রবিবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০১৫

ইসলামের এক শত্রুর প্রতি জবাব (পর্ব ৭২)

ইসলামের এক শত্রুর প্রতি জবাব (পর্ব ৭২)

[Bengali translation of Allama Husayn Hilmi Isik’s online book “Answer to an Enemy of Islam” - part 72; translator: Kazi Saifuddin Hossain]
মূল: আল্লামা হুসাইন হিলমী ইশিক তুর্কী (রহ:)
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন

[লা-মযহাবী/’সালাফী’ অপযুক্তির খণ্ডন]

”আমি বারংবার লেখেছি যে তোমরা এমন লোকদেরকে ধর্মীয় বিষয়ে কর্তৃত্বশীল মনে করবে না, যারা মহানবী (দ:)-কে মান্য করার বেলায় শিথিল কিংবা তাঁর আলোকোজ্জ্বল পথ হতে বিচ্যুত! তাদের মিথ্যে কথাবার্তায় বা লেখনীতে বিশ্বাস-ই করবে না! ইহুদী, খৃষ্টান এবং ভারতীয় বৌদ্ধ ও ব্রাক্ষণরাও নিজেদেরকে সঠিক পথের পথিক এবং মানুষকে মঙ্গল ও সুখ-শান্তির দিকে আহ্বানকারী হিসেবে প্রচার করার উদ্দেশ্যে মধুর ও উৎসাহদায়ক কথাবার্তা এবং কূটতর্ক করে থাকে। হযরত আবূ উমর ইবনে নাজিব বলেন, ‘যে জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও জীবনে অনুশীলিত হয় না, তা এর অধিকারীর জন্যে উপকারী হওয়ার চেয়ে অপকারী-ই হয় বেশি।’ সকল ধরনের সুখ-শান্তির একমাত্র পথ ইসলাম। নাজাত পেতে হলে রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর পদাংক অনুসরণ করতে হবে। ভ্রান্তি থেকে মুক্ত সঠিক পথের পার্থক্যকারী চিহ্ন হলো তাঁকে মান্য করা। তাঁর ধর্মের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ কোনো কথা, লেখা বা কর্মের কোনো মূল্যই নেই। ক্ষুধার্ত থাকা বা ধ্যান সাধনার মাধ্যমে খারিকা (অত্যাশ্চর্য ঘটনা) সংঘটিত হতে পারে; আর এটি মুসলমানদের জন্যে খাস্ তথা সুনির্দিষ্ট নয়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক (রহ:) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মোস্তাহাব পালনে শিথিল, সে সুন্নাহ পালনে অক্ষম। আর সুন্নাহ পালনে শৈথিল্য দ্বারা ফরয পালনও কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। সে যদি ফরয পালনে শিথিল হয়, তাহলে মা’রেফত তথা আল্লাহর রেযামন্দি অর্জনেও সে ব্যর্থ হবে।’ এ কারণে একটি হাদীস শরীফে হুযূর পূর নূর (দ:) এরশাদ ফরমান, ‘পাপাচারের ফলে কোনো ব্যক্তি অবিশ্বাসীতে পরিণত হয়।’ মহান আউলিয়াদের অন্যতম হযরত আবূ সাঈদ আবূল খায়র (বেসাল: ৪৪০হিজরী/১০৪৯ খৃষ্টাব্দ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘অমুক পানির ওপর হাঁটতে পারে; এ ব্যাপারে আপনি কী বলবেন?’ তিনি উত্তর দেন, ‘এটি অর্থহীন, কেননা একটি হাঁসও পানিতে ভাসতে পারে।’ আবার যখন তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, ‘তমুক আকাশে উড়তে পারে?’ তখন তিনি বলেন, ‘একটি মাছিও আকাশে উড়তে সক্ষম। ওই লোকের মূল্য মাছির মতোই।’ যখন তাঁকে পুনরায় জিজ্ঞেস করা হলো, ‘অমুক মুহূর্তে এক শহর থেকে আরেক শহরে গমন করতে সক্ষম’, তিনি তখন জবাব দেন, ‘শয়তানও চোখের পলকে পূর্বদিক থেকে পশ্চিমদিকে যেতে পারে। এ ধরনের জিনিস আমাদের ধর্মে অর্থহীন। একজন সিদ্ধপুরুষ মানুষের মাঝে বসবাস করেন, বাজারে যান এবং বিয়ে-শাদীও করেন, কিন্তু তিনি এক মুহূর্তের জন্যেও আল্লাহকে ভুলেন না।’ হযরত আবূ আলী রুদবারী (বেসাল: ৩২১ হিজরী/৯৩৩ খৃষ্টাব্দ, মিসর) যিনি মহান আউলিয়াবৃন্দের অন্যতম এবং হযরত জুনায়দ আল-বাগদাদী (রহ:)-এর মুরীদ, তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, ‘ধর্মীয় পদে অধিষ্ঠিত কোনো ব্যক্তি যদি (শরাবীদের) বাদ্যযন্ত্রের মজলিশে বসে এবং তা শোনে এবং না-মাহরাম মেয়ে ও নারীদের সাথে বন্ধুত্ব করে অথবা স্ত্রী-কন্যাকে অনৈসলামী পন্থায় বেপর্দা চলাফেরা করতে দেয়, আর যদি সে দাবি করে তার অন্তর নির্মল এবং অন্তরের বিষয়টি-ই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তাহলে তার সম্পর্কে কী বলবেন আপনি?’ তিনি জবাব দেন, ‘ওই লোকের গন্তব্য জাহান্নাম।’ আবূ সোলাইমান আদ্ দারানী যিনি দামেশকের অন্তর্গত দারিয়া গ্রামে বসতি স্থাপন করেন এবং সেখানেই ২০৫ হিজরী/৮২০ খৃষ্টাব্দ সালে বেসালপ্রাপ্ত হন, তিনি বলেন, ‘প্রথমে আমি কুরআন ও সুন্নাহ’র আলোকে আমার চিন্তাভাবনা ও নিয়্যতকে বিচার করি। অতঃপর এই দু’টি ইনসাফপূর্ণ মানদণ্ডের সাথে যেগুলো সামঞ্জস্য রাখে, সেগুলোই পালন করি।’ রাসূলুল্লাহ (দ:) একটি হাদীসে এরশাদ ফরমান, ‘বেদআতী লোকেরা জাহান্নামে যাবে’; ‘বেদআত প্রবর্তক ও পালনকারীকে শয়তান যথেষ্ট এবাদত-বন্দেগী করতে সহায়তা করে। এটি তাকে যথেষ্ট কাঁদায়ও।’ অন্যত্র এরশাদ ফরমান, ‘বেদআত সংঘটনকারী কোনো ব্যক্তির নামায, রোযা, হজ্জ্ব, উমরাহ, জ্বেহাদ এবং ফরয বা নফল এবাদত আল্লাহতা’লা কবুল করেন না। এ ধরনের লোকেরা সহজে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যায়।’ শায়খ ইবনে আবি বকর মোহাম্মদ ইবনে মোহাম্মদ আল-আন্দালুসী যিনি মিসরে বসবাস করেন এবং ৭৩৪ হিজরী/১৩৩৪ খষ্টাব্দ সালে বেসালপ্রাপ্ত হন, তাঁর মা’আরিজ আল-হেদায়া বইতে তিনি বলেন, ‘সঠিক পথকে জানো এবং তারপর সঠিক পথে থাকো! কোনো কামেল (পূর্ণতাপ্রাপ্ত) বোযর্গ ব্যক্তির প্রতিটি কাজ, চিন্তা, কথা ও আচরণ মহানবী (দ:)-এর সাথে মিলে যাবে। কেননা, তাঁকে অনুসরণ করেই সব ধরনের সুখ-শান্তি অর্জন করা যেতে পারে। হুযূর পূর নূর (দ:)-কে অনুসরণের মানে’ হলো ইসলামকে আঁকড়ে ধরা।’

(চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন