রবিবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০১৫

ইসলামের এক শত্রুর প্রতি জবাব (পর্ব ৭১)

ইসলামের এক শত্রুর প্রতি জবাব (পর্ব ৭১)

[Bengali translation of Allama Husayn Hilmi Isik’s online book “Answer to an Enemy of Islam” - part 71; translator: Kazi Saifuddin Hossain]
মূল: আল্লামা হুসাইন হিলমী ইশিক তুর্কী (রহ:)
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন

[লা-মযহাবী/’সালাফী’ অপযুক্তির খণ্ডন]

৪৫/ - সাহাবা-এ-কেরাম (রা:)-এর যুগ হতে ইসলামকে ভেতর থেকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে ধর্মের শত্রুরা আলেম-উলামার ছদ্মবেশে মুসলমানদেরকে ধোকা দিতে অপতৎপর হয়েছে। ধর্মীয় পদে অধিষ্ঠিত এ লোকদেরকে ‘যিনদিক’, ’ধর্ম সংস্কারক’ বা ‘বিজ্ঞানের গোঁড়ামিসম্পন্ন ব্যক্তি’ বলা হয়। এরা প্রতি শতাব্দীতেই অজ্ঞ-মূর্খদেরকে ধোকা দিয়ে ইসলামের পথ থেকে বিচ্যুত করেছে; তবে তারা খোদ ইসলাম ধর্মের কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। কেননা, প্রতি শতাব্দীতেই অসংখ্য ফেকাহবিদ আলেম ও তাসাউফের মহান শায়খবৃন্দ তাঁদের প্রভাষণ (ওয়ায-নসীহত) ও লেখনী দ্বারা মুসলমানদেরকে এই ধোকাবাজির ফাঁদে পা দেয়া থেকে সতর্ক করেছেন। কিন্তু এখন ইসলামের প্রকৃত আলেম-উলামা (বোযর্গমণ্ডলী)-এর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে, আর দ্বীনের শত্রুরাও সুযোগ পেয়ে গিয়েছে। ধর্মীয় পদধারীর ছদ্মবেশে তারা বর্তমানে ইসলাম ধর্মকে পুরোদমে আক্রমণ করছে। এই অন্তর্ঘাতী শত্রুদেরকে চিনতে হলে ইসলামের একজন প্রকৃত আলেম কেমন হবেন, তা মুসলমানদের জানা প্রয়োজন। হযরত মা’সূম আল-ফারূকী আস্ সেরহিন্দী (রহ:) হক্কানী আলেমবৃন্দের পরিচয় দিতে গিয়ে লেখেন:

”তোমরা ইসলাম অমান্যকারী বা কোনো গোমরাহ-পথভ্রষ্ট লোকের সাথে বন্ধুত্ব করবে না! ধর্মীয় পদে সমাসীন বেদআতী লোকদের এড়িয়ে চলো! হযরত এয়াহইয়া ইবনে ম’য়ায আর-রাযী (কুদ্দেসা সিররূহ) বলেন, ‘তিন ধরনের লোককে এড়িয়ে চলবে। তাদের থেকে দূরে সরে থাকবে।’ এই তিন শ্রেণী হলো প্রথমতঃ গাফেল (আল্লাহকে ভুলে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত) ও ধর্মীয় পদে আসীন পথভ্রষ্ট লোক; দ্বিতীয়তঃ ধনী ব্যক্তিদের দয়া-দাক্ষিণ্য প্রত্যাশী চাটুকার ক্কারী (কুরআন তেলাওয়াতকারী); এবং তৃতীয়তঃ ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ তাসাউফের ভণ্ড তাপস। ধর্মীয় খেতাবধারী কোনো লোক যদি রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর সুন্নাহ না মানে এবং ইসলামকে আঁকড়ে না ধরে, তাহলে তাকে এড়িয়ে চলার পাশাপাশি তার বইপত্র না কেনা বা না পড়াও আমাদের জন্যে অবশ্য কর্তব্য হবে। সে যেখানে অবস্থান করে, সেখান থেকেও আমাদের দূরে সরে থাকা উচিত। তার সামান্যতম কৃতিত্ব স্বীকার করলেও তোমাদের ঈমান নষ্ট হতে পারে। কেননা, সে ইসলামের কোনো কর্তত্বসম্পন্ন ব্যক্তি নয়, বরং ইসলামের অন্তর্ঘাতী শত্রু। সে তোমাদের ঈমান-আকীদাকে কলুষিত করবে। শয়তানের চেয়েও সে বেশি ক্ষতিকর। তার কথাবার্তা মিষ্ট ও প্রভাবময় মনে হতে পারে, কিন্তু তাও তোমাদের উচিত হবে তার থেকে এমনভাবে দূরে সরে যাওয়া যেমনটি হিংস্র জন্তু-জানোয়ার থেকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্যে করা হয়। মহান আলেম-এ-হক্কানী শায়খ জুনায়দ আল-বাগদাদী (রহ:) বলেন, ‘অনন্ত নেয়ামতের দিকে কাউকে শুধু একটিমাত্র পথই নিয়ে যেতে পারে, আর তা হলো রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর পদাংক অনুসরণ’; ‘আহলে সুন্নাতের উলামাবৃন্দ কর্তৃক লিখিত তাফসীরগ্রন্থ পড়ে না কিংবা হাদীস শরীফে প্রদর্শিত পথে চলে না এমন ধর্মীয় পদে অধিষ্ঠিত কোনো লোককে তোমরা অনুসরণ করবে না। কেননা, একজন ইসলামী আলেম অবশ্যঅবশ্য কুরআন-সুন্নাহ নির্দেশিত পথে অটল থাকবেন’; ‘সালাফ আস্ সালেহীন ছিলেন সঠিক পথের পথিক। তাঁরা ছিলেন প্রকৃত বান্দা। আল্লাহতা’লার ভালোবাসা ও রেযামন্দি (সন্তুষ্টি) তাঁরাই অর্জন করেন। তাঁদের পথটি-ই ছিল কুরআন ও সুন্নাহ-প্রদর্শিত পথ। এই সত্য, সঠিক পথকে তাঁরা শক্তভাবে আঁকড়ে ধরেছিলেন।’ [নোট: এখানে বোঝা যায় যে সাহাবায়ে কেরাম (রা:), তাবেঈন ও তাবে তাবেঈনের সমন্বয়ে প্রথম ইসলামী দুই শতকের মুসলমান যাঁদেরকে সালাফ আস্ সালেহীন বলা হয়, তাঁদের পথই ছিল মহানবী (দ:)-এর পথ। চার মযহাবের ইমামমণ্ডলীও এই শ্রেণীভুক্ত ছিলেন। অতএব, চার মযহাবের ফেকাহ’র বইপত্রে যে পথের দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে, তা-ই হলো রাসূলে খোদা (দ:)-এর আলোকোজ্জ্বল পথ। এ কারণে চার মযহাবের উলামাবৃন্দ সর্বসম্মতভাবে বলেন যে চার মযহাবের ফেকাহ’র বইপত্র থেকে বিচ্যুত লোকেরা প্রকৃতপক্ষে রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর পথ থেকেই বিচ্যুত। উলামাদের এই এজমা’ (ঐকমত্য) স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে ‘দোররুল মোখতার’ গ্রন্থের ‘যাবায়ীহ’ অধ্যায়ের ওপর ইমাম তাহতাবী রচিত শরাহ’তে।]

”তাসাউফের মহান মাশায়েখ ও ফেকাহ’র উলেমাবৃন্দ সালাফ আস্ সালেহীনের পথকে অনুসরণ করেন। তাঁরা ইসলামকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরেন। ফলে রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর সুযোগ্য উত্তরাধিকারী হবার মহাসম্মান তাঁরা লাভ করেন। তাঁদের কথাবার্তা, কর্ম ও নৈতিকতায় তাঁরা ইসলাম থেকে এক চুল পরিমাণও সরেননি।

(চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন