রবিবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০১৫

ওলি দের কারামত

অলিদের কারামতি 
কারামত কি? 
কারামত হল, অসাধারণ কোনো ঘটনা যা আল্লাহ্ তাঁর নেক বান্দাগণের মাধ্যমে তাদের জীবিতাবস্থায় অথবা তাদের মৃতু্র পর তাদের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য ঘটিয়ে থাকেন, এর মাধ্যমে তিনি তাঁর বান্দাকে কোনো অনিষ্টতা থেকে হেফাযত করেন, অথবা তাঁর বান্দার কোনো কল্যাণ সাধন করেন, অথবা তিনি এর মাধ্যমে হকের সাহায্য করে থাকেন। (সৌদী আরবের ফতোয়া বোর্ডের লাজনা দায়েমার ফাতওয়া ১/৩৮৮)
কারামতের সংজ্ঞায় সুলাইমান বিন আবদুল্লাহ্ বলেন, কারামত এমন একটি বিষয় যা আল্লাহ্ তাঁর মুমিন এবং মুত্তাকী বান্দার মাধ্যমে প্রকাশ করেন, হয় তার দো‘আর কারণে অথবা তার কোনো সৎ আমলের কারণে, আর এতে অলীর কোনো হাত বা শক্তি নেই। (তাইসিরুল আযীযিল হামীদ, ৪১৩)।
অলীগণের মাধ্যমে কারামত সংঘটিত হতে পারে তার দলীলঃ
নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদেরকে রক্ষা করেন তাদের দুশমন থেকে, তিনি কোনো বিশ্বাসঘাতক, অকৃতজ্ঞকে পছন্দ করেন না। (সূরা হাজ্ব-৩৮)
অলী কে?
যে আল্লাহর প্রিয় বিষয়সমূহ পালনের মাধ্যমে তাঁর আনুগত্য করে এবং তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তাঁর নৈকট্য লাভ করতে চেষ্টা করে। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, হাদীস কুদসী আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন, 

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদিস। তিনি বলেন: রাসূল (সাঃ) বলেছেন: "আল্লাহ তাআলা বলেন- যে ব্যক্তি আমার কোন ওলির সাথে শত্রুতা পোষণ করে আমি তার বিরুদ্ধে লড়াই ঘোষণা করি। আমার বান্দার প্রতি যা ফরয করেছি তা দ্বারাই সে আমার অধিক নৈকট্য লাভ করে। আমার বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমেও আমার নৈকট্য হাছিল করতে থাকে। অবশেষ আমি তাকে ভালবেসে ফেলি। যখন আমি তাকে ভালবাসি তখন আমি তার কর্ণ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শুনে। আমি তার চক্ষু হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে। আমি তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমি তার পা হয়ে যাই, যে পা দিয়ে সে চলাফেরা করে। সে আমার কাছে কিছু প্রার্থনা করে, আমি তাকে তা দেই। সে যদি আমার নিকট আশ্রয় চায়, তাহলে আমি তাকে আশ্রয় দেই। [সহীহ বুখারী, হাদিস নং- ৬৫০২]

কারামত কেন সংঘটিত হয়?
কারামত সংঘটিত হওয়ার মাঝে অনেক কল্যাণ এবং হিকমত রয়েছে তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, 
ক) আল্লাহর অসীম ক্ষমতা এবং তাঁর ইচ্ছা বাস্তবায়নের বহিঃপ্রকাশ এবং তিনি যা চান তা করতে পারেন, এমনিভাবে আমরা সচরাচর আল্লাহর দেওয়া বিষয়সমূহের যা কিছু দেখছি তার বাহিরেও আরো অনেক কিছু আছে যার কিছু বহিঃপ্রকাশ এই কারামাত, যে বিষয়ে মানুষ অবগত নয়।
খ) কোনো বান্দার মাধ্যমে কারামত সংঘটিত হওয়া তা তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ যা তাকে আল্লাহ্ পৃথিবীতে দিয়ে দিলেন। এ সুসংবাদ তাকে আল্লাহর প্রিয় বান্দা বলে প্রমাণ করে এবং তার সুভ পরিণতির পূর্বাভাস।
গ) যার মাধ্যমে তা সংঘটিত হয় সে নবীর সঠিক অনুসারী বলে প্রমাণিত।
ইতোপূর্বে সংঘটিত কিছু কারামতঃ 
আল কোরআনের আলোকে-
আল্লাহর অলীদের হাতে আলৌকিক কর্মকাণ্ড ঘটতে পারে এবং আল্লাহর ইচ্ছায় অতি প্রাকৃতি কিছু তাদের মাধ্যমে হতে । কারণ পবিত্র কুরআন এ অলীদের কারামতের বিবরণ পাওয়া যায়। পবিত্র কুরআনে অনেক কারামতের বিবরণ পাওয়া যায়। যেমন স্বামী ব্যতীত মরিয়ম (আঃ)এর গর্ভে ঈসা (আঃ)এর জন্ম গ্রহণ এবং অলৌকিকভাবে আল্লাহর পক্ষ হতে রিযিক প্রাপ্ত হওয়া, সূরা কাহাফে বর্ণিত গুহাবাসীর কারামত, যুল-কারনাইনের ঘটনা, মুসা (আঃ)এর সাথে খিযির (আঃ)এর ঘটনা ইত্যাদি।
১, হযরত মরিয়ম আঃ নবী ছিলেন না। কিন্তু কারামত স্বরূপ আল্লাহ তাআলা তাকে অমৌসুমি ফল দান করেছিলেন। কুরআনে এসেছে
فَتَقَبَّلَهَا رَبُّهَا بِقَبُولٍ حَسَنٍ وَأَنبَتَهَا نَبَاتًا حَسَنًا وَكَفَّلَهَا زَكَرِيَّا ۖ كُلَّمَا دَخَلَ عَلَيْهَا زَكَرِيَّا الْمِحْرَابَ وَجَدَ عِندَهَا رِزْقًا ۖ قَالَ يَا مَرْيَمُ أَنَّىٰ لَكِ هَٰذَا ۖ قَالَتْ هُوَ مِنْ عِندِ اللَّهِ ۖ إِنَّ اللَّهَ يَرْزُقُ مَن يَشَاءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ [٣:٣٧]
অতঃপর তাঁর পালনকর্তা তাঁকে উত্তম ভাবে গ্রহণ করে নিলেন এবং তাঁকে প্রবৃদ্ধি দান করলেন-অত্যন্ত সুন্দর প্রবৃদ্ধি। আর তাঁকে যাকারিয়ার তত্ত্বাবধানে সমর্পন করলেন। যখনই যাকারিয়া মেহরাবের মধ্যে তার কছে আসতেন তখনই কিছু খাবার দেখতে পেতেন। জিজ্ঞেস করতেন “মারইয়াম! কোথা থেকে এসব তোমার কাছে এলো?” তিনি বলতেন, “এসব আল্লাহর নিকট থেকে আসে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বেহিসাব রিযিক দান করেন।” {সূরা আলে ইমরান-৩৭}
ইবনে কাসীর উপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, এ আয়াতে অলীদের কারামত সাব্যস্তের বিবরণ আছে। হাদীস শরীফে এর অনেক উদাহরণ রয়েছে। (ইবনে কাসীর, খ১, পৃ২৭৯)
২, তেমনি ভাবে পবিত্র কুরআনে সোলাইমান (আ.) এর সাথীর কিছু কারামতের কথাও রয়েছে। তার কারামত সম্পর্কে আল্লাহ তালা বলেন : এমনিভাবে সুলাইমান আঃ এর জমানায় মুহুর্তের মাঝে ইয়ামান থেকে আসিফ বিন বারখিয়া নামক ব্যক্তির রানী বিলকিসের সিংহাসন নিয়ে আসাও বুজুর্গদের কারামত সত্য হবার প্রমাণ। কারণ আসিফ বিন বারখিয়া কোন নবী ছিল না।
قَالَ الَّذِي عِندَهُ عِلْمٌ مِّنَ الْكِتَابِ أَنَا آتِيكَ بِهِ قَبْلَ أَن يَرْتَدَّ إِلَيْكَ طَرْفُكَ ۚ فَلَمَّا رَآهُ مُسْتَقِرًّا عِندَهُ قَالَ هَٰذَا مِن فَضْلِ رَبِّي لِيَبْلُوَنِي أَأَشْكُرُ أَمْ أَكْفُرُ ۖ وَمَن شَكَرَ فَإِنَّمَا يَشْكُرُ لِنَفْسِهِ ۖ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ رَبِّي غَنِيٌّ كَرِيمٌ [٢٧:٤٠]
কিতাবের জ্ঞান যার ছিল, সে বলল, আপনার দিকে আপনার চোখের পলক ফেলার পূর্বেই আমি তা আপনাকে এনে দেব। অতঃপর সুলায়মান যখন তা সামনে রক্ষিত দেখলেন, তখন বললেন এটা আমার পালনকর্তার অনুগ্রহ, যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করেন যে, আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, না অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে নিজের উপকারের জন্যেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং যে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে জানুক যে, আমার পালনকর্তা অভাবমুক্ত কৃপাশীল। {সুরা নামল-৩৭}
৩, কোরআনে অলিদের কারামত নিয়ে একটি সুরা নাজিল হয়েছে< সুরা কাহাফ
সূরা কাহাফের ২৫ ও ২৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
وَلَبِثُوا فِي كَهْفِهِمْ ثَلَاثَ مِئَةٍ سِنِينَ وَازْدَادُوا تِسْعًا (25) قُلِ اللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا لَبِثُوا لَهُ غَيْبُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ أَبْصِرْ بِهِ وَأَسْمِعْ مَا لَهُمْ مِنْ دُونِهِ مِنْ وَلِيٍّ وَلَا يُشْرِكُ فِي حُكْمِهِ أَحَدًا (26)
“সুতরাং তারা গুহাতে অবস্থান করেছিল তিনশ’ বছর এবং আরো নয় বছর।” (১৮:২৫)
“তুমি বল- তারা কতকাল ছিল তা আল্লাহই ভলো জানেন, আসমান ও জমিনের অজ্ঞাত বিষয়ের জ্ঞান তাঁরই। কত (সুন্দর) তাঁর দর্শন ও শ্রবণ শক্তি। তিনি ছাড়া মানুষের অন্য কোনো অভিভাবক নেই। তিনি কাউকেই নিজ কর্তৃত্বের শরীক করেন না।” (১৮:২৬)
সহীহ হাদীসে অলীদের কারামতের বিবরণ পাওয়া যায়।
-----------------------------------------------------------
১, “একবার জমার সময় ওমর খোতবা দিতে গিয়ে হঠাৎ বললেন হেছারিয়া পাহাড়ের দিকে থাকাও। এ কথাটি তিনি তিনবার বললেন, অতপর সেনাবলের এক প্রতিনিধি মদীনায় আসলে তখন ওমর (রা.) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন লোকটি বলল আমরা পরাজিত হয়েছিলাম, এমতাবস্থায় তখন আমরা শুনতে পেলাম হে ছারিয়া পাহাড়ের দিকে থাকাও কথাটি তিনবার। তখন আমরা পাহাড়ের দিকে পিট দিয়ে যুদ্ধ করতে থাকলাম তখন আল্লাহ তাদেরকেই পরাজিত করলেন। রাবী বলেন, ওমর (রা.) কে এ ব্যপারে জিজ্ঞাসা করা হলো আপরিনই কি চিৎকার দিয়ে একথা বলছিলেন ? হারমালা ইবনে ওয়অহাবের হাদীস বর্ণনা করতে ঘটনাটি এভাবেই বলেছেন, এ হাদীসের সনদ হাসান পর্যায়ের। (ইউসুফ কাল্পলকী, হায়াতুস সাহাবা, খ: ৩ পৃ- ৬৪১)
২, ইমাম আহমদ আবু হোরাইরা থেকে বর্ণনা করে যে, তিনি বলেন, এক লোক নিজের পরিবারের লোকদের কাছে গেলেন। এ অবস্থা দেখে তাদের ক্ষুধা ও দুর্দশা তখন উপাত্তকার দিকে বেরিয়ে পড়লেন। এ অবস্থা দেখে তার স্ত্রী যথা তৈরী করে রাখলেন আর চুলাটি তৈরী জ্বালিয়ে রাখলাম। তারপর বললেন, হে আল্লাহ আমাদের রিযিকের ব্যবস্থা করে দাও। তখন তিনি দেখলেন পাত্র খাবারে ভরে গেছে। রাযী বলেন তার চুলার দিকে গেলে দেখে তাও খাবারে ভর্তি। রাবী বলেন অতপর স্বামী বাড়ী ফিরে আসলেন, এসেই বললেন তোমরা কি আমার চলে যাবার পর কিছু পেয়েছ ? তখন স্ত্রী বললেন হা আমার প্রভুর কাছ থেকে, তখন লোকটি যাবার কাছে গিয়ে তা তোললেন। অতপর ঘটনাটি রাসূল (সা.) কে বললেন, তখন মহানবী (সা.) বললেন, যদি সে কথার চাকনা না তোলা হত তহলে কিয়ামত দিবস পর্যন্ত তা ঘুরতে থাকত।” (প্রাগুক্ত, খ: ৩, পৃ- ৬৪১)
৩, বানী ইসরাঈলের মধ্যে জুরাইয নামের একজন পরহেজগার লোক ছিল। সে ইবাদতের জন্য একটি গীর্জা তৈরী করে তথায় সর্বদা ইবাদতে লিপ্ত ছিল। সে এক দিন নামাযরত অবস্থায় ছিল। এমন সময় তার মা এসে ডাক দিল। জুরাইজ বললঃ হে আমার প্রতিপালক! আমার মা এবং আমার নামায। অর্থাৎ আমি এখন কি করব? আমার মায়ের ডাকে সাড়া দিব? না নামাযে লিপ্ত থাকব? এই বলে সে নামাযের মধ্যে রয়ে গেল। মায়ের ডাকে সাড়া দিলনা। মা ব্যর্থ হয়ে চলে গেল। পরের দিন তার মা আবার আগমণ করল। সেদিনও জুরাইয নামাযে ছিল। তার মায়ের কন্ঠ শুনে সে বললঃ হে আমার প্রতিপালক! আমার মা এবং আমার নামায। অর্থাৎ আমি এখন কি করব? আমার মায়ের ডাকে সাড়া দিব? না নামাযে লিপ্ত থাকব? এই বলে সে নামাযের মধ্যে রয়ে গেল। মায়ের ডাকে সাড়া দিলনা। মা ব্যর্থ হয়ে আজও চলে গেল। তৃতীয় দিনেও তার মা এসে তাকে নামায রত পেল। জুরাইজ তার মার ডাকে সাড়া না দিয়েই নামাযেই রয়ে গেল। এবার তার মা রাগাম্বিত হয়ে জুরাইযের উপর এই বলে বদ্ দু’আ করল যে, হে আল্লাহ! জুরাইয যেন বেশ্যা মহিলার মুখ দেখার পূর্বে মৃত্যু বরণ না করে। বনী ইসরাঈলের মধ্যে জুরাইয এবং তার ইবাদতের সুনাম ছড়িয়ে পড়ল। তাদের মধ্যকার কিছু লোক তাকে পথভ্রষ্ঠ করার জন্য চক্রান- শুরু করল। একজন বেশ্যা মহিলা সেসময় সেজেগোজে ঘুরে বেড়াত। সে প্রস-াব করল যে, তোমরা যদি চাও আমি তাকে গোমরাহ করতে পারি। নবী (সাঃ) বলেন, অতঃপর সেই মহিলা জুরাইযের কাছে গিয়ে নিজেকে পেশ করল। কিন’ জুরাইয সে দিকে কোন ভ্রুক্ষেপই করলনা। জুরাইযের গীর্জায় একজন ছাগলের রাখাল আসা-যাওয়া করত। মহিলাটি জুরাইযের কাছে কোন সুযোগ না পেয়ে রাখালের কাছে গিয়ে তার সাথে খারাপ কাজে লিপ্ত হল। এতে সে গর্ভবতী হয়ে গেল। প্রসব করার পর সে বলল এটি জুরাইযের সন্তান। লোকেরা দলে দলে আগমণ করে জুরাইযকে গীর্জা থেকে টেনে বের করল এবং তার গীর্জাটিও ভেঙ্গে চুরমার করে দিল। লোকেরা মারতে শুরু করল। জুরাইয জিজ্ঞাসা করল, তোমাদের কি হল? আমাকে মারছ কেন? আমার ইবাদতখানাটিই বা কেন ভেঙ্গে ফেললে? লোকেরা বললঃ তুমি এই মহিলার সাথে ব্যভিচার করেছ। যার কারণে মহিলাটি সন্তান প্রসব করেছে। জুরাইয জিজ্ঞাসা করলঃ শিশুটি কোথায়? তারা শিশুটিকে নিয়ে অসল। জুরাইয বলল আমাকে নামায পড়ার জন্য একটু সময় দাও। তারা তাকে নামায পড়ার সুযোগ দিল। নামায শেষ করে শিশুটির কাছে গিয়ে তার পেটে খুচা দিয়ে বললঃ এই ছেলে? তোমার বাপ কে? ছেলেটি বলে দিল, ছাগলের রাখাল।
নবী (সাঃ) বলেন, একথা শুনে লোকেরা আসল তথ্য অনুধাবন করতে পেরে জুরাইযকে চুম্বন করতে শুরু করল এবং তাকে জড়িয়ে ধরল। তারা নিজেদের ভুলের কারণে জুরাইযের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করল এবং বলল আপনি অনুমতি দিলে আমরা আপনার গীর্জাটি স্বর্ণ দিয়ে তৈরী করে দিব। জুরাইয বললঃ স্বর্ণ দিয়ে তৈরী করার দরকার নেই; বরং যেমন ছিল তেমন করেই মাটি দিয়ে তৈরী করে দাও। তারা তাই করল। (মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুয্ যিক্র)
৪, ইবনে উমার (রাঃ) নবী (সাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, অতীত কালে তিনজন লোক পথ চলতেছিল। পথিমধ্যে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। নিরাপদ আশ্রয় হিসাবে তারা একটি পাহাড়ের গুহায় ঢুকে পড়ল। উপর থেকে বিশাল আকারের একটি পাথর গড়িয়ে এসে গুহার মুখ বন্ধ হয়ে গেল। তাদের জন্য বের হওয়ার কোন সুযোগ অবশিষ্ট রইলনা। তাদের একজন অপরজনকে বলতে লাগল, তোমরা প্রত্যেকেই আপন আপন সৎআমল আল্লাহর দরবারে তুলে ধরে তার উসীলা দিয়ে দু’আ কর। এতে হয়ত আল্লাহ আমাদের জন্য বের হওয়ার ব্যবস্থা করে দিবেন।
তাদের একজন বলল, হে আল্লাহ! আমার পিতা-মাতা অতি বৃদ্ধাবস্থায় উপনীত হয়েছিল, আমার কতিপয় শিশু সন্তানও ছিল। আমি ছিলাম তাদের জন্য একমাত্র উপার্জনকারী। আমি প্রতিদিন ছাগল চরানোর জন্য মাঠে চলে যেতাম। বিকালে ঘরে ফেরত এসে দুধ দহন করে আমি প্রথমে পিতা-মাতাকে পান করাতাম, পরে আমার শিশু সন্তানদেরকে পান করাতাম। এটি ছিল আমার প্রতিদিনের অভ্যাস। একদিন ঘাসের সন্ধানে আমি অনেক দূরে চলে গেলাম। এসে দেখি আমার পিতা-মাতা ঘুমিয়ে পড়েছে। আমার অভ্যাসমত আমি দুধ দহন করে দুধের পেয়ালা নিয়ে তাদের মাথার পাশে দাড়িয়ে রইলাম। আমি তাদেরকে ঘুম থেকে জাগ্রত করাকে অপছন্দ করলাম। যেমনভাবে অপছন্দ করলাম পিতা-মাতার পূর্বে সন্তানদেরকে দুধ পান করানোকে। শিশু সন্তানগুলো আমার পায়ের কাছে ক্ষুধার তাড়নায় চিৎকার করতেছিল। এভাবে সারা রাত কেটে গিয়ে ফজর উদীত হল। আমার পিতা-মাতা ঘুম থেকে জাগলেন। আমি তাদেরকে প্রথমে পান করালাম অতঃপর আমার ছেলে-মেয়েদেরকে পান করালাম।
হে আল্লাহ! আপনি অবশ্যই জানেন যে, আমি একাজটি একমাত্র আপনার সন’ষ্টি অর্জনের জন্য সম্পাদন করেছি। এই আমলটির উসীলায় আমাদের জন্য বের হওয়ার রাস্তা করে দিন। এভাবে দু’আ করার সাথে সাথে পাথরটি একটু সরে গেল, তারা আকাশ দেখতে পেল, কিন’ তখনও বের হওয়ার মত রাস্তা হয়নি। দ্বিতীয় ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ! আমার একজন চাচাতো বোন ছিল। সে ছিল আমার কাছে অত্যন্ত প্রিয় এবং একজন পুরুষ কোন মহিলার প্রতি যতদূর আসক্ত হতে পারে, আমি ছিলাম তার প্রতি ততটুকু আসক্ত। আমি তার কাছে আমার মনোবাসনা পেশ করলাম। সে একশত স্বর্ণমুদ্রা দেয়ার শর্তে তাতে সম্মত হল। আমি অনেক পরিশ্রম করে একশত স্বর্ণমুদ্রা সংগ্রহ করে তার কাছে গমণ করলাম। সে সম্মতি প্রকাশ করার পর আমি তার উভয় উরুর মধ্যে বসে পড়লাম। এমন সময় সে বলে উঠল, হে আল্লাহর বান্দা! আল্লাহকে ভয় কর, আমার স্বতীত্ব নষ্ট করোনা। একথা শুনে আমি তাকে ছেড়ে দিলাম।
হে আল্লাহ! আপনি যদি মনে করেন যে, আমি আপনার ভয়ে সেদিন পাপের কাজ থেকে বিরত হয়েছি, তাহলে আজ আমাদেরকে এখান থেকে বের হওয়ার ব্যবস’া করে দিন। সাথে সাথে পাথরটি আরো একটু সরে গেল কিন’ তখনও বের হওয়ার মত রাস্তা হয়নি।
তৃতীয়জন বললঃ হে আল্লাহ! নির্ধারিত বেতনের বিনিময়ে আমি একজন শ্রমিক নিয়োগ করলাম। কাজ শেষ করে সে আমার কাছে পারিশ্রমিক চাইলে আমি তা প্রদান করলাম, কিন’ সে উহা গ্রহণ না করেই চলে গেল। আমি তার প্রাপ্য টাকা বাড়াতে থাকলাম। একপর্যায়ে তা একপাল গরুতে পরিণত হল। আমি গরুগুলো মাঠে চরানোর জন্য একজন রাখালও নিয়োগ করলাম।
অনেক দিন পর সেই লোকটি আমার কাছে এসে তার মজুরী চাইল। আমি বললামঃ তুমি রাখালসহ উক্ত গরুর পালটি নিয়ে চলে যাও। সে বলল, হে আল্লাহর বান্দা! আমার প্রাপ্য দিয়ে দাও এবং আমার সাথে বিদ্রুপ করোনা। আমি বললাম, বিদ্রুপ করি নাই। বরং এগুলো তোমার। আমি তোমার এক দিনের মজুরী দিয়ে এগুলো করেছি। তাই তুমি রাখালসহ গরুর পালটি নিয়ে চল। অতঃপর সে গরুর পালটি নিয়ে চলে গেল। একটিও রেখে যায়নি।
হে আল্লাহ! আপনি যদি মনে করেন যে, আমি আপনার সন’ষ্টির জন্য একাজটি করেছি, তাহলে আজ আমাদেরকে এখান থেকে বের হওয়ার ব্যবস্থা করে দিন। সাথে সাথে পাথরটি সম্পূর্ণরূপে সরে গেল। তারা নিরাপদে সেখান থেকে বের হয়ে এল। (বুখারী, অধ্যায়ঃ আহাদীছুল আম্বীয়া)

বি দ্র: বাকী হাদিস কমেন্টস এ........

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন