রবিবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০১৫

আহলে বায়ত (রা:) ও আসহাব (রা:)-এর প্রতি ভক্তিতে মুক্তি - (২৪)

আহলে বায়ত (রা:) ও আসহাব (রা:)-এর প্রতি ভক্তিতে মুক্তি - (২৪)

[Bengali translation of Allama Husayn Hilmi's book 'O my brother! If you wish to die in Iman, you must love the Ahl-i Bayt and the Ashaab' (compiled in the Online book 'Documents of the Right Word'); translator: Kazi Saifuddin Hossain; part 24]

মূল: আল্লামা হুসাইন হিলমী ইশিক (তুরস্ক)
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন

৬/ - হুরুফী লেখক বলে, “আরেক বুড়ি একটি চুড়ি/বালা হারানোর মিথ্যে গল্প ফেঁদেছিল, যা ছিল সাফওয়ানের সাথে মরুভূমিতে ঘটে যাওয়া তার প্রেমের উপাখ্যান ঢাকবার একটি চেষ্টামাত্র। এটি করতে যেয়ে ওই বুড়ি হযরত আলী (ক:)-এর ওপর তালাকের কারণ চাপিয়ে দেয়। এরই ফলশ্রুতিতে জামাল তথা উটের যুদ্ধের সূত্রপাত হয়।”

ওপরের বক্তব্য দ্বারা ম্যাগাজিন পত্রিকাটি নির্লজ্জভাবে রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর স্ত্রী ও মো’মেন মুসলমানদের মাতা হযরত আয়েশা (রা:)-কে আক্রমণ করেছে। এ বিষয়ে হযরত আব্দুল হক্ক মোহাদ্দীসে দেহেলভী (রহ:) তাঁর প্রণীত ‘মাদারিজুন্ নুবুয়্যত’ গ্রন্থে কী বলেছেন তা দেখুন:

হযরত আয়েশা (রা:) ছিলেন অসংখ্য গুণে গুণান্বিতা। আসহাবে কেরাম (রা:)-বৃন্দের মধ্যে তিনি ছিলেন এক ফেকাহবিদ। তিনি স্পষ্টভাষী ও বাগ্মীও ছিলেন। সাহাবা-এ-কেরাম (রা:)-এর জন্যে তিনি ফতোওয়া দিতেন। অধিকাংশ উলামা-মণ্ডলীর মতে, ফেকাহ-বিদ্যার এক-চতুর্থাংশ জ্ঞানই হযরত আয়েশা (রা:) কর্তৃক বর্ণিত হয়। একটি হাদীস শরীফে হুযূর পূর নূর (দ:) এরশাদ ফরমান, “তোমাদের এক-তৃতীয়াংশ দ্বীনী জ্ঞান হুমায়রা হতে শিক্ষা করো!” তিনি হযরত আয়েশা (রা:)-কে অত্যন্ত ভালোবাসতেন বলে তাঁকে ‘হুমায়রা’ নামে ডাকতেন। আসহাব-এ-কেরাম (রা:) ও তাবেঈন (রহ:)-দের মধ্যে বেশির ভাগই তাঁর কাছ থেকে শ্রুত নানা হাদীস শরীফ বর্ণনা করেন। হযরত উরওয়াত ইবনে যুবায়র (রা:) ব্যক্ত করেন: কুরআনুল করীমের অর্থ (তাফসীর), হালাল-হারাম, আরবী পদ্য বা বংশ বৃত্তান্তবিষয়ক জ্ঞানে হযরত আয়েশা (রা:)-এর চেয়ে বেশি জ্ঞানী আর কাউকেই দেখি নি। মহানবী (দ:)-এর প্রশংসায় রচিত নিচের দু’টি পংক্তি তাঁরই:

মিসরীয় লোকেরা যদি তাঁর কপোলদ্বয়ের সৌন্দর্য সম্পর্কে শুনতে পেতো,
তাহলে তারা ইউসূফ (আ:)-কে কেনার জন্যে অর্থ ব্যয় না করতো, (মানে তারা তাঁর কপোলদ্বয় দেখার জন্যেই ওই অর্থকড়ি রাখতো)
জোলেখাকে দোষারোপকারিনী নারীরা যদি তাঁর আলোকোজ্জ্বল ললাট দেখতে পেতো,
তবে তারা তাদের হাতের বদলে নিজেদের হৃদয়গুলোই কাটতো। (আর এতে তারা কোনো ব্যথাই অনুভব করতো না)

হযরত আয়েশা (রা:)-এর আরেকটি মর্যাদাপূর্ণ শ্রেষ্ঠত্ব হলো তিনি রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর প্রেমময়ী স্ত্রী। মহানবী (দ:) তাঁকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। যখন হুযূর পাক (দ:)-কে জিজ্ঞেস করা হয় তিনি (স্ত্রীদের মাঝে) কাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন, তিনি উত্তরে বলেন, “আয়েশা।” আর যখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয় কোন্ ব্যক্তিকে তিনি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন, তিনি জবাবে বলেন, “আয়েশার পিতা।” অর্থাৎ, তিনি হযরত আবূ বকর (রা:)-কেই উদ্দেশ্য করেছিলেন। হযরত আয়েশা (রা:)-কে যখন জিজ্ঞেস করা হয় মহানবী (দ:) কাকে বেশি ভালোবাসতেন, তিনি উত্তর দেন হযরত ফাতেমা (রা:)-কে হুযূর পাক (দ:) বেশি ভালোবাসতেন। তাঁকে যখন আবার জিজ্ঞেস করা হয় কোন্ ব্যক্তিকে তিনি বেশি ভালোবাসতেন, তিনি জবাবে বলেন হযরত ফাতেমা (রা:)-এর স্বামীকে নবী করীম (দ:) বেশি ভালোবাসতেন। এর মানে দাঁড়ায় এই যে, মহানবী (দ:)-এর স্ত্রীদের মাঝে হযরত আয়েশা (রা:)-কে তিনি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন; তাঁর সন্তানদের মাঝে তিনি হযরত ফাতেমা (রা:)-কে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন; তাঁর আহলে বায়তের (পরিবারের) মধ্যে হযরত আলী (ক:)-কে তিনি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন; আর তাঁর সাহাবা-এ-কেরাম (রা:)-দের মধ্যে হযরত আবূ বকর (রা:)-কেই তিনি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন। হযরত আয়েশা (রা:) বর্ণনা করেন: “একদিন রাষুলুল্লাহ (দ:) তাঁর মোবারক চপ্পলের চামড়ানির্মিত ফিতা খুলছিলেন, আর আমি সুতো বুনছিলাম। তাঁর পবিত্র মুখমণ্ডলের দিকে নজর করতেই আমি দেখি, তাঁর উজ্জ্বল ললাট থেকে ঘাম বের হচ্ছিল; প্রতিটি বিন্দু ঘাম চারদিকে আলো ছড়াচ্ছিল। এগুলো আমার চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছিল। আমি হতভম্ব হয়ে যাই। তিনি আমার দিকে ফিরে তাকান এবং জিজ্ঞেস করেন, “তোমার কী হয়েছে? কেন তুমি এতো চিন্তামগ্ন?” আমি আরয করি, ‘এয়া রাসূলাল্লাহ (দ:)! আপনার পবিত্র মুখমণ্ডলের নূরানী আলোর তীব্রতা এবং আপনার পবিত্র ললাটে ঘামের বিচ্ছুরিত প্রভা দেখে আমি আত্মহারা।’ তিনি উঠে দাঁড়িয়ে আমার কাছে আসেন। আমার দু’চোখের মাঝখানে চুম্বন দিয়ে তিনি বলেন, “ওহে আয়েশা! আল্লাহ পাক তোমাকে ভালাই দিন! তুমি আমাকে যেভাবে সন্তুষ্ট করেছ সেভাবে আমি তোমাকে সন্তুষ্ট করতে পারিনি।” অর্থাৎ, তিনি বলতে চেয়েছেন, ‘আমাকে তোমার কৃত সন্তুষ্টি তোমাকে আমার কৃত সন্তুষ্টির চেয়েও বেশি।’ মহানবী (দ:)-এর প্রতি ভালোবাসা ও তাঁর সৌন্দর্য দেখে তা স্বীকার করার স্বীকৃতিস্বরূপ এবং সম্মানার্থে তিনি হযরত আয়েশা (রা:)-এর পবিত্র দু’নয়নের মাঝখানে চুম্বন করেন। একটি ছত্র ব্যক্ত করে:

আমি তব সৌন্দর্য দর্শনে আপন আঁখিকে অভিনন্দন জানাই!

দ্বিচরণে ব্যক্ত হয়:

সৌন্দর্য দর্শনে ওই দু’নয়ন কতোই না উত্তম
তাঁর ভালোবাসার দহনে পূর্ণ হৃদয় কতোই না সৌভাগ্যবান!

(চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন