শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৪

Hajir najir 3

হাযির-নাযির বিষয়ক হাদীছ সমূহের বর্ণনা
 
 
এখানে সে সমস্ত হাদীছের উল্লেখ করা হবে যেগুলি ইলমে-গায়েব এর মাসআলায় পূর্বেই আলোচিত হয়েছে। সে সব হাদীছের মধ্যে হাদীছ নং ৬, ৭, ৮, ও ৯ বিশেষ উল্লেখযোগ্য। সেগুলোর মূল কথা হল সমস্ত জগতকে আমি হাতের তালুর মত স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। আমার উম্মতকে তাদের নিজ নিজ আকৃতিতে আমার নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল, আমি তাদের নাম, তাদের বাপ-দাদাদের নাম, এমন কি তাদের ঘোড়াসমূহের বর্ণ সম্পর্কেও জ্ঞাত ইত্যাদি। এভাবে ওসব হাদীছের ব্যাখ্যায় হদীছবেত্তাগণের যে সব উক্তি পূর্বে উল্লেখিত হয়েছে, সেগুলো বিশেষ করে মিরকাত যুরকানী ইত্যাদি গ্রন্থের ইবারতসমূহও এখানে বর্ণিত হবে। এ ছাড়া নিম্নে বর্ণিত হাদীছ সমূহও এখানে উপস্থাপন করা হচ্ছে। 
সুবিখ্যাত হদিছ গ্রন্থ মিশকাত শরীফের ইছবাতু আযাবিল কবর শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছে
(১) فَيَقُوْ لَانِ مَاكُنْتَ تَقَوْلُ فِىْ هذَا الرَّجُلِ  لِمُحَمَّدٍ
মুনকার নকীর ফিরিশতাদ্বয় কবরে শাযিত  মৃত ব্যাক্তিকে জিজ্ঞাসা করবেন ওনার (মুহা্ম্মদ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্পর্কে তুমি কি ধারনা পোষন করতে?
হাদিছের সুবিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ আশআতুল  লমআত-এ উক্ত হাদীছ
ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে- هذَا الرَّجُلِ দ্বারা হুযুর আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিএ গুণাবলী সও্বার প্রতীই নিদের্শ হয়ে থাকে ।
উক্ত ব্যাখ্যায় গ্রন্থে এ হদীছের ব্যাখ্যায় আরো বলা হয়েছেঃ কিংবা কবরের মধ্যে হুযুর আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র সত্ত্বাকে দৃশ্যতঃ উদ্ভাসিত করা হয়। এটা এভাবেই হয় যে কবরে তার জিসমে মিছালীকে  উপস্থাপন করা হয়। এখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম এর দিদারে প্রত্যাশী চিন্তীত ব্যাক্তিবর্গের জন্য এটাই শুভ সংবাদ যে তারা যদি এ প্রত্যাশিত সাক্ষাতের আশায় প্রাণ বির্সজন দিয়ে কবরে চলে যান তাহলে তাদেরও এ সুযোগ রয়েছে ।
মিশকাত শরীফের হাশিয়ায় সে একই হাদিছের ব্যাখ্যায় উল্লেখিত আছে-
قِيْلَ يُكْشَفُ لِلْمَيِّتِ حَتَّى يَرَى النَّبِىَّ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَهِىَ بُشْرَى عَظِيْمَةٌ
বলা হয়েছে মৃত ব্যাক্তির দৃষ্টি থেকে আবরণ উঠিয়ে নেয়া হয়, যার ফলে সে নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে দেখতে পায়। এটা তার জন্য বড়ই শুভ সংবাদ ।
সুপ্রসিদ্ধ বুখারী শরীফের ব্যাখ্যায় গ্রন্থ কুসতলানীর ৩য় খন্ডে ৩৯০ পৃষ্টায় কিতাবুল জানায়েযে বর্নিত আছেঃ
فَقِيْلَ يُكْشَفُ لِلْمَيِّتِ حَتَّى يَرىَ النَّبِىَّ عَلَيْهِ السَّلَامَ وَهِىَ بَشْرَى عَظِيْمَةٌ لِلْمُؤْمِنِ اِنْ صَحَّ
অর্থাৎ এও বলা হয়েছে যে মৃত ব্যক্তির দৃষ্টির আবরণ অপসারণ করা হয় যার দরুণ সে নবী আলাইহিস সালামকে দেখতে পায়। এটি মুসলমানদের জন্য বড় সুখের বিষয় যদি সে সঠিক পথে থাকে।
