলিয়াছ সাহেবের আব্বা ও অনার বড় ভাই যিনি রশিদ আহমাদ গান্গুহী এর অন্নতম শিস্য চিলেন ও রশিদ আহমাদ গান্গুহী , কাশেম নানুতাভি , খলিল আহমাদ আম্ভাত্ভি দের সময় মাওলানা ইলিয়াছের তৈরী তাবলিগ ছিল না।  এই সকল ওলামায়ে দেওবন্দ এর গত হওয়ার পর এই বেদাতি তাবলিগ জামাতের শুরু হয়।

এখন আমার কথা হচ্ছে যে মাওলানা ইলিয়াছ সাহেবের বাবা , বড় ভাই , গান্গুহী , খলিল আহমাদ আম্ভাত্ভি , নান্তাভি তারা তো মাওলানা ইলিয়াছের গঠিত তাবলিগ কে সহায়তা করতে পারেন নাই/

তো তারা কি মুসলিম ছিলেন না ? তারা কি মুশরিক ছিলেন ?
আমার এই প্রশ্নের কারণ হচ্ছে মাওলানা ইলিয়াচ সাহেব বলেছেন মুসিল্মান ২ প্রকার বেতীত ৩ প্রকার নাই।  ১) যারা আল্লাহর রাস্তায় (তাবলিগে) বের হয় (২) যারা তাদের সহায়তা করে।
এ ছাড়া অন্যকেউ আর মুসলিম নাই।

তো মাওলানা ইলিয়াছ সাহেবের বাবা তো আর তাবলিগ জামাত কে সহায়তা করতে পারেন নাই।  তো তিনি আর আর মুসলিম থাকলেন মাওলানা ইলিয়াছ সাহেবের কথা মত ?
সেই সকল ওলামায়ে দেওবন্দ যারা তাবলিগ জামাত সুতু করার আগে মারা গেছেন তারা কি আর মুসলিম থাকলেন  ? মাওলানা ইলিয়াছ সাহেবের কথা  মত ?

আপনারা বার বার আপনাদের নিজেদের কিতাব থেকে ও নিজেদের কথার কারণে আমাদের হাতে জুতা পেটা হন।
এখন যদি তাই ধরা হয় যে মাওলানা ইলিয়াছের বাবা মুসলিম ছিলেন না , এমন কি সেই সকল ওলমৌএ দেওবন্দ ও মুসলিম ছিলেন না।
মুসলিম দের জন্ম হয়েছে তাবলিগ জামাত শুরুর পর থেকে।  আর বাকিরা ছিল মুশরিক   .
আর যদি তাই হয় এমন কি মাওলানা ইলিয়াচের বাবা যদি মুসলিম না হন ? তো মাওলানা ইলিয়াছ কি হারামি নয় ?
সেও সমল ওলামায়ে দেওবন্দের সন্তান গণ এমন কি মাহমুদুল হাসান গান্গুহী কি হারামারি নয় ?

জবাব দেন আমার যদি কোন হালালের সন্তান থেকে থাকেন।
আর হালাল আর দেওবন্দী আসমান আর জমিনের দুরত্ব বজায় রাখে মধ্যখানে।

সোহেল রানা



রবিবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০১৫

অবরোধ না অনশন চাই।

আমাদের দেশে অনেক রাজনীতবিদ আছেন তারা কথায় কথায় দেশে হরতালের ডাক দেয় অবরোধের ডাক দেয়।
আর আমাদের পাশের দেশ ভারত এ অনেক রাজনীতিবিদ আছেন তাদের রাজনীতি কিন্তু অনেক আলাদা।
তারা অবরোধ বা বন্ধ না করে , করে থাকে আমরণ অনশন। সরকারের প্রতি দাবি উক্খাপন তারা জনসমুক্ষে এই অনশন করে থাকে।
আর আমাদের দেশের জামাত শিবির ইসলামের নাম যা করছে তা কিন্তু সুধ রাজনীতির অনেক উল্টো।   জামাত শিবির বলব না বরং দেশের সরকার পক্ষীয় দল ও জড়িত আছে।  তারা ভালো করে দালাল দের টাকা দিয়ে পেট পুরে খায় , কিছু তা মেরে দেয় চুপ করে , আর নিজের পারিশ্রমিক তো আছে সাথে অর্ধেক টাকার পেট্রল কিনে কাচ এর বোতল করে বানায় পেট্রল বম্ব।  আসলে এরা করে থাকে হুকুমের পালন মাত্র। এদের কাছে কোনো দল বা দেশ মূল উদ্দেশ নয়।
আমাদের দেশের বিগত দিনের প্রধানমন্ত্রী লম্বা অবরোধের ডাক দিলে ১৯ দিনে না কি ৩৫ মানুষ মারা যায়। বার্ন ইউনিট তো ভরে গেছে। কত কি জলেছে আগুনে তা আমার জানার বিষয় না।
আর গত কাল যে বেগম খালেদা জিয়ার ছেলে মারা গেল তো কেমন লাগলো বেগম খালেদা জিয়া কে ? বলবেন কি ?
ঠিক একই রকম কষ্ট হয়েছে সেই সকল মা কে।

আপনারা সেই সকল লোক যারা দেশের জন্য দেশের সম্পদ জালান , তাদের কে বলছি , আপনারা আজ দেশের জন্য বেগম জিয়া কে নিয়ে আমরণ অনশন করুন।
আর দাবি দিন সরকারের তত্তাবধায়ক নীতি মালাতে ফিরিয়ে যেতে।
আন্না হাজারী গান্ধিবাধি যদি পারে http://archive.prothom-alo.com/detail/news/181094

তো আপনারা কেন পারভেন না ? আন্না হাজারী , তিনি একজন গান্ধীবাদী নেতা হয়ে একাই দিল্লি কে বাধ্য করেছেন ৩ টা বিল পাশ করতে।
কারণ তিনি চাইতেন দেশের উন্নতি।
আজ প্রমান করুন ;- যে আপনারা ও দেশের জন্য অনশন করছেন।  দেখবেন দেশের ১৮ কোটি লোক আপনার পাশে এসে দাড়াবে। সরকার যদি সোজা হয়ে না নাম তো দেখবেন আবার জন্ম নিবে আর এক (ফকরুদ্দিন আহমাদ ) সব সোজা হয়ে , তা কিছু সময়ের জন্য হলেও।
আর জানি আপনারা পারবেন না   কারণ আপনারা যা করতেছেন তা টাকার জন্য , আর জারা টাকা দিচ্ছে তারা ক্ষমতার জন্য , দেশপ্রেম সে তো একটা পুরাই ধোকা।

তাই বলব যদি দেশকে ভালো বেশে  দেখাতে না পারেন তা হলে কারো ক্ষতি করবেন না।  

বৃহস্পতিবার, ২২ জানুয়ারী, ২০১৫

আল্লাহ মন্দ কাজ করতে পারেন ওহাবি রা বলে

ওহাবীদের আল্লাহ মানুষ যা করতে পারেন তাই করতে পারেন।
ওহাবী দেওবন্দী দের প্রখ্যাত আলেম মাহমুদুল হাসান গান্গুহী লিখেছেন ;-মন্দ কার্যাদি সম্পাদনে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সক্ষম (আল জাহ্দুল মুকিল  ) ১ খ  পৃষ্টা ৮৩

তো দেখে নিন ওহাবীদের খোদা মন্দ কাজ ও করতে পারেন  . যেমন আর ১০ জন মানুষ মন্দ কাজ করে যেমন মদ্য পান , গাজার কল্কিতে লম্বা টান , যেনা আর অপপহরণ, জুলুম আর নির্যাতন।
আমার মতে এদের খোদা ও আমাদের খোদা এক না যদিও নাম ও গুনে এক মনে  করা হয়।
আপনি নিজেই বলুন  খোদা ও কি মন্দ কাজ করতে পারেন ? আপনার খোদা কি এই সকল দোষ ও ত্রুটি থেকে মুক্ত নয় ? জবাব দিবেন আপনি। আমার কাজ আপনাদের কাছে প্রশ্ন রেখে উত্তর চাওয়া।



আবার এই মাহমুদুল হাসান গান্গুহী লিখেছেন ;- অন্যান্য মন্দ কার্যাদির মত মিথ্যা বলা ও সম্ভব বলে সত্য পন্থী এমাম গন গ্রহণ করেছেন ( আল জাহাদুল মুকিল ) ১ খ পৃষ্টা ৪৩/

আমি সকল দেওবন্দী দের কাছে জবাব দাবি করছি যদি কোন হালালের সন্তান থেকে থাকেন তো আমাকে প্রমান দেখান কোথায় আর কোন সেই সত্য পন্থী আলেম  এই মত গ্রহণ  করেছেন যে আল্লাহ মিথ্যা কথা ও মন্দ কাজ করতে পারেন তাদের নাম ও রেফারেন্স দিন।



এদের আলেম খলিল আহমাদ আম্ভাত্বি তার কিতাব (বারাহিনে কাতিয়া ) তে লিখেছেন যে ;- আল্লাহর পক্ষে মিথ্যা বলা সম্ভব এই মাসালা তো কেউ বের করেনি।  বরং এটা পূর্ববর্তী আলেমগণের বিরোধপূর্ণ মাসালা।  তা আল্লাহ তায়ালার পক্ষে থেকে শাস্তি ঘোষণার পর তা ক্ষমা করে দেওয়া জায়েজ কি না।  ( বারাহিনে কাতিয়া ) পৃষ্টা ২


এই খানে লক্ষ্য করুন মাহমুদুল হাসান  গান্গুহী লিখেছেন আল্লাহ তায়ালা মিথ্যা কথা বলতে পারেন ও সকল মন্দ কাজ করতে পারেন তা সত্য পন্থী আলেমগণ গ্রহণ করেছেন।

আর মাহমুদুল হাসান গান্গুহী এর এর আগের আলেম বরং সকল দেওবন্দ আলেমগণের মাথার তাজ খলিল আহমাদ আম্ভাত্ভি লিখেছেন যে ইটা একটা বিরুদ্পুর্ন মাসালা।



তাই আজ থেকে জেনে রাখুন দেওবন্দী ওহাবীদের আল্লাহ ও আমাদের আল্লাহ এক না   .

সোহেল রানা 

সোমবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০১৫

খোদা তায়ালা মিথ্যা বলতে পারেন । দেওবন্দি দের আকিদা

খোদা তায়ালা মিথ্যা বলতে পারেন । 

এটা আমার কথা না।  এটা হচ্ছে আমাদের দেশের তেতুল সফির পুর্বসুরী দের। 
যেমন ইসমাইল দেহলোভি (দেওবনদি ও আহলে হাদীস দের ইমাম)  লিখেছেন ;- সুতরাং আমরা মানি না যে আল্লাহ তায়ালা সত্তাগত ভাবে মিথ্যা বলতে অক্ষম। অন্যথায় ( যদি মেনে নেই মিথ্যা বলতে পারে না) একথা অনিবার্য হয়ে যাবে যে মানুষের ক্ষমতা মহান রবের ক্ষমতা থেকে ওনেক বেশি (রেসালায়ে এক রোযাহ) ফার্সী। পাকিস্তান মুলতান থেকে মুদ্রিত। পৃষটা ১। 

এই কথা টা একটু খেল দেখি। মিথ্যা বলা কি ক্ষমতাবান দের কাজ ? যে আল্লাহ যদি মিথ্যা না বলেন আর বানদা মিথ্যা বলে আল্লাহ কে পিছনে ফেলে যাবেন !
বান্দা এমন ওনেক কিছু করে থাকেন যা মহান আল্লাহ পাকের করা তার নিজের শান এর খেলাপ। যেমন আমরা বিয়ে করি মিলন করি বাচ্চা পয়দা করি। আল্লাহ পাক কি এসব করেন ? (নাউযুবিললাহ ) আপনার কথা মতে কি ওল্লাহ এই সকল ক্ষেত্র বান্দার পিছনে পড়ে গেলেন না ? 
এই জন্য বলি ওহাবি দের মাথায় গোবর আর চোখে দেখে ইংরেজ দের ডলার। 
জবাব দিবেন যদি কোন মাতের লাল থেকে থাকেন। 

ওহাবি দের ইমাম সানাউল্লাহ অনৃতসরী লিখেছেন ;- আল্লাহ তায়ালা মিথ্যা বলতে পারেন বলে বিশ্বাস করা  অবিকল ইমানই (আখবার এ আহলে হাদীস ) পৃষ্ঠা ২ , ২৭ আগষ্ট ১৯১৫

আল্লাহ মিথ্যা বলতে পারেন বলে বিশ্বাস করা যদি পুর্নাংগ ইমান হয় তা হলে তো বানদা দের মিথ্যা বলার কারনে তারা জন্নাত পাবে। কারন আল্লাহ ও মিথ্যা বলেন (নাউযুবিললাহ ) তো আমরা মিথ্যা বললে সাজা পাব কেন ? এটা কি যুলম নয় বান্দার প্রতি ? তবে আপনাদের মতে আল্লাহ পাক ও যুলুম করেন।  পরে কোন দিন লিখব এই বিষয়। 


আর এক পন্ডিত লিখেছেন যে ;- আল্লাহ তায়ালা মিথ্যা বলতে পারেন বলে বিশ্বাস করা কুফর নয় (সাম এ তাওহিদ ) পৃশঠা ১ 
তোর আল্লাহ মিথ্যা বাদি।   তোর বিশ্বাস ঠিকই আছে তোর আল্লাহর বিষয়।  আমার মালিক এই সরল না পাক থেকে মুক্ত।  

দেওবন্দি দের ইমাম ও কুতুব রশিদ গাংগুহী লিখেছেন যে ;- ইমকান এ কাযেব (আল্লাহর পক্ষে মিথ্যা বলে সম্ভব) এ অর্থাৎ যে যা কিছুর আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন তার বিরুধিতা করতে পারেন। কিন্তু তিনি তা সেচছায় করবেন না । এ আকিদা আমার( ফাতওয়ায়ে এ রাশিদিয়া (১ খ পৃষ্টা ৫৫

আচ্ছা আল্লাহ আমাদের কি কি কি করার নির্দেষ দিয়েছেন ? নামায,রোযা,হজ্জ ,যাকাত,কালেমা, সদা সত্য বল।  আল্লাহ যা দেখে ক্রোধান্বিত হন তা না করা।  শিরক না করা। এমন ওনেক আছে।  

আচ্ছা আল্লাহ আমাদের কে যা কিছু করার নির্দেশ দিলেন আবার সেই সকল কিছুর বিরুধিতা করবে কেন ? 
এটা কি আল্লাহ পাক কে মিথ্যাবাদি ও ধোঁকাবাজ বলা হল না ? আবার বলেছেন যে তবে তিনি সেচছায় করবেন না।  আচ্ছা আল্লাহ কে মিথ্যা বলতে ও ধোকা দিতে বাধ্য করতে পারে এমন কে এমন কে আছে ? 
তার মানে হচ্ছে আল্লাহ কে একই সাথে , মিথ্যাবাদি ,ধোঁকাবাজ, ও আল্লাহ কে আল্লাহ বেতীত অন্য কেউ বাধ্য করতে ও পারে। 
আল্লাহ কে যে বাধ্য করবে নিশ্চিত সে আওলাক চেয়ে ক্ষমতাবান হবে।  আর এ ক্ষেত্রে কি গাংগুহির ইমান এখন ও আছে ? 

মোহাম্মদ ওবাইদুল হক।   জবাব দিবেন আমার কথা গুলোর যদি এক বাপের সন্তান হন। 

তবে কথা হচ্ছে আপনাদের মাঝে এক বাপের সন্তান খুব কম।  কারন উনচিললা দিতে গিয়ে তো বাড়ি খালি হয় আর থাক।  বললাম না।  

তাবলিগ আসলে পীর মুরীদির প্রচার করা

তাবলীগ এ যেতে বলে আমাকে আর বলে যে একবার তাবলিগে এসে এক চিল্লা দাও , এর পর দেখবে তাবলীগের নামে  কথা বলা বন্ধ হয়ে যাবে।  

আসলে যারা তাবলিগে যায় তারাই জানে না যে তাবলীগের মূল উদ্দেশ্য কি ছিল ? আর বর্তমানে তারা কত গোমরাহ হয়ে আছে।  

দেওবন্দী দের আজীম শায়খুল ইসলাম মাওলানা জাকারিয়া সাহেবের কিতাব (আকাবির কা সুলুক) কিতাব বাংলা অনুবাদ করেছেন ফকিহ উল উম্মত দারুল উলুম দেওবন্দ মুফতি মাহমুদ হাসান গান্গুহী এর খলিফা শায়খুল হাদিস হজরত মাওলানা মামুনুর রশিদ সাহেব।  


কি বলেছেন তিনি তা দেখুন :- 



মাওলানা যাকারিয়ার কিতাব (আকাবির কা সুলুক ও এহসান) কিতাবের ২০ নং পৃষ্টায় লিখেছেন যে ;- হজরত মাওলানা ইলিয়াছ (রহ) তাবলীগের নামে পীর মুরিদীর ও জিকির আজকার এর যে মেহনত চালু করেছেন এবং তা করতে সকল কে আদেশ করেছেন ও আমলি নমুনা পেশ করেছেন তাও জেনে এই বেপারে আমার মনস্থির হল যে ;- তাবলীগের নামে পীর মুরিদীর প্রচার করা। (আকাবির কা সুলুক ও এহসান কিতাবের ২০ নং পৃষ্টা)

কিন্তু অত্যান্ত অব্চচের বিষয় আজ যে ;- তাবলিগী রা কারো কাছেই মুরিদ হয় না , আর খালি উন্চিল্লা করে চিল্লার নাম।  

আমি অনুরস করব আপনারা ফিরে আসবেন আপনাদের আকবের দের আকিদায়।  


সোহেল রানা 


রবিবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০১৫

ইমাম আহমেদ রেজা

আশরাফ আলী থানভী বলে, “(ইমাম) আহমদ রেযা খানের প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে, যদিও তিনি আমাকে ‘কাফের’ বা অবিশ্বাসী বলেন; কেননা আমি ভালভাবে অবগত যে এর কারণ হলো মহানবী (দ:)-এর প্রতি তাঁর অগাধ ভালোবাসা ও ভক্তি-শ্রদ্ধা।” (সাপ্তাহিক চাতান, লাহোর, ২৩শে এপ্রিল ১৯৬২)

মওদূদী বলে, “মওলানা আহমদ রেযা খানের সুগভির পান্ডিত্য সম্পর্কে আমার শ্রদ্ধা রয়েছে। বস্তুতঃ ধর্মীয় দর্শনে তাঁর আছে গভীর জ্ঞান। তাঁকে বিদ্বান হিসেবে এমন কি সে সকল ব্যক্তিও স্বীকার করে, যারা অনেক বিতর্কিত বিষয়ে তাঁর সাথে একমত নয়।” (মাকালাতে এয়াওমে রেযা, ১-২ খন্ড, ৬০ পৃষ্ঠা)

ড: তাহিরুল কাদেরী বলেন, “ইসলাম ধর্মের প্রতি ইমাম সাহেবের নানাবিধ খেদমতের দিকে তাকানো এক সুখকর চমক। দৃশ্যতঃ তিনি একজন সংস্কারক (মোজাদ্দেদ), ব্যাখ্যাকারী (ভাষ্যকার), এবং এর পাশাপাশি উদ্ভাবক।

”ধর্মীয় বিশ্বাস ও মযহাবের দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁর কর্মের মূল্যায়ন করলে তাঁকে মনে হবে একজন উদ্ভাবক ও ব্যাখ্যাকারী (ভাষ্যকার)। ফেকাহ বা শরয়ী বিধি-বিধানের দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি একজন সৃজনশীল ফকীহ। সর্বোপরি, তরীকাপন্থী হিসেবে তিনি এক মহা-সংস্কারক।” (ড:তাহিরুল কাদেরী কৃত ‘হযরত মওলানা আহমদ রেযা খান বেরেলভী কা ইলমী নাযম’, লাহোর, ১৯৮৮, পৃষ্ঠা ১৫)

[ওপরের উদ্ধৃতিগুলো অধ্যাপক ড: মাসউদ আহমদ সাহেবের ‘ইমাম আহমদ রেযা’ শীর্ষক বই থেকে নেয়া হয়েছে, যার স্ক্যানকৃত কপি এর সাথে সংযুক্ত।]
SEP 30, 2013 · 5 PHOTOS · PUBLICPublic

ইসলামের এক শত্রুর প্রতি জবাব (পর্ব ৭১)

ইসলামের এক শত্রুর প্রতি জবাব (পর্ব ৭১)

[Bengali translation of Allama Husayn Hilmi Isik’s online book “Answer to an Enemy of Islam” - part 71; translator: Kazi Saifuddin Hossain]
মূল: আল্লামা হুসাইন হিলমী ইশিক তুর্কী (রহ:)
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন

[লা-মযহাবী/’সালাফী’ অপযুক্তির খণ্ডন]

৪৫/ - সাহাবা-এ-কেরাম (রা:)-এর যুগ হতে ইসলামকে ভেতর থেকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে ধর্মের শত্রুরা আলেম-উলামার ছদ্মবেশে মুসলমানদেরকে ধোকা দিতে অপতৎপর হয়েছে। ধর্মীয় পদে অধিষ্ঠিত এ লোকদেরকে ‘যিনদিক’, ’ধর্ম সংস্কারক’ বা ‘বিজ্ঞানের গোঁড়ামিসম্পন্ন ব্যক্তি’ বলা হয়। এরা প্রতি শতাব্দীতেই অজ্ঞ-মূর্খদেরকে ধোকা দিয়ে ইসলামের পথ থেকে বিচ্যুত করেছে; তবে তারা খোদ ইসলাম ধর্মের কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। কেননা, প্রতি শতাব্দীতেই অসংখ্য ফেকাহবিদ আলেম ও তাসাউফের মহান শায়খবৃন্দ তাঁদের প্রভাষণ (ওয়ায-নসীহত) ও লেখনী দ্বারা মুসলমানদেরকে এই ধোকাবাজির ফাঁদে পা দেয়া থেকে সতর্ক করেছেন। কিন্তু এখন ইসলামের প্রকৃত আলেম-উলামা (বোযর্গমণ্ডলী)-এর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে, আর দ্বীনের শত্রুরাও সুযোগ পেয়ে গিয়েছে। ধর্মীয় পদধারীর ছদ্মবেশে তারা বর্তমানে ইসলাম ধর্মকে পুরোদমে আক্রমণ করছে। এই অন্তর্ঘাতী শত্রুদেরকে চিনতে হলে ইসলামের একজন প্রকৃত আলেম কেমন হবেন, তা মুসলমানদের জানা প্রয়োজন। হযরত মা’সূম আল-ফারূকী আস্ সেরহিন্দী (রহ:) হক্কানী আলেমবৃন্দের পরিচয় দিতে গিয়ে লেখেন:

”তোমরা ইসলাম অমান্যকারী বা কোনো গোমরাহ-পথভ্রষ্ট লোকের সাথে বন্ধুত্ব করবে না! ধর্মীয় পদে সমাসীন বেদআতী লোকদের এড়িয়ে চলো! হযরত এয়াহইয়া ইবনে ম’য়ায আর-রাযী (কুদ্দেসা সিররূহ) বলেন, ‘তিন ধরনের লোককে এড়িয়ে চলবে। তাদের থেকে দূরে সরে থাকবে।’ এই তিন শ্রেণী হলো প্রথমতঃ গাফেল (আল্লাহকে ভুলে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত) ও ধর্মীয় পদে আসীন পথভ্রষ্ট লোক; দ্বিতীয়তঃ ধনী ব্যক্তিদের দয়া-দাক্ষিণ্য প্রত্যাশী চাটুকার ক্কারী (কুরআন তেলাওয়াতকারী); এবং তৃতীয়তঃ ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ তাসাউফের ভণ্ড তাপস। ধর্মীয় খেতাবধারী কোনো লোক যদি রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর সুন্নাহ না মানে এবং ইসলামকে আঁকড়ে না ধরে, তাহলে তাকে এড়িয়ে চলার পাশাপাশি তার বইপত্র না কেনা বা না পড়াও আমাদের জন্যে অবশ্য কর্তব্য হবে। সে যেখানে অবস্থান করে, সেখান থেকেও আমাদের দূরে সরে থাকা উচিত। তার সামান্যতম কৃতিত্ব স্বীকার করলেও তোমাদের ঈমান নষ্ট হতে পারে। কেননা, সে ইসলামের কোনো কর্তত্বসম্পন্ন ব্যক্তি নয়, বরং ইসলামের অন্তর্ঘাতী শত্রু। সে তোমাদের ঈমান-আকীদাকে কলুষিত করবে। শয়তানের চেয়েও সে বেশি ক্ষতিকর। তার কথাবার্তা মিষ্ট ও প্রভাবময় মনে হতে পারে, কিন্তু তাও তোমাদের উচিত হবে তার থেকে এমনভাবে দূরে সরে যাওয়া যেমনটি হিংস্র জন্তু-জানোয়ার থেকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্যে করা হয়। মহান আলেম-এ-হক্কানী শায়খ জুনায়দ আল-বাগদাদী (রহ:) বলেন, ‘অনন্ত নেয়ামতের দিকে কাউকে শুধু একটিমাত্র পথই নিয়ে যেতে পারে, আর তা হলো রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর পদাংক অনুসরণ’; ‘আহলে সুন্নাতের উলামাবৃন্দ কর্তৃক লিখিত তাফসীরগ্রন্থ পড়ে না কিংবা হাদীস শরীফে প্রদর্শিত পথে চলে না এমন ধর্মীয় পদে অধিষ্ঠিত কোনো লোককে তোমরা অনুসরণ করবে না। কেননা, একজন ইসলামী আলেম অবশ্যঅবশ্য কুরআন-সুন্নাহ নির্দেশিত পথে অটল থাকবেন’; ‘সালাফ আস্ সালেহীন ছিলেন সঠিক পথের পথিক। তাঁরা ছিলেন প্রকৃত বান্দা। আল্লাহতা’লার ভালোবাসা ও রেযামন্দি (সন্তুষ্টি) তাঁরাই অর্জন করেন। তাঁদের পথটি-ই ছিল কুরআন ও সুন্নাহ-প্রদর্শিত পথ। এই সত্য, সঠিক পথকে তাঁরা শক্তভাবে আঁকড়ে ধরেছিলেন।’ [নোট: এখানে বোঝা যায় যে সাহাবায়ে কেরাম (রা:), তাবেঈন ও তাবে তাবেঈনের সমন্বয়ে প্রথম ইসলামী দুই শতকের মুসলমান যাঁদেরকে সালাফ আস্ সালেহীন বলা হয়, তাঁদের পথই ছিল মহানবী (দ:)-এর পথ। চার মযহাবের ইমামমণ্ডলীও এই শ্রেণীভুক্ত ছিলেন। অতএব, চার মযহাবের ফেকাহ’র বইপত্রে যে পথের দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে, তা-ই হলো রাসূলে খোদা (দ:)-এর আলোকোজ্জ্বল পথ। এ কারণে চার মযহাবের উলামাবৃন্দ সর্বসম্মতভাবে বলেন যে চার মযহাবের ফেকাহ’র বইপত্র থেকে বিচ্যুত লোকেরা প্রকৃতপক্ষে রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর পথ থেকেই বিচ্যুত। উলামাদের এই এজমা’ (ঐকমত্য) স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে ‘দোররুল মোখতার’ গ্রন্থের ‘যাবায়ীহ’ অধ্যায়ের ওপর ইমাম তাহতাবী রচিত শরাহ’তে।]

”তাসাউফের মহান মাশায়েখ ও ফেকাহ’র উলেমাবৃন্দ সালাফ আস্ সালেহীনের পথকে অনুসরণ করেন। তাঁরা ইসলামকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরেন। ফলে রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর সুযোগ্য উত্তরাধিকারী হবার মহাসম্মান তাঁরা লাভ করেন। তাঁদের কথাবার্তা, কর্ম ও নৈতিকতায় তাঁরা ইসলাম থেকে এক চুল পরিমাণও সরেননি।

(চলবে)

ওলি দের কারামত

অলিদের কারামতি 
কারামত কি? 
কারামত হল, অসাধারণ কোনো ঘটনা যা আল্লাহ্ তাঁর নেক বান্দাগণের মাধ্যমে তাদের জীবিতাবস্থায় অথবা তাদের মৃতু্র পর তাদের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য ঘটিয়ে থাকেন, এর মাধ্যমে তিনি তাঁর বান্দাকে কোনো অনিষ্টতা থেকে হেফাযত করেন, অথবা তাঁর বান্দার কোনো কল্যাণ সাধন করেন, অথবা তিনি এর মাধ্যমে হকের সাহায্য করে থাকেন। (সৌদী আরবের ফতোয়া বোর্ডের লাজনা দায়েমার ফাতওয়া ১/৩৮৮)
কারামতের সংজ্ঞায় সুলাইমান বিন আবদুল্লাহ্ বলেন, কারামত এমন একটি বিষয় যা আল্লাহ্ তাঁর মুমিন এবং মুত্তাকী বান্দার মাধ্যমে প্রকাশ করেন, হয় তার দো‘আর কারণে অথবা তার কোনো সৎ আমলের কারণে, আর এতে অলীর কোনো হাত বা শক্তি নেই। (তাইসিরুল আযীযিল হামীদ, ৪১৩)।
অলীগণের মাধ্যমে কারামত সংঘটিত হতে পারে তার দলীলঃ
নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদেরকে রক্ষা করেন তাদের দুশমন থেকে, তিনি কোনো বিশ্বাসঘাতক, অকৃতজ্ঞকে পছন্দ করেন না। (সূরা হাজ্ব-৩৮)
অলী কে?
যে আল্লাহর প্রিয় বিষয়সমূহ পালনের মাধ্যমে তাঁর আনুগত্য করে এবং তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তাঁর নৈকট্য লাভ করতে চেষ্টা করে। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, হাদীস কুদসী আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন, 

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদিস। তিনি বলেন: রাসূল (সাঃ) বলেছেন: "আল্লাহ তাআলা বলেন- যে ব্যক্তি আমার কোন ওলির সাথে শত্রুতা পোষণ করে আমি তার বিরুদ্ধে লড়াই ঘোষণা করি। আমার বান্দার প্রতি যা ফরয করেছি তা দ্বারাই সে আমার অধিক নৈকট্য লাভ করে। আমার বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমেও আমার নৈকট্য হাছিল করতে থাকে। অবশেষ আমি তাকে ভালবেসে ফেলি। যখন আমি তাকে ভালবাসি তখন আমি তার কর্ণ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শুনে। আমি তার চক্ষু হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে। আমি তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমি তার পা হয়ে যাই, যে পা দিয়ে সে চলাফেরা করে। সে আমার কাছে কিছু প্রার্থনা করে, আমি তাকে তা দেই। সে যদি আমার নিকট আশ্রয় চায়, তাহলে আমি তাকে আশ্রয় দেই। [সহীহ বুখারী, হাদিস নং- ৬৫০২]

কারামত কেন সংঘটিত হয়?
কারামত সংঘটিত হওয়ার মাঝে অনেক কল্যাণ এবং হিকমত রয়েছে তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, 
ক) আল্লাহর অসীম ক্ষমতা এবং তাঁর ইচ্ছা বাস্তবায়নের বহিঃপ্রকাশ এবং তিনি যা চান তা করতে পারেন, এমনিভাবে আমরা সচরাচর আল্লাহর দেওয়া বিষয়সমূহের যা কিছু দেখছি তার বাহিরেও আরো অনেক কিছু আছে যার কিছু বহিঃপ্রকাশ এই কারামাত, যে বিষয়ে মানুষ অবগত নয়।
খ) কোনো বান্দার মাধ্যমে কারামত সংঘটিত হওয়া তা তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ যা তাকে আল্লাহ্ পৃথিবীতে দিয়ে দিলেন। এ সুসংবাদ তাকে আল্লাহর প্রিয় বান্দা বলে প্রমাণ করে এবং তার সুভ পরিণতির পূর্বাভাস।
গ) যার মাধ্যমে তা সংঘটিত হয় সে নবীর সঠিক অনুসারী বলে প্রমাণিত।
ইতোপূর্বে সংঘটিত কিছু কারামতঃ 
আল কোরআনের আলোকে-
আল্লাহর অলীদের হাতে আলৌকিক কর্মকাণ্ড ঘটতে পারে এবং আল্লাহর ইচ্ছায় অতি প্রাকৃতি কিছু তাদের মাধ্যমে হতে । কারণ পবিত্র কুরআন এ অলীদের কারামতের বিবরণ পাওয়া যায়। পবিত্র কুরআনে অনেক কারামতের বিবরণ পাওয়া যায়। যেমন স্বামী ব্যতীত মরিয়ম (আঃ)এর গর্ভে ঈসা (আঃ)এর জন্ম গ্রহণ এবং অলৌকিকভাবে আল্লাহর পক্ষ হতে রিযিক প্রাপ্ত হওয়া, সূরা কাহাফে বর্ণিত গুহাবাসীর কারামত, যুল-কারনাইনের ঘটনা, মুসা (আঃ)এর সাথে খিযির (আঃ)এর ঘটনা ইত্যাদি।
১, হযরত মরিয়ম আঃ নবী ছিলেন না। কিন্তু কারামত স্বরূপ আল্লাহ তাআলা তাকে অমৌসুমি ফল দান করেছিলেন। কুরআনে এসেছে
فَتَقَبَّلَهَا رَبُّهَا بِقَبُولٍ حَسَنٍ وَأَنبَتَهَا نَبَاتًا حَسَنًا وَكَفَّلَهَا زَكَرِيَّا ۖ كُلَّمَا دَخَلَ عَلَيْهَا زَكَرِيَّا الْمِحْرَابَ وَجَدَ عِندَهَا رِزْقًا ۖ قَالَ يَا مَرْيَمُ أَنَّىٰ لَكِ هَٰذَا ۖ قَالَتْ هُوَ مِنْ عِندِ اللَّهِ ۖ إِنَّ اللَّهَ يَرْزُقُ مَن يَشَاءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ [٣:٣٧]
অতঃপর তাঁর পালনকর্তা তাঁকে উত্তম ভাবে গ্রহণ করে নিলেন এবং তাঁকে প্রবৃদ্ধি দান করলেন-অত্যন্ত সুন্দর প্রবৃদ্ধি। আর তাঁকে যাকারিয়ার তত্ত্বাবধানে সমর্পন করলেন। যখনই যাকারিয়া মেহরাবের মধ্যে তার কছে আসতেন তখনই কিছু খাবার দেখতে পেতেন। জিজ্ঞেস করতেন “মারইয়াম! কোথা থেকে এসব তোমার কাছে এলো?” তিনি বলতেন, “এসব আল্লাহর নিকট থেকে আসে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বেহিসাব রিযিক দান করেন।” {সূরা আলে ইমরান-৩৭}
ইবনে কাসীর উপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, এ আয়াতে অলীদের কারামত সাব্যস্তের বিবরণ আছে। হাদীস শরীফে এর অনেক উদাহরণ রয়েছে। (ইবনে কাসীর, খ১, পৃ২৭৯)
২, তেমনি ভাবে পবিত্র কুরআনে সোলাইমান (আ.) এর সাথীর কিছু কারামতের কথাও রয়েছে। তার কারামত সম্পর্কে আল্লাহ তালা বলেন : এমনিভাবে সুলাইমান আঃ এর জমানায় মুহুর্তের মাঝে ইয়ামান থেকে আসিফ বিন বারখিয়া নামক ব্যক্তির রানী বিলকিসের সিংহাসন নিয়ে আসাও বুজুর্গদের কারামত সত্য হবার প্রমাণ। কারণ আসিফ বিন বারখিয়া কোন নবী ছিল না।
قَالَ الَّذِي عِندَهُ عِلْمٌ مِّنَ الْكِتَابِ أَنَا آتِيكَ بِهِ قَبْلَ أَن يَرْتَدَّ إِلَيْكَ طَرْفُكَ ۚ فَلَمَّا رَآهُ مُسْتَقِرًّا عِندَهُ قَالَ هَٰذَا مِن فَضْلِ رَبِّي لِيَبْلُوَنِي أَأَشْكُرُ أَمْ أَكْفُرُ ۖ وَمَن شَكَرَ فَإِنَّمَا يَشْكُرُ لِنَفْسِهِ ۖ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ رَبِّي غَنِيٌّ كَرِيمٌ [٢٧:٤٠]
কিতাবের জ্ঞান যার ছিল, সে বলল, আপনার দিকে আপনার চোখের পলক ফেলার পূর্বেই আমি তা আপনাকে এনে দেব। অতঃপর সুলায়মান যখন তা সামনে রক্ষিত দেখলেন, তখন বললেন এটা আমার পালনকর্তার অনুগ্রহ, যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করেন যে, আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, না অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে নিজের উপকারের জন্যেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং যে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে জানুক যে, আমার পালনকর্তা অভাবমুক্ত কৃপাশীল। {সুরা নামল-৩৭}
৩, কোরআনে অলিদের কারামত নিয়ে একটি সুরা নাজিল হয়েছে< সুরা কাহাফ
সূরা কাহাফের ২৫ ও ২৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
وَلَبِثُوا فِي كَهْفِهِمْ ثَلَاثَ مِئَةٍ سِنِينَ وَازْدَادُوا تِسْعًا (25) قُلِ اللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا لَبِثُوا لَهُ غَيْبُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ أَبْصِرْ بِهِ وَأَسْمِعْ مَا لَهُمْ مِنْ دُونِهِ مِنْ وَلِيٍّ وَلَا يُشْرِكُ فِي حُكْمِهِ أَحَدًا (26)
“সুতরাং তারা গুহাতে অবস্থান করেছিল তিনশ’ বছর এবং আরো নয় বছর।” (১৮:২৫)
“তুমি বল- তারা কতকাল ছিল তা আল্লাহই ভলো জানেন, আসমান ও জমিনের অজ্ঞাত বিষয়ের জ্ঞান তাঁরই। কত (সুন্দর) তাঁর দর্শন ও শ্রবণ শক্তি। তিনি ছাড়া মানুষের অন্য কোনো অভিভাবক নেই। তিনি কাউকেই নিজ কর্তৃত্বের শরীক করেন না।” (১৮:২৬)
সহীহ হাদীসে অলীদের কারামতের বিবরণ পাওয়া যায়।
-----------------------------------------------------------
১, “একবার জমার সময় ওমর খোতবা দিতে গিয়ে হঠাৎ বললেন হেছারিয়া পাহাড়ের দিকে থাকাও। এ কথাটি তিনি তিনবার বললেন, অতপর সেনাবলের এক প্রতিনিধি মদীনায় আসলে তখন ওমর (রা.) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন লোকটি বলল আমরা পরাজিত হয়েছিলাম, এমতাবস্থায় তখন আমরা শুনতে পেলাম হে ছারিয়া পাহাড়ের দিকে থাকাও কথাটি তিনবার। তখন আমরা পাহাড়ের দিকে পিট দিয়ে যুদ্ধ করতে থাকলাম তখন আল্লাহ তাদেরকেই পরাজিত করলেন। রাবী বলেন, ওমর (রা.) কে এ ব্যপারে জিজ্ঞাসা করা হলো আপরিনই কি চিৎকার দিয়ে একথা বলছিলেন ? হারমালা ইবনে ওয়অহাবের হাদীস বর্ণনা করতে ঘটনাটি এভাবেই বলেছেন, এ হাদীসের সনদ হাসান পর্যায়ের। (ইউসুফ কাল্পলকী, হায়াতুস সাহাবা, খ: ৩ পৃ- ৬৪১)
২, ইমাম আহমদ আবু হোরাইরা থেকে বর্ণনা করে যে, তিনি বলেন, এক লোক নিজের পরিবারের লোকদের কাছে গেলেন। এ অবস্থা দেখে তাদের ক্ষুধা ও দুর্দশা তখন উপাত্তকার দিকে বেরিয়ে পড়লেন। এ অবস্থা দেখে তার স্ত্রী যথা তৈরী করে রাখলেন আর চুলাটি তৈরী জ্বালিয়ে রাখলাম। তারপর বললেন, হে আল্লাহ আমাদের রিযিকের ব্যবস্থা করে দাও। তখন তিনি দেখলেন পাত্র খাবারে ভরে গেছে। রাযী বলেন তার চুলার দিকে গেলে দেখে তাও খাবারে ভর্তি। রাবী বলেন অতপর স্বামী বাড়ী ফিরে আসলেন, এসেই বললেন তোমরা কি আমার চলে যাবার পর কিছু পেয়েছ ? তখন স্ত্রী বললেন হা আমার প্রভুর কাছ থেকে, তখন লোকটি যাবার কাছে গিয়ে তা তোললেন। অতপর ঘটনাটি রাসূল (সা.) কে বললেন, তখন মহানবী (সা.) বললেন, যদি সে কথার চাকনা না তোলা হত তহলে কিয়ামত দিবস পর্যন্ত তা ঘুরতে থাকত।” (প্রাগুক্ত, খ: ৩, পৃ- ৬৪১)
৩, বানী ইসরাঈলের মধ্যে জুরাইয নামের একজন পরহেজগার লোক ছিল। সে ইবাদতের জন্য একটি গীর্জা তৈরী করে তথায় সর্বদা ইবাদতে লিপ্ত ছিল। সে এক দিন নামাযরত অবস্থায় ছিল। এমন সময় তার মা এসে ডাক দিল। জুরাইজ বললঃ হে আমার প্রতিপালক! আমার মা এবং আমার নামায। অর্থাৎ আমি এখন কি করব? আমার মায়ের ডাকে সাড়া দিব? না নামাযে লিপ্ত থাকব? এই বলে সে নামাযের মধ্যে রয়ে গেল। মায়ের ডাকে সাড়া দিলনা। মা ব্যর্থ হয়ে চলে গেল। পরের দিন তার মা আবার আগমণ করল। সেদিনও জুরাইয নামাযে ছিল। তার মায়ের কন্ঠ শুনে সে বললঃ হে আমার প্রতিপালক! আমার মা এবং আমার নামায। অর্থাৎ আমি এখন কি করব? আমার মায়ের ডাকে সাড়া দিব? না নামাযে লিপ্ত থাকব? এই বলে সে নামাযের মধ্যে রয়ে গেল। মায়ের ডাকে সাড়া দিলনা। মা ব্যর্থ হয়ে আজও চলে গেল। তৃতীয় দিনেও তার মা এসে তাকে নামায রত পেল। জুরাইজ তার মার ডাকে সাড়া না দিয়েই নামাযেই রয়ে গেল। এবার তার মা রাগাম্বিত হয়ে জুরাইযের উপর এই বলে বদ্ দু’আ করল যে, হে আল্লাহ! জুরাইয যেন বেশ্যা মহিলার মুখ দেখার পূর্বে মৃত্যু বরণ না করে। বনী ইসরাঈলের মধ্যে জুরাইয এবং তার ইবাদতের সুনাম ছড়িয়ে পড়ল। তাদের মধ্যকার কিছু লোক তাকে পথভ্রষ্ঠ করার জন্য চক্রান- শুরু করল। একজন বেশ্যা মহিলা সেসময় সেজেগোজে ঘুরে বেড়াত। সে প্রস-াব করল যে, তোমরা যদি চাও আমি তাকে গোমরাহ করতে পারি। নবী (সাঃ) বলেন, অতঃপর সেই মহিলা জুরাইযের কাছে গিয়ে নিজেকে পেশ করল। কিন’ জুরাইয সে দিকে কোন ভ্রুক্ষেপই করলনা। জুরাইযের গীর্জায় একজন ছাগলের রাখাল আসা-যাওয়া করত। মহিলাটি জুরাইযের কাছে কোন সুযোগ না পেয়ে রাখালের কাছে গিয়ে তার সাথে খারাপ কাজে লিপ্ত হল। এতে সে গর্ভবতী হয়ে গেল। প্রসব করার পর সে বলল এটি জুরাইযের সন্তান। লোকেরা দলে দলে আগমণ করে জুরাইযকে গীর্জা থেকে টেনে বের করল এবং তার গীর্জাটিও ভেঙ্গে চুরমার করে দিল। লোকেরা মারতে শুরু করল। জুরাইয জিজ্ঞাসা করল, তোমাদের কি হল? আমাকে মারছ কেন? আমার ইবাদতখানাটিই বা কেন ভেঙ্গে ফেললে? লোকেরা বললঃ তুমি এই মহিলার সাথে ব্যভিচার করেছ। যার কারণে মহিলাটি সন্তান প্রসব করেছে। জুরাইয জিজ্ঞাসা করলঃ শিশুটি কোথায়? তারা শিশুটিকে নিয়ে অসল। জুরাইয বলল আমাকে নামায পড়ার জন্য একটু সময় দাও। তারা তাকে নামায পড়ার সুযোগ দিল। নামায শেষ করে শিশুটির কাছে গিয়ে তার পেটে খুচা দিয়ে বললঃ এই ছেলে? তোমার বাপ কে? ছেলেটি বলে দিল, ছাগলের রাখাল।
নবী (সাঃ) বলেন, একথা শুনে লোকেরা আসল তথ্য অনুধাবন করতে পেরে জুরাইযকে চুম্বন করতে শুরু করল এবং তাকে জড়িয়ে ধরল। তারা নিজেদের ভুলের কারণে জুরাইযের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করল এবং বলল আপনি অনুমতি দিলে আমরা আপনার গীর্জাটি স্বর্ণ দিয়ে তৈরী করে দিব। জুরাইয বললঃ স্বর্ণ দিয়ে তৈরী করার দরকার নেই; বরং যেমন ছিল তেমন করেই মাটি দিয়ে তৈরী করে দাও। তারা তাই করল। (মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুয্ যিক্র)
৪, ইবনে উমার (রাঃ) নবী (সাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, অতীত কালে তিনজন লোক পথ চলতেছিল। পথিমধ্যে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। নিরাপদ আশ্রয় হিসাবে তারা একটি পাহাড়ের গুহায় ঢুকে পড়ল। উপর থেকে বিশাল আকারের একটি পাথর গড়িয়ে এসে গুহার মুখ বন্ধ হয়ে গেল। তাদের জন্য বের হওয়ার কোন সুযোগ অবশিষ্ট রইলনা। তাদের একজন অপরজনকে বলতে লাগল, তোমরা প্রত্যেকেই আপন আপন সৎআমল আল্লাহর দরবারে তুলে ধরে তার উসীলা দিয়ে দু’আ কর। এতে হয়ত আল্লাহ আমাদের জন্য বের হওয়ার ব্যবস্থা করে দিবেন।
তাদের একজন বলল, হে আল্লাহ! আমার পিতা-মাতা অতি বৃদ্ধাবস্থায় উপনীত হয়েছিল, আমার কতিপয় শিশু সন্তানও ছিল। আমি ছিলাম তাদের জন্য একমাত্র উপার্জনকারী। আমি প্রতিদিন ছাগল চরানোর জন্য মাঠে চলে যেতাম। বিকালে ঘরে ফেরত এসে দুধ দহন করে আমি প্রথমে পিতা-মাতাকে পান করাতাম, পরে আমার শিশু সন্তানদেরকে পান করাতাম। এটি ছিল আমার প্রতিদিনের অভ্যাস। একদিন ঘাসের সন্ধানে আমি অনেক দূরে চলে গেলাম। এসে দেখি আমার পিতা-মাতা ঘুমিয়ে পড়েছে। আমার অভ্যাসমত আমি দুধ দহন করে দুধের পেয়ালা নিয়ে তাদের মাথার পাশে দাড়িয়ে রইলাম। আমি তাদেরকে ঘুম থেকে জাগ্রত করাকে অপছন্দ করলাম। যেমনভাবে অপছন্দ করলাম পিতা-মাতার পূর্বে সন্তানদেরকে দুধ পান করানোকে। শিশু সন্তানগুলো আমার পায়ের কাছে ক্ষুধার তাড়নায় চিৎকার করতেছিল। এভাবে সারা রাত কেটে গিয়ে ফজর উদীত হল। আমার পিতা-মাতা ঘুম থেকে জাগলেন। আমি তাদেরকে প্রথমে পান করালাম অতঃপর আমার ছেলে-মেয়েদেরকে পান করালাম।
হে আল্লাহ! আপনি অবশ্যই জানেন যে, আমি একাজটি একমাত্র আপনার সন’ষ্টি অর্জনের জন্য সম্পাদন করেছি। এই আমলটির উসীলায় আমাদের জন্য বের হওয়ার রাস্তা করে দিন। এভাবে দু’আ করার সাথে সাথে পাথরটি একটু সরে গেল, তারা আকাশ দেখতে পেল, কিন’ তখনও বের হওয়ার মত রাস্তা হয়নি। দ্বিতীয় ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ! আমার একজন চাচাতো বোন ছিল। সে ছিল আমার কাছে অত্যন্ত প্রিয় এবং একজন পুরুষ কোন মহিলার প্রতি যতদূর আসক্ত হতে পারে, আমি ছিলাম তার প্রতি ততটুকু আসক্ত। আমি তার কাছে আমার মনোবাসনা পেশ করলাম। সে একশত স্বর্ণমুদ্রা দেয়ার শর্তে তাতে সম্মত হল। আমি অনেক পরিশ্রম করে একশত স্বর্ণমুদ্রা সংগ্রহ করে তার কাছে গমণ করলাম। সে সম্মতি প্রকাশ করার পর আমি তার উভয় উরুর মধ্যে বসে পড়লাম। এমন সময় সে বলে উঠল, হে আল্লাহর বান্দা! আল্লাহকে ভয় কর, আমার স্বতীত্ব নষ্ট করোনা। একথা শুনে আমি তাকে ছেড়ে দিলাম।
হে আল্লাহ! আপনি যদি মনে করেন যে, আমি আপনার ভয়ে সেদিন পাপের কাজ থেকে বিরত হয়েছি, তাহলে আজ আমাদেরকে এখান থেকে বের হওয়ার ব্যবস’া করে দিন। সাথে সাথে পাথরটি আরো একটু সরে গেল কিন’ তখনও বের হওয়ার মত রাস্তা হয়নি।
তৃতীয়জন বললঃ হে আল্লাহ! নির্ধারিত বেতনের বিনিময়ে আমি একজন শ্রমিক নিয়োগ করলাম। কাজ শেষ করে সে আমার কাছে পারিশ্রমিক চাইলে আমি তা প্রদান করলাম, কিন’ সে উহা গ্রহণ না করেই চলে গেল। আমি তার প্রাপ্য টাকা বাড়াতে থাকলাম। একপর্যায়ে তা একপাল গরুতে পরিণত হল। আমি গরুগুলো মাঠে চরানোর জন্য একজন রাখালও নিয়োগ করলাম।
অনেক দিন পর সেই লোকটি আমার কাছে এসে তার মজুরী চাইল। আমি বললামঃ তুমি রাখালসহ উক্ত গরুর পালটি নিয়ে চলে যাও। সে বলল, হে আল্লাহর বান্দা! আমার প্রাপ্য দিয়ে দাও এবং আমার সাথে বিদ্রুপ করোনা। আমি বললাম, বিদ্রুপ করি নাই। বরং এগুলো তোমার। আমি তোমার এক দিনের মজুরী দিয়ে এগুলো করেছি। তাই তুমি রাখালসহ গরুর পালটি নিয়ে চল। অতঃপর সে গরুর পালটি নিয়ে চলে গেল। একটিও রেখে যায়নি।
হে আল্লাহ! আপনি যদি মনে করেন যে, আমি আপনার সন’ষ্টির জন্য একাজটি করেছি, তাহলে আজ আমাদেরকে এখান থেকে বের হওয়ার ব্যবস্থা করে দিন। সাথে সাথে পাথরটি সম্পূর্ণরূপে সরে গেল। তারা নিরাপদে সেখান থেকে বের হয়ে এল। (বুখারী, অধ্যায়ঃ আহাদীছুল আম্বীয়া)

বি দ্র: বাকী হাদিস কমেন্টস এ........

আহলে বায়ত (রা:) ও আসহাব (রা:)-এর প্রতি ভক্তিতে মুক্তি - (২৩)

আহলে বায়ত (রা:) ও আসহাব (রা:)-এর প্রতি ভক্তিতে মুক্তি - (২৩)

[Bengali translation of Allama Husayn Hilmi's book 'O my brother! If you wish to die in Iman, you must love the Ahl-i Bayt and the Ashaab' (compiled in the Online book 'Documents of the Right Word'); translator: Kazi Saifuddin Hossain; part 23]

মূল: আল্লামা হুসাইন হিলমী ইশিক (তুরস্ক)
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন

হযরত উসমান (রা:) ‘বায়তুল মাল হতে হযরত যায়দ বিন সাবেত (রা:)-কে এক হাজার দিরহাম দান করেন’ মর্মে অভিযোগটি হলো মন্দ দৃষ্টিকোণ থেকে সব বিষয়কে বিবেচনা করার আরেকটি বাজে নজির। প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে একদিন খলীফা দান পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের জন্যে বায়তুল মাল (রাষ্ট্রীয় কোষাগার) হতে সম্পদ বণ্টনের আদেশ দেন। তাঁর ফরমান যথারীতি বাস্তবায়ন করা হয়। অতঃপর যখন দেখা গেল যে এক সহস্র দিরহাম উদ্বৃত্ত আছে, তখন তিনি সেগুলোকে জনসেবায় ব্যয় করার জন্যে নির্দেশ দেন। হযরত যায়দ (রা:) ওই অর্থ মসজিদে নববীর মেরামত কাজে ব্যবহার করেন।

শাফেঈ আলেম হাফেয আহমদ বিন মোহাম্মদ আবূ তাহের সিলাফী যিনি ৫৭৬ খৃষ্টাব্দে ইন্তেকাল করেন, তাঁর রচিত ‘মাশিহাত’ গ্রন্থে বর্ণিত এবং এর পাশাপাশি ইবনে আসাকির কর্তৃক উদ্ধৃত একখানি হাদীস শরীফে মহানবী (দ:) ঘোষণা করেন, “আবূ বকরকে ভালোবাসা এবং তাঁকে শোকরিয়া জানানো আমার উম্মতের জন্যে ওয়াজিব।” ইমাম মানাবী (রহ:)-ও ইমাম দায়লামী (রহ:) হতে এই হাদীসটি উদ্ধৃত করেন। হাফেয উমর বিন মোহাম্মদ আরবিলী কৃত ‘ওয়াসীলা’ পুস্তকে লিপিবদ্ধ অপর একটি হাদীসে তিনি এরশাদ করেন, “আল্লাহতা’লা যেমন তোমাদের জন্যে নামায, রোযা ও যাকাত ফরয করেছেন, ঠিক তেমনি তিনি তোমাদের জন্যে আবূ বকর, উমর, উসমান ও আলীকে ভালোবাসা ফরয করেছেন।” আবদুল্লাহ ইবনে আদী বর্ণিত এবং আল-মানাবী কর্তৃক উদ্ধৃত আরেকটি হাদীসে বিবৃত হয়েছে, “আবূ বকর ও উমরের প্রতি মহব্বত রাখা ঈমান হতে নিঃসৃত। আর তাদের প্রতি শত্রুতা হলো মোনাফেকী।” ইমাম তিরমিযী (রহ:)-এর বর্ণনানুযায়ী একবার কোনো এক মৃত ব্যক্তির জানাযা পড়ার জন্যে মহানবী (দ:)-এর কাছে আনা হয়। তিনি তা পড়তে অস্বীকৃতি জানান এবং বলেন, “এই লোক উসমানের প্রতি বৈরী ভাবাপন্ন ছিল। অতএব, আল্লাহতা’লাও এর প্রতি বৈরী ভাব পোষণ করছেন।” সূরা তওবার ১০০ নং আয়াতে ঘোষিত হয়েছে, “এবং সবার মধ্যে অগ্রগামী প্রথম মুহাজির ও আনসার আর যারা সৎকর্মে তাদের অনুসারী হয়েছে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট; আর তাদের জন্যে (তিনি) প্রস্তুত রেখেছেন বাগানসমূহ (জান্নাত), যেগুলোর নিম্নদেশে নহরসমূহ প্রবাহমান।” প্রথম তিন খলীফা প্রাথমিক মো’মেন মুসলমানদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। আর সর্ব-হযরত আমীরে মোয়াবিয়া (রা:) ও আমর ইবনে আস্ (রা:) সে সকল মুসলমানের অন্তর্ভুক্ত যাঁরা তাঁদেরকে অনুসরণ করেছিলেন। ইসলামের ইতিহাসে নেতৃস্থানীয় এই পুণ্যাত্মাবৃন্দের কুৎসা রটনা যে সব লোক করছে, তারা বাস্তবে ওপরোক্ত আল-কুরআনের আয়াতে কারীমা ও হাদীস শরীফেরই বিরোধিতা করছে। আর যে ব্যক্তি কুরআনের আয়াত ও হাদীস শরীফের বিরোধিতা করে, সে এরই ফলশ্রুতিতে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে অবিশ্বাসীতে পরিণত হয়। তার মুসলমান হওয়ার দাবি এই বাস্তবতাকে অস্বীকার করতে পারবে না যে সে একজন মোনাফেক বা যিনদিক।

(চলবে)

আহলে বায়ত (রা:) ও আসহাব (রা:)-এর প্রতি ভক্তিতে মুক্তি - (২৪)

আহলে বায়ত (রা:) ও আসহাব (রা:)-এর প্রতি ভক্তিতে মুক্তি - (২৪)

[Bengali translation of Allama Husayn Hilmi's book 'O my brother! If you wish to die in Iman, you must love the Ahl-i Bayt and the Ashaab' (compiled in the Online book 'Documents of the Right Word'); translator: Kazi Saifuddin Hossain; part 24]

মূল: আল্লামা হুসাইন হিলমী ইশিক (তুরস্ক)
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন

৬/ - হুরুফী লেখক বলে, “আরেক বুড়ি একটি চুড়ি/বালা হারানোর মিথ্যে গল্প ফেঁদেছিল, যা ছিল সাফওয়ানের সাথে মরুভূমিতে ঘটে যাওয়া তার প্রেমের উপাখ্যান ঢাকবার একটি চেষ্টামাত্র। এটি করতে যেয়ে ওই বুড়ি হযরত আলী (ক:)-এর ওপর তালাকের কারণ চাপিয়ে দেয়। এরই ফলশ্রুতিতে জামাল তথা উটের যুদ্ধের সূত্রপাত হয়।”

ওপরের বক্তব্য দ্বারা ম্যাগাজিন পত্রিকাটি নির্লজ্জভাবে রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর স্ত্রী ও মো’মেন মুসলমানদের মাতা হযরত আয়েশা (রা:)-কে আক্রমণ করেছে। এ বিষয়ে হযরত আব্দুল হক্ক মোহাদ্দীসে দেহেলভী (রহ:) তাঁর প্রণীত ‘মাদারিজুন্ নুবুয়্যত’ গ্রন্থে কী বলেছেন তা দেখুন:

হযরত আয়েশা (রা:) ছিলেন অসংখ্য গুণে গুণান্বিতা। আসহাবে কেরাম (রা:)-বৃন্দের মধ্যে তিনি ছিলেন এক ফেকাহবিদ। তিনি স্পষ্টভাষী ও বাগ্মীও ছিলেন। সাহাবা-এ-কেরাম (রা:)-এর জন্যে তিনি ফতোওয়া দিতেন। অধিকাংশ উলামা-মণ্ডলীর মতে, ফেকাহ-বিদ্যার এক-চতুর্থাংশ জ্ঞানই হযরত আয়েশা (রা:) কর্তৃক বর্ণিত হয়। একটি হাদীস শরীফে হুযূর পূর নূর (দ:) এরশাদ ফরমান, “তোমাদের এক-তৃতীয়াংশ দ্বীনী জ্ঞান হুমায়রা হতে শিক্ষা করো!” তিনি হযরত আয়েশা (রা:)-কে অত্যন্ত ভালোবাসতেন বলে তাঁকে ‘হুমায়রা’ নামে ডাকতেন। আসহাব-এ-কেরাম (রা:) ও তাবেঈন (রহ:)-দের মধ্যে বেশির ভাগই তাঁর কাছ থেকে শ্রুত নানা হাদীস শরীফ বর্ণনা করেন। হযরত উরওয়াত ইবনে যুবায়র (রা:) ব্যক্ত করেন: কুরআনুল করীমের অর্থ (তাফসীর), হালাল-হারাম, আরবী পদ্য বা বংশ বৃত্তান্তবিষয়ক জ্ঞানে হযরত আয়েশা (রা:)-এর চেয়ে বেশি জ্ঞানী আর কাউকেই দেখি নি। মহানবী (দ:)-এর প্রশংসায় রচিত নিচের দু’টি পংক্তি তাঁরই:

মিসরীয় লোকেরা যদি তাঁর কপোলদ্বয়ের সৌন্দর্য সম্পর্কে শুনতে পেতো,
তাহলে তারা ইউসূফ (আ:)-কে কেনার জন্যে অর্থ ব্যয় না করতো, (মানে তারা তাঁর কপোলদ্বয় দেখার জন্যেই ওই অর্থকড়ি রাখতো)
জোলেখাকে দোষারোপকারিনী নারীরা যদি তাঁর আলোকোজ্জ্বল ললাট দেখতে পেতো,
তবে তারা তাদের হাতের বদলে নিজেদের হৃদয়গুলোই কাটতো। (আর এতে তারা কোনো ব্যথাই অনুভব করতো না)

হযরত আয়েশা (রা:)-এর আরেকটি মর্যাদাপূর্ণ শ্রেষ্ঠত্ব হলো তিনি রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর প্রেমময়ী স্ত্রী। মহানবী (দ:) তাঁকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। যখন হুযূর পাক (দ:)-কে জিজ্ঞেস করা হয় তিনি (স্ত্রীদের মাঝে) কাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন, তিনি উত্তরে বলেন, “আয়েশা।” আর যখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয় কোন্ ব্যক্তিকে তিনি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন, তিনি জবাবে বলেন, “আয়েশার পিতা।” অর্থাৎ, তিনি হযরত আবূ বকর (রা:)-কেই উদ্দেশ্য করেছিলেন। হযরত আয়েশা (রা:)-কে যখন জিজ্ঞেস করা হয় মহানবী (দ:) কাকে বেশি ভালোবাসতেন, তিনি উত্তর দেন হযরত ফাতেমা (রা:)-কে হুযূর পাক (দ:) বেশি ভালোবাসতেন। তাঁকে যখন আবার জিজ্ঞেস করা হয় কোন্ ব্যক্তিকে তিনি বেশি ভালোবাসতেন, তিনি জবাবে বলেন হযরত ফাতেমা (রা:)-এর স্বামীকে নবী করীম (দ:) বেশি ভালোবাসতেন। এর মানে দাঁড়ায় এই যে, মহানবী (দ:)-এর স্ত্রীদের মাঝে হযরত আয়েশা (রা:)-কে তিনি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন; তাঁর সন্তানদের মাঝে তিনি হযরত ফাতেমা (রা:)-কে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন; তাঁর আহলে বায়তের (পরিবারের) মধ্যে হযরত আলী (ক:)-কে তিনি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন; আর তাঁর সাহাবা-এ-কেরাম (রা:)-দের মধ্যে হযরত আবূ বকর (রা:)-কেই তিনি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন। হযরত আয়েশা (রা:) বর্ণনা করেন: “একদিন রাষুলুল্লাহ (দ:) তাঁর মোবারক চপ্পলের চামড়ানির্মিত ফিতা খুলছিলেন, আর আমি সুতো বুনছিলাম। তাঁর পবিত্র মুখমণ্ডলের দিকে নজর করতেই আমি দেখি, তাঁর উজ্জ্বল ললাট থেকে ঘাম বের হচ্ছিল; প্রতিটি বিন্দু ঘাম চারদিকে আলো ছড়াচ্ছিল। এগুলো আমার চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছিল। আমি হতভম্ব হয়ে যাই। তিনি আমার দিকে ফিরে তাকান এবং জিজ্ঞেস করেন, “তোমার কী হয়েছে? কেন তুমি এতো চিন্তামগ্ন?” আমি আরয করি, ‘এয়া রাসূলাল্লাহ (দ:)! আপনার পবিত্র মুখমণ্ডলের নূরানী আলোর তীব্রতা এবং আপনার পবিত্র ললাটে ঘামের বিচ্ছুরিত প্রভা দেখে আমি আত্মহারা।’ তিনি উঠে দাঁড়িয়ে আমার কাছে আসেন। আমার দু’চোখের মাঝখানে চুম্বন দিয়ে তিনি বলেন, “ওহে আয়েশা! আল্লাহ পাক তোমাকে ভালাই দিন! তুমি আমাকে যেভাবে সন্তুষ্ট করেছ সেভাবে আমি তোমাকে সন্তুষ্ট করতে পারিনি।” অর্থাৎ, তিনি বলতে চেয়েছেন, ‘আমাকে তোমার কৃত সন্তুষ্টি তোমাকে আমার কৃত সন্তুষ্টির চেয়েও বেশি।’ মহানবী (দ:)-এর প্রতি ভালোবাসা ও তাঁর সৌন্দর্য দেখে তা স্বীকার করার স্বীকৃতিস্বরূপ এবং সম্মানার্থে তিনি হযরত আয়েশা (রা:)-এর পবিত্র দু’নয়নের মাঝখানে চুম্বন করেন। একটি ছত্র ব্যক্ত করে:

আমি তব সৌন্দর্য দর্শনে আপন আঁখিকে অভিনন্দন জানাই!

দ্বিচরণে ব্যক্ত হয়:

সৌন্দর্য দর্শনে ওই দু’নয়ন কতোই না উত্তম
তাঁর ভালোবাসার দহনে পূর্ণ হৃদয় কতোই না সৌভাগ্যবান!

(চলবে)

ইসলামের এক শত্রুর প্রতি জবাব (পর্ব ৭২)

ইসলামের এক শত্রুর প্রতি জবাব (পর্ব ৭২)

[Bengali translation of Allama Husayn Hilmi Isik’s online book “Answer to an Enemy of Islam” - part 72; translator: Kazi Saifuddin Hossain]
মূল: আল্লামা হুসাইন হিলমী ইশিক তুর্কী (রহ:)
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন

[লা-মযহাবী/’সালাফী’ অপযুক্তির খণ্ডন]

”আমি বারংবার লেখেছি যে তোমরা এমন লোকদেরকে ধর্মীয় বিষয়ে কর্তৃত্বশীল মনে করবে না, যারা মহানবী (দ:)-কে মান্য করার বেলায় শিথিল কিংবা তাঁর আলোকোজ্জ্বল পথ হতে বিচ্যুত! তাদের মিথ্যে কথাবার্তায় বা লেখনীতে বিশ্বাস-ই করবে না! ইহুদী, খৃষ্টান এবং ভারতীয় বৌদ্ধ ও ব্রাক্ষণরাও নিজেদেরকে সঠিক পথের পথিক এবং মানুষকে মঙ্গল ও সুখ-শান্তির দিকে আহ্বানকারী হিসেবে প্রচার করার উদ্দেশ্যে মধুর ও উৎসাহদায়ক কথাবার্তা এবং কূটতর্ক করে থাকে। হযরত আবূ উমর ইবনে নাজিব বলেন, ‘যে জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও জীবনে অনুশীলিত হয় না, তা এর অধিকারীর জন্যে উপকারী হওয়ার চেয়ে অপকারী-ই হয় বেশি।’ সকল ধরনের সুখ-শান্তির একমাত্র পথ ইসলাম। নাজাত পেতে হলে রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর পদাংক অনুসরণ করতে হবে। ভ্রান্তি থেকে মুক্ত সঠিক পথের পার্থক্যকারী চিহ্ন হলো তাঁকে মান্য করা। তাঁর ধর্মের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ কোনো কথা, লেখা বা কর্মের কোনো মূল্যই নেই। ক্ষুধার্ত থাকা বা ধ্যান সাধনার মাধ্যমে খারিকা (অত্যাশ্চর্য ঘটনা) সংঘটিত হতে পারে; আর এটি মুসলমানদের জন্যে খাস্ তথা সুনির্দিষ্ট নয়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক (রহ:) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মোস্তাহাব পালনে শিথিল, সে সুন্নাহ পালনে অক্ষম। আর সুন্নাহ পালনে শৈথিল্য দ্বারা ফরয পালনও কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। সে যদি ফরয পালনে শিথিল হয়, তাহলে মা’রেফত তথা আল্লাহর রেযামন্দি অর্জনেও সে ব্যর্থ হবে।’ এ কারণে একটি হাদীস শরীফে হুযূর পূর নূর (দ:) এরশাদ ফরমান, ‘পাপাচারের ফলে কোনো ব্যক্তি অবিশ্বাসীতে পরিণত হয়।’ মহান আউলিয়াদের অন্যতম হযরত আবূ সাঈদ আবূল খায়র (বেসাল: ৪৪০হিজরী/১০৪৯ খৃষ্টাব্দ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘অমুক পানির ওপর হাঁটতে পারে; এ ব্যাপারে আপনি কী বলবেন?’ তিনি উত্তর দেন, ‘এটি অর্থহীন, কেননা একটি হাঁসও পানিতে ভাসতে পারে।’ আবার যখন তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, ‘তমুক আকাশে উড়তে পারে?’ তখন তিনি বলেন, ‘একটি মাছিও আকাশে উড়তে সক্ষম। ওই লোকের মূল্য মাছির মতোই।’ যখন তাঁকে পুনরায় জিজ্ঞেস করা হলো, ‘অমুক মুহূর্তে এক শহর থেকে আরেক শহরে গমন করতে সক্ষম’, তিনি তখন জবাব দেন, ‘শয়তানও চোখের পলকে পূর্বদিক থেকে পশ্চিমদিকে যেতে পারে। এ ধরনের জিনিস আমাদের ধর্মে অর্থহীন। একজন সিদ্ধপুরুষ মানুষের মাঝে বসবাস করেন, বাজারে যান এবং বিয়ে-শাদীও করেন, কিন্তু তিনি এক মুহূর্তের জন্যেও আল্লাহকে ভুলেন না।’ হযরত আবূ আলী রুদবারী (বেসাল: ৩২১ হিজরী/৯৩৩ খৃষ্টাব্দ, মিসর) যিনি মহান আউলিয়াবৃন্দের অন্যতম এবং হযরত জুনায়দ আল-বাগদাদী (রহ:)-এর মুরীদ, তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, ‘ধর্মীয় পদে অধিষ্ঠিত কোনো ব্যক্তি যদি (শরাবীদের) বাদ্যযন্ত্রের মজলিশে বসে এবং তা শোনে এবং না-মাহরাম মেয়ে ও নারীদের সাথে বন্ধুত্ব করে অথবা স্ত্রী-কন্যাকে অনৈসলামী পন্থায় বেপর্দা চলাফেরা করতে দেয়, আর যদি সে দাবি করে তার অন্তর নির্মল এবং অন্তরের বিষয়টি-ই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তাহলে তার সম্পর্কে কী বলবেন আপনি?’ তিনি জবাব দেন, ‘ওই লোকের গন্তব্য জাহান্নাম।’ আবূ সোলাইমান আদ্ দারানী যিনি দামেশকের অন্তর্গত দারিয়া গ্রামে বসতি স্থাপন করেন এবং সেখানেই ২০৫ হিজরী/৮২০ খৃষ্টাব্দ সালে বেসালপ্রাপ্ত হন, তিনি বলেন, ‘প্রথমে আমি কুরআন ও সুন্নাহ’র আলোকে আমার চিন্তাভাবনা ও নিয়্যতকে বিচার করি। অতঃপর এই দু’টি ইনসাফপূর্ণ মানদণ্ডের সাথে যেগুলো সামঞ্জস্য রাখে, সেগুলোই পালন করি।’ রাসূলুল্লাহ (দ:) একটি হাদীসে এরশাদ ফরমান, ‘বেদআতী লোকেরা জাহান্নামে যাবে’; ‘বেদআত প্রবর্তক ও পালনকারীকে শয়তান যথেষ্ট এবাদত-বন্দেগী করতে সহায়তা করে। এটি তাকে যথেষ্ট কাঁদায়ও।’ অন্যত্র এরশাদ ফরমান, ‘বেদআত সংঘটনকারী কোনো ব্যক্তির নামায, রোযা, হজ্জ্ব, উমরাহ, জ্বেহাদ এবং ফরয বা নফল এবাদত আল্লাহতা’লা কবুল করেন না। এ ধরনের লোকেরা সহজে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যায়।’ শায়খ ইবনে আবি বকর মোহাম্মদ ইবনে মোহাম্মদ আল-আন্দালুসী যিনি মিসরে বসবাস করেন এবং ৭৩৪ হিজরী/১৩৩৪ খষ্টাব্দ সালে বেসালপ্রাপ্ত হন, তাঁর মা’আরিজ আল-হেদায়া বইতে তিনি বলেন, ‘সঠিক পথকে জানো এবং তারপর সঠিক পথে থাকো! কোনো কামেল (পূর্ণতাপ্রাপ্ত) বোযর্গ ব্যক্তির প্রতিটি কাজ, চিন্তা, কথা ও আচরণ মহানবী (দ:)-এর সাথে মিলে যাবে। কেননা, তাঁকে অনুসরণ করেই সব ধরনের সুখ-শান্তি অর্জন করা যেতে পারে। হুযূর পূর নূর (দ:)-কে অনুসরণের মানে’ হলো ইসলামকে আঁকড়ে ধরা।’

(চলবে)

সোমবার, ৫ জানুয়ারী, ২০১৫

গায়েবের চুলছেরা বিশ্লেষন।

হাবু ডুবুর জবাব ;- 
নবী পাক না কি গায়েব জানেন না ! পোস্ট লম্বা হওয়ার আশংখা করে মুল কথিত গেলাম :- 

 لا يحيطون بشيء من علمه إلا بما شاء

তিনি তাদের অগ্র ও পশ্চাত সম্পর্কে অবগত।তার ইলমের কোন অংশ কেউ অবগত হতে পারে না তবে যাকে তিনি ইচ্ছা করেন অবগত করান।

[সূরা বাকারা, আয়াত নং ২৫৫]

ইমাম বাইহাকী রহ. এই আয়াতের তাফসীরে লিখেছেন,

ولا يحيطون بشيء من علمه إلا بما شاء أي لا يعلمون من علمه إلا ما شاء أن يعلمهم إياه بتعليمه

তার ইলমের কোন অংশ কেউ জানে না, তবে যাকে ইচ্ছা তিনি তা জানান অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা যাকে ইচ্ছা তাকে বিশেষ ইলম শিক্ষা দেন।

[আল-আসমা ওয়াস সিফাত, ইমাম বাইহাকী রহ. পৃ.১৪৩]

ইমাম ইবনে কাসীর রহ. এই আয়াতের তাফসীরে লিখেছেন,

وقوله : ( ولا يحيطون بشيء من علمه إلا بما شاء ) أي : لا يطلع أحد من علم الله على شيء إلا بما أعلمه الله عز وجل وأطلعه عليه

অর্থাৎ আল্লাহর ইলমের ব্যাপারে কেউ অবগত হতে পারে না, তবে আল্লাহ তায়ালা কাউকে যদি অবহিত করেন তাহলে সে অবগত হতে পারে।

৩. আল্লাহ তায়ালা সূরা কাহাফে হযরত খাজির আ. এর সম্পর্কে বলেছেন,

فَوَجَدَا عَبْدًا مِنْ عِبَادِنَا آتَيْنَاهُ رَحْمَةً مِنْ عِنْدِنَا وَعَلَّمْنَاهُ مِنْ لَدُنَّا عِلْمًا

অত:পর তারা উভয়ে আমার একজন নেককার বান্দার দেখা পেল, যাকে আমি আমার রহমত দান করেছি এবং আমার পক্ষ থেকে বিশেষ ইলম দান করেছি।[ সূরা কাহাফ, আয়াত নং ৬৫] 

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন,

عَالِمُ الْغَيْبِ فَلا يُظْهِرُ عَلَى غَيْبِهِ أَحَدًا إِلا مَنِ ارْتَضَى مِنْ رَسُولٍ فَإِنَّهُ يَسْلُكُ مِن بَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهِ رَصَدًا

অর্থাৎ তিনিই অদৃশ্য সম্পর্কে অবগত। অতএব তিনি তার গায়েবী বিষয় সম্পর্কে কাউকে অবহিত করেন না। তবে তার মনোনীত রাসূল ব্যতীত। সেক্ষেত্রে তিনি তার সামনে ও পেছনে প্রহরী নিয়োজিত করেন।

[সূরা জিন, আয়াত নং ২৬-২৭]

এ আয়াতের তাফসীরে ইবনে কাসীর রহ. বলেন,

وهكذا قال هاهنا: إنه يعلم الغيب والشهادة، وإنه لا يطلع أحد من خلقه على شيء من علمه إلا مما أطلعه تعالى عليه

এখানে তিনি বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা দৃশ্য-অদৃশ্য সব কিছু জানেন। কোন সৃষ্টি তার কোন ইলম সম্পর্কে জানতে পারে না তবে যাকে তিনি জানান, কেবল সেই জানতে পারে।

[তাফসীরে ইবনে কাসীর, খ.৬, পৃ.২৮৪]

ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন,
قال علماؤنا: أضاف سبحانه علم الغيب إلى نفسه في غيرما آية من كتابه إلا من أصطفى من عباده....فالله تعالى عنده علم الغيب وبيده الطرق الموصلة إليه لا يملكها إلا هو : فمن شاء إطلاعه عليها أطلعه , ومن شاء حجبه عنها حجبه

আমাদের আলেমগণ বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা কুরআনের অনেক আয়াতে গায়েব সম্পর্কিত জ্ঞানকে নিজের দিকে সম্পৃক্ত করেছেন, তবে তার নির্বাচিত বান্দাদেরকে কিছু গায়েবের সংবাদ দিয়ে থাকেন। সুতরাং একমাত্র আল্লাহর নিকটই গায়েবের ইলম রয়েছে। গায়েবের ইলম পর্যন্ত পৌছার রাস্তা সম্পর্কে তিনিই পরিজ্ঞাত। তবে তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে গায়েব সম্পর্কে অবহিত করেন, যাকে ইচ্ছা তার থেকে গোপন রাখেন। [তাফসীরে কুরতুবী খ.৭, পৃ.২]


ইবনে হাজার আসকালানী রহ. ফাতহুল বারীতে লিখেছেন,

وأما ما ثبت بنص القرآن أن عيسى عليه السلام قال أنه يخبرهم بما يأكلون وما يدخرون وأن يوسف قال إنه ينبئهم بتأويل الطعام قبل أن يأتي ذلك مما ظهر من المعجزات والكرامات : فكل ذلك يمكن أن يستفاد من الاستثناء في قوله تعالى ( إِلَّا مَنِ ارْتَضَى مِن رَّسُولٍ ) ,فإنه يقتضي إطلاع الرسول على بعض الغيب , والولي التابع للرسول عن الرسول يأخذ وبه يكرم , والفرق بينهما أن الرسول يطلع على ذلك بأنواع الوحي كلها , والولي لا يطلع على ذلك الا بمنام أو إلهام , والله اعلم

কুরআনের স্পষ্ট নস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে হযরত ইসা আ. তারা কী খায় ও সন্চয় করে সে সম্পর্কে বলেছেন এবং হযরত ইউসুফ আ. তাদের খাদ্যের ব্যাপারে ভবিষ্যৎবাণী করেছেন, গায়েব সংক্রান্ত এ বিষয়গুলো অবহিত হওয়ার বিষয়টি পবিত্র কুরআনের এই আয়াত দ্বারা বোঝা যায়, “ তিনিই গায়েব সম্পর্কে পরিজ্ঞাত। তিনি কারও সম্মুখে গায়েব প্রকাশ করেন না, তবে তার নির্বাচিত রাসূল ব্যতীত।” কেননা, এই আয়াত দ্বারা বোঝা যায়, রাসূলগণ কিছু গায়েব সম্পর্কে অবহিত। আর রাসূলের অনুসারী ওলীগণ তাদের কারণেই কিছু গায়েব সম্পর্কে অবহিত হন এবং তাদের মাধ্যমেই সম্মানিত হন। রাসূল ও ওলীর কিছু গায়েব সম্পর্কে অবহিত হওয়ার ক্ষেত্রে পার্থক্য হলো, রাসূল ওহী পাঠানোর সবগুলো পদ্ধতির মাধ্যমে গায়েব সম্পর্কে অবহিত হন, আর ওলী শুধু স্বপ্ন বা ইলহামের মাধ্যমে গায়েব সম্পর্কে অবহিত হন।” [ফাতহুল বারী, খ.৮, পৃ.৫১৪]

কাযী শাওকানী তাফসীরে ফাতহুল কাদীরে লিখেছেন,

إن الله سبحانه قد يطلع بعض عبيده على بعض غيبه

আল্লাহ তায়ালা কোন কোন বান্দাকে কিছু কিছু গায়েব সম্পর্কে অবহিত করে থাকেন।[ফাতহুল কাদীর, কাযী শাওকানী, খ.৩, পৃ.২০, শামেলা]

يخصص الرسول بالملك في اطلاعه على الغيب، والأولياء يقع لهم ذلك بالإلهام

ফেরেশতাদের মাধ্যমে গায়েব অবহিত হওয়ার বিষয়টি রাসুলগণের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। ওলীগণ কিছু কিছু গায়েব সম্পর্কে অবহিত হয়ে থাকেন ইলহামের মাধ্যমে।

[তাফসীরে বায়যাবী, খ.১৩, পৃ.৩৬৪]

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন ‘ আল্লামাকা মা লাম তাকুন তা’লাম ” আর্থাৎ, তিনি আপনাকে এমন জিনিস শিক্ষা দিয়েছেন যা আপনি জানতেন না “
( সুরা নিসা আয়াত ১১৩)

এ আয়াতে ব্যাখা করতে গিয়ে প্রসিদ্ধ তাফসীর গ্রন্থ “জালালাইন শরীফে” বলা হয়েছে ” আউযয়ু মিনাল আহকামে ওয়াল গাইব ” অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) কে শরীয়তের যাবতীয় হূকুম ও গায়েব সম্পর্কে শিক্ষা দিয়েছেন।

তাফসীরে সাভার ৪র্থ খন্ডে ২৭৫ পৃষ্টা রয়েছে,
“ইনণাহু(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) লাম ইয়াখ রুজু মিনাদ দুনিয়া হাত্বা আ’লামাহু ল্লাহু বি জামইহি মুগি বাতিদ দুনিয়া ওয়াল আখেরাহ “
অর্থাৎ, আল্লাহর দুনিয়া এবং আখেরাতের সমস্ত গায়েব না জানানো পর্যন্ত রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) দুনিয়া থেকে ইন্তেকাল করেন নি ।


তাফসিরে খায়েন ৪র্থ পারায় রয়েছে ;
” মা কানাল্লাহু লি ইয়াজ রাল মু’মিনিনা আলা মা ানতুম আলাইকুম “
উক্ত আয়াতের ব্যখ্যাু উল্লেখ করা হয়েছে – রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) এরশাদ করেন , আমার কাছে আমর উম্মতকে তাদের নিজ নিজ মাটির আকৃতিতে পেশ করা হয়েছে যেমন ভাবে আদম (আলাহিস সালাম) এর কাছে পেশ করা হয়েছিল । আমাকে জানানো হয়েছে , কে আমার উপর ঈমান আনবে ? কে আমাকে অস্বিকার করবে ? যখন এ খবর মুনাফিকদের কাছে পোছলো তখন তারা ঠাট্টা করে বললো -কে তাঁর উপর ঈমান আনবে আর কে তাকে অস্বিকার করবে তাদের কে তাদের জন্মের পুর্বেই মুহাম্মদ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) জানতেন বলে বলেন । অথচ আমরা তাঁর সাথেই আছি – কিন্তু আমাদেরকে চিন্তে পারেন নি । এ খবর যখন রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) এর নিকট পৌছলো । তখন তিনি মিম্বরের উপরে দাড়ালেন এবং আল্লাহর প্রশংসা করে ইরশাদ করলেন,

“( কালা মা বালআকওয়ামে তায়ানু ফি ইলমি লা তাসআলু নি আন শাঈন ফিমা বাইনাকুম ওয়া বাইনাস সাআতি ইল্লা আনবাইতুকুম বিহ্)
অর্থাৎ, এসব লোকেদের ( মুনাফিকদের) কি যে হলো আমার জ্ঞান নি্যে তারা বিরূপ সমালোচনা করছে । তোমরা এখন থেকে কেয়ামত পর্যন্ত যে কোন বিষয় সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞাসা করো আমি অবশ্যই উহা তোমাদের কে বলে দিবো”
(তাফসীরে খায়েন )


হাদীস থেকে ;- 
বুখারী শরীফের ‘ বাদ্য়ু খালকে ” শীর্ষক আলোচনায় ও মিশকাত শরীফের “বাদয়ু খলকে ওয়া জিকরুল আমবিয়া” শীর্ষক অধ্যায়ে হযরত উমর ফারূক (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহূ) থেকে বর্নিত অর্থাৎ হযরত ওমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন — ” রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) এক জায়গায় আমাদের সাথে অবস্থান করছিলেন । সে খানে তিনি আমাদের সৃষ্টির সূচনা থেকে সংবাদ দিচ্ছিলেন – এমন কি বেহেস্তবাসী দোযখবাসী নিজ নিজ ঠিকানায় যাওয়ার অবধি পরিব্যাপ্ত যাবতীয় আবস্থা ও ঘটনা বলী প্রদান করেন ,যিনি ওসব স্মরণ রাখতে পেরেছেন তিনিতো স্মরণ রেখেছেন ; আর যিনি রাখতে পারেন নি তিনি ভুলে গেছেন । ( মেশকাত শরীফ ৫০৬)

মেশকাত শরিফের “আল-ফিতনা” অধ্যায়ে বুখারী ও মুসলিম শরীফ বরাত দিয়ে হযরত হুযাইফা (রাদিয়াল্লাহ আনহু) থেকে বর্নিত হয়েছে
অনুবাদ : রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) সে স্থানে কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে সব কিছুর খবর দিয়েছেন । কোন কিছুই বাদ দেন নাই । যারা মনে রাখার তারা মনে রেখেছেন, আর যারা ভুলে যাওয়ার তারা ভুলে গেছেন ।( মিশকাত শরীফ)

হযরত আমর ইবনে আখতাব (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) হতে বর্নিত , তিনি বলেন , আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) একদিন আমাদেরকে নিয়ে ফজরের নামাজ পড়লেন । অতঃপর মিম্বরে আরোহন করলেন এবং আমাদের উদ্দেশে দীর্ঘ বক্তব্য প্রদান করলেন ; এমন কি যোহরের নামায পড়ালেন ।অতঃপর আবারো আরোহন করলেন মিম্বরে , আর বক্তব্য দেওয়া শুরু করলেন ,এমন কি আসরের নামাযের সময় উপস্থিত হল । অতঃপর মিম্বরে হতে নেমে আসরও পড়লেন । পুনরায় মিম্বরে আরোহন করে বক্তব্য দিতে দিতএ সুর্য অস্তমিত হয়ে গেল । সে দিন নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) অতীতে যা কিছু এবং ভবিষ্যতে যা কিছু হবে সকল বিষয়ে আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছেন । আমাদের মধ্যে যাঁদের স্মরণশক্তি অধিক তাঁরা সেসব (অদৃশ্য) সংবাদ বেশী মনে রাখতে পেরেছেন ।

( সুত্র : বুখারী শরীফ হাদিস নম্বর ৬২৩০ কিতাবুল কদর , মুসলিম শরিফ হাদিস নম্বর ২৮৯১ কিতাবুল ফিতান , তোরমিযী শরীফ হাদিস নম্বর ২১৯১ কিতাবুল ফিতান , আবু দাউদ শরীফ হাদিস নম্বর ৪২৮ কিতাবুল ফিতাম , মিসকাতুল মাসাবিহ : কিটাবুল ফিটাম ৪৬১ পৃষ্ঠা )


হযরত ওমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত , তিনি বলেন একদা হুজুর নবী করীম(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) আমাদের সামনে দন্ডায়মান হলেন অতঃপর সৃষ্টিজগতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তথা বেহেশত বাসীরা বেহেশতে এবং দোযখনাসীরা দোযখে প্রবেশ করা পর্যন্ত সবকিছু আমাদের সামনে বলে দিলেন । আমাদের মধ্যে যারা মুখস্ত রাখতে পেরেছে তারা মুখস্ত রেখেছে ; আর যারা ভুলে যাবার তারা ভুলে গেছে ।
[ বুখারী : হাদীস নং ৩০২০ : কিতাবু বাডয়িল খালক্ব ]


হযরত আনাস বিন মালিক (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে াপর এক হাদীস শরিফে দেখা যায় । তিনি বলেন একদা নবীপাক(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) আমাদের মাঝে তাশরীফ আনলেন তখন সূর্য পশ্চিমাকাশে দিকে ঝুঁকে পড়েছিল ( অর্থাৎ যোহরের নামাযের সময় হয়ে গিয়েছিল ) অতঃপর নবী করীম(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) যোহরের নামায পড়লেন আর সালাম ফিরানোর পর মিম্বরে আরোহন করে ক্বিয়ামতের আলোচনা রাখলেন এবং ক্বিয়ামতের পুর্বেকার কতিপয় বড় বড় ঘটনা বর্ননা দিলেন আর উপস্থিত সাহাবীদেরকে সম্বোধন করে বললেন , খোদার কসম তোমরা আমার কাছে যা কিছু জানতে চাইবে আমি এই মজলিসেই সব প্রশ্নের উত্তর দেব ।

হযরত আনাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন হুজুরের বানীর এমন দৃঢ়তা দেখে আনসারী সাহাবাদের মধ্যে আনন্দের কান্নার রোল বয়ে গেলো । আর নবীপাক(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা)বারবার বলে যাচ্ছেন – তোমরা আমাকে প্রশ্ন কর , প্রশ্ন কর । অতঃপর এক ব্যক্তি দাড়িয়ে প্রশ্ন করল – হে আল্লাহর রাসুল ! পরকালে আমার ঠিকানা কোথায় হবে ? নবীপাকে বললেন জাহান্নাম । অথপর আবদুল্লাহ ইবনে হুযাফা বললেন -ইয়া রাসুল লাল্লাহ ! আমার পিতা কে ? নবী করীম বললেন – তোমার পিতা হুযাফা । নবীপাক(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) আবার ও জোর তাগিদ দিয়ে বললেন , তোমরা প্রশ্ন কর , প্রশ্ন কর ।

অত:পর,ওমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) নবী করীম(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) বরাবর সামনে গিয়ে বসলেন আর বললেন -আমরা সন্তস্ট যে আল্লাহ কে রব হিসাবে পেয়ে , ইসলাম কে দ্বীন হিসাবে আর মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) কে রাসুল হিসেবে পেয়েছি । তিনি এসব কথা বলার সময় নবী করীম(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) চুপ রইলেন । অতঃপর বললেন -সেই সত্তার কসম ! যার হাতে আমার প্রাণ , আমার এ দেয়ালের সামনে এই মাত্র বেহেসত ও দোযখ হাজির করা হয়েছে , যখন আমি নামায পড়ছিলাম , আজকের মত কোন ভাল-মন্দকেও দেখিনি ।

(সুত্র বুখারী শরীফ হাদীস নং৬৮৬৪ কিতাবুল ই’তিসাম , বিল কিতাবে ওয়াস সুন্নাহ :, মুসলিম শরীফ হাদিস নং ২৩৫৯ )
এ ভাবে অসংখ্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় রাসুলে আকরাম(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) ইলমে গায়েবের অধিকারী ছিলেন । অবশ্যই তা আল্লাহ প্রদত্ত ।



সংক্ষিপ্ত কথা হলো, গায়েবের চাবি-কাঠি একমাত্র আল্লাহর নিকট। তিনি ছাড়া কেউ গায়েব জানে না। তবে, ফেরেশতা, নবী-রাসূল, ওলী ও অন্যান্যদেরকে যদি আল্লাহ তায়ালা গায়েব সম্পর্কে অবহিত করান, তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে যতটুকু জানান, তারা কেবনল ততটুকুই জানে। 

 

ওলামায়ে দেওবন্দ থেকে কিছু কথা :- 

তার আগে আসুন দেখে নেই ওলামায়ে দেওবন্দ কি বলে ইমাম জালালুদদিন সুয়ুতি (রহ)র বিষয় ;- 
মালফুজাত এ হাকীমুল উম্মত থেকে ;- একদা তিনি (আশরাফ আলী থানভী)বলেন যে , এমন ধার্মিক লোক আছে যারা সর্বখন আল্লাহর রাসুল সল্লেল্লাহু আলায়হে সালাম কে দেখেন। যখন জালালুদ্দিন সুয়ুতি একটা বর্ণনা শুনতেন , তখন বলতে পারতেন সেটা হাদিস কি না। কোন বেক্তি সুয়ুতি কে প্রশ্ন করলেন আপনি ইটা কিভাবে করেন ? ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতি (রহ) উত্তর দিলেন যে , যখন আমি কোনো বর্ণনা শুনি তখন নবী পাক সল্লেল্লাহু আলায়হে সালামের দিকে দেখি। যদি দেখি তিনি উত্ফুল্ল তাহলে মনে করি এটা হাদিস। আর যদি ওনাকে গম্ভীর দেখি , তাহলে মনে করি এটা হাদিস নয় ( মালফুজাত এ হালিমুল উম্মাহ ) ৭ খ পৃষ্টা ১০৯-১১০। মালফুজাত বক্তব্য নং ১৭১ 
আমি আসলে পোস্টার মূল বিষয় এখনো খোলাসা করি নাই। 
আমি প্রথম কোরান পাকের আয়াত দিয়ে প্রমান করতে চেয়েছি যে এরা আমের আঠা কাঠাল গাছে লাগায়।  
আর দ্বিতীয়ত প্রমানা করতে চেয়েছি যে তারা তাদের দেওবন্দের আকবের দের কত টুকু মূল্যায়ন করে ? 
আমি মাওলানা আশরাফ আলী থান্বির মুল্ফুজাত থেকে প্রমান করতে চেয়েছি যে ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতি শান কি ছিল। আমি আসল সুন্নি কে প্রশ্ন করেছিলাম ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতি (রহ) কে কি মান্য কর ? বলল হা অবশ্যই করি। 

আসুন দেখি কেমন মান্য করে।  
দেওবন্দিরা মিলাদ ও কিয়ামের প্রকাস্য বিরুধিতা এমন কি রাম-কানাই এর জন্ম অত্সবের মত মনে করে। আমি সেই হিস্ট্রি তুলে ধরতে চাচ্ছি না। চাচ্ছি সুধু যে তারা যে মিলাদ কিয়ামের বিরুধী তো ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতি রহ এই কিয়াম এর বৈধতা ও সেই সময় মিলাদ কিয়ামের বিরুধী দের দাত ভাঙ্গা জবাব দিয়েছেন তাও লিখিত কিতাব আকারে। কিতাব টার নাম হচ্ছে ( হুসনুল মাকসিদ ফি আমাদিল মাওলিদ ও ইম্মাউল আজকিয়া বি হায়াতিল আম্বিয়া) 
এই কিতাবে তিনি সুস্পষ্ট ভাবে মিলাদ কিয়ামের বৈধতা ও তোমাদের মত কুলাঙ্গার যারা ছিল তাদের দাত ভেঙ্গে দিয়েছেন। অথচ তোমরা ও বল জালালুদ্দিন সুয়ুতি (রহ) কে মান্য করি , কিন্তু মিলাদের বিরুধিতা করি। এর পর বলবে তোমরা যে যদি কোনো বেদাত এর উদ্ভব হয় তা যেই হোক পরিত্যাগ করতে হবে। তোমাদের আলেম আশরাফ আলী থানবী তার মালফুজাত ১৭১ এ লিখেছে কি সান ও মান ইমাম জালালুদ্দিন সুযুতীর। এমন আলেম ও ওয়াক্তের মোজাদ্দেদ হয়ে তিনি কি এমন মন্দ বেদাত কে জায়েজ বলতে পারেন ? জবাব পাঠক মন্ডলী দিবে 

এর পর ইলমে গায়েব কে অস্বিকার কর তোমরা , এবং এই বিষয় তোমাদের ফতোয়া ই আছে যে যে ইয়া নবী বলে ইলমে গায়েব জানে বলে শিকার করে তাকে কাতেল করা বৈধ। 

কিন্তু মাওলানা আশরাফ আলী থানবী যে ইমামের সান ও মান এত বেশি উর্ধে প্রকাশ করলেন তিনি ৬৩ পৃষ্টার একটা কিতাব লিখেছেন নাম দিয়েছেন (ইলমে গায়েব ) এখন বল তোমরা। বিচার তোমাদের কাছে করা হক ? 
করা বাতেল ? 

তারা দাবি করে যে তারা শাহ আব্দুল হক (রহ) ও ওনার পরিবারের উত্তরসূরি। 
আসুন দেখি কেমন উত্তরসূরি তারা ;- 
ওনার কিতাব(মাদারেজুন নবুয়াত ) ১৬ নং পৃষটা তে লিখেছেন নবী পাক বলতেন তোমরা রুরু ও সেজদায় আমার অগ্রবর্তী হইয়ো না । বুখারী সরিফ কিতাবুল সালাতে অধযায় ও এমন বরননা আছে । নবী পাক বলেছেন তোমরা কি মনে কর ? আমি শুধু সামনের দিকে দেখি ? আল্লাহর কসম আমি সামনে যেমন দেখি ঠিক তেমন পিছনে ও দেখি ও তোমাদের রুকু সেজদা বিনয় খূশু কোন কিছুই আমার কাছে গোপন নয় । 

আবার মাগারেজুন নবুয়াত এ শাহ আব্দুল হক (রহ) লিখেছেন যে এই দেখার শক্তি কি শুধু নামাজের সময়ের জন্য ছিল ? না কি সকল সন্তের জন্য ? 
এর জবাব এভাবে দেয়ে যারা পারে পরওয়ার দেগারে আলম তার প্রিয় হাবীবের সকল অংগ প্রত্যঙ্গ কে এরুপ দেখার যোগ্যতা ও শক্তি দিয়ে থাকতে পারেন বা শর্তহীন ভাবে প্রদান করেছিলেন । পৃষটা ১৬ ।

উক্ত কিতাবের ১৭ নং পৃষ্টায় শাহ আব্দুল হক (রহ) লিখেছেন কতগুলো লোক আপত্তি উক্ষাপন করে যে নবী পাক নিজেই বলেছেন :- (আমি একজন নিছক বানদা , দেয়ালের ওনতোরালে কি আছে আমার জানা নাই ) এই কথার কোন ভিত্তি নাই । এ ধরনের বক্তব্যের কোন সঠিক বরননা পাওয়া যায় না । 
তাদের এ ধারনের কথা ধরে নেয়া যদিও কঠিন তবে , আমরে বলব ওনার গায়েব প্রকাশিত হওয়া ওনার নামাজের সাথে সম্পৃক্ত । আর যদি তিনি এ ধরনের এলম হাসিল করে থাকেন তবে কা আল্লাহ তায়ালার অবগত করানোর মাধ্যমেই অবগত হওয়া সম্ভব । অন্যান্য সকল গায়েবের ক্ষেত্র এই নিতি মান্য করতে হবে । 

এই জন্য এ জাতির লোকেরা নবী পাকের ইলম এ গায়েব ছিল না বলে উট হারানোর প্রসংগ উল্লেখ করে থাকে । ঐ ঘটনা মোনাফেক সম্প্রদায় এর লোকেরা করেছিল যে ;- মোহাম্মদ (আলাইহিস সালাম ) আকাশের খবর বলে অথছ সে জানে না তার উট কোথায় ? (মাদারেজুন নবুয়াত) খ ১ পেজ ১৭

আপনারা যে নবী পাকের গায়েব অসিকার করেন তো আপনারা ও কি মোনাফেক নন ? 
তাদের আলেমের ও ওনেক গায়েব ও হাজির নাজির এর প্রমান আছে।  পোস্ট ওনেক বড় হয়ে গেছে।  তাই আর যোগ করলাম না 

বিচার করবেন পাঠক মন্ডলি 

সোহান রানা