কেউ কেউ উক্ত হাদীছে উল্লেখিত هذَا الرَّجُلِ (এ ব্যক্তি) বলে হৃদয় ফলকে অংকিত হুযুর আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানসিক প্রতিচ্ছবির প্রতি ইঙ্গিত করা হয় বলে মত পোষন করেন। অথাৎ মৃত ব্যাক্তিকে ফিরিশতাগন জিজ্ঞাসা করেনঃ তোমরা অন্তরে যে মহান সও্বার প্রতিচ্ছবির বিদ্যমান রয়েছে, তার সর্ম্পকে তুমি কি ধারনা পোষন করতে? কিন্তু এ ধারণা ঠিক নয়। কেননা সেক্ষেত্রে মৃত কাফীর ব্যাক্তিকে এ প্রশ্ন করান যৌক্তিকতা কোনরূপ থাকেনা। কারণ, কাফিরের অন্তরে হুযুর আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে কোনরূপ ধারনা থাকার কথা নয়। অধিকন্তু, তা যদি হত মৃত কাফিরের সে  প্রশ্নরে উত্তরে বলত না আমি জানি না বরং বলত আপনারা কার কথা  জিজ্ঞাসা করছেন? উওরে তার لَااَدْرِىْ আমি জনি না (বলার ব্যাপারে)  থেকে জানা যায় যে সেও হুজুর আলাইহিস সালাম  স্বচক্ষে দেখে তবে চিনতে বা পরিচয় করতে পারে না। সুতরাং উক্ত প্রশ্নে মানসিক কোন প্রতিচ্ছবির কথা   জিজ্ঞাসা করা হয় না বরং প্রকাশ্যে বিরাজমান সেই মহান সও্বার প্রতি ইঙ্গিত করেই প্রশ্ন করা হয়।
এ হাদিছও সংশ্লিষ্ট উদ্বৃতিসমূহ থেকে জানা যায় যে কবরের মধ্যে হুযুর আলাইহিস সালামের দিদার লাভের সু-বন্দোবস্ত করেই আলোচ্য প্রশ্নের অবতারনা করা হয়। এ শামসুদ্দোহা বদরুদ্দুজা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিনি তোমার সামনেই দৃশ্যমান আছেন তার সম্পর্কে তোমার কি মত? هذَا (এই) সর্বনাম দ্বারা নিকটবর্তী ব্যাক্তি বা বস্তুর প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়ে থাকে । এতে বোঝা যায় হুজুর আলাইহিস সালামকে দেখিয়ে ও নিকটে উপস্থাপন করেই উক্ত প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়। এজন্য  সুফিয়ানে কিরামও আশেকানগন মৃত্যুর প্রত্যাশা করে থাকেন ও কবরের প্রথম রজনীকে বরের সঙ্গে প্রত্যাশিত সাক্ষাতের রাত রূপে গণ্য করেন। যেমন   আলা হযরত (রহঃ) বলেন- প্রানতো চলে যাবেই। এ প্রান  যাবার ব্যাপারটি হচ্ছে কিয়ামত। তবুও সুখের বিষয় যে এরপর প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহি আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাক্ষাত লাভের অপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করার সুবন্দোস্ত  রয়েছে । মৌলানা আসী  বলেন- কবরে গমনের প্রথম রাতে কাফন পরিহিত অবস্থায় এজন্য গর্ববোধ করব যে, যে ফুলের (প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সন্নিধ্য লাভের সারাজীবন প্রত্যাশী হয়ে আসছি আজ রাতই হচ্ছে সে মহান সে ফুলের সংস্পর্শ আমার প্রকৃষ্ট সময়।
আমি আমার রচিত দিওয়ানে সালেক  কাব্য গ্রন্থে লিখেছি-
কবরে প্রথম রাত হচ্ছে মহান রবের (প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দর্শন লাভের সৌভাগ্য রজনী। একজন আশেক এর জন্য ঈদের আনন্দও এ রাত্রির অপুর্র আনন্দের কাছে মূল্যহীন। এ রাতেই প্রিয়জনের সান্নিধ্য লাভের অনাস্বাদিত  সুখানুভূতি ভাষায় ব্যক্ত করা যায় না।
এজন্যই বুযুর্গানে দ্বীনের পরলোক গমনের দিনকে বলা হয় উরসের দিন। উরস শব্দের অর্থ শাদী বা আনন্দ। ঐ দিনই হচ্ছে দু’জাহানের দুলহা উরস হুযুর আলাইহিস সালামের দর্শন লাভের দিন।
লক্ষ্যণীয় যে  একই সময় হাজার  হাজার মৃত ব্যাক্তির লাশ দফন করা হয়ে থাকে । হুজুর আলাইহিস সালাম যদি হাযির-নাযির না হন তাহলে, তিনি প্রতিটি কবরে উপস্থীত থাকেন কি রূপে? অতএব প্রমানিত হল যে, আমাদের দৃষ্টির উপরই আবরন বা পর্দা রয়েছে ফিরিশতাগন এ পর্দা অপসারন করে দেন। যেমন কেউ দিনে তাবুর মধ্যে অবস্থান  করেছে বিধায় সূর্য তার দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না, এমন সময়  কেউ এসে উপর থেকে তাবু হটিয়ে তাকে সূর্য দেখিয়ে দিল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন