শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৪

Hajir najir bye kazi bhai 2

উপরোক্ত ভাষ্য নিম্নের প্রামাণিক দলিল দ্বারা সুন্নাহ হিসেবে আরও পাকাপোক্ত হয়:

/ -- হুযূর পাক (দ:) তাঁর বরযখ থেকে উম্মতের সকল কাজ-কর্ম প্রত্যক্ষ করার ব্যাপারে হযরত ইবনে মাসউদ (রা:)-এর নির্ভরযোগ্য বর্ণনা:

রাসূলুল্লাহ (দ:) এরশাদ ফরমান, “আমার হায়াতে জিন্দেগী তোমাদের জন্যে উপকারী, তোমরা তা বলবে এবং তোমাদেরকেও তা বলা হবে। আমার বেসাল শরীফও তদনুরূপ। তোমাদের আমল (কর্ম) আমাকে দেখানো হবে; তাতে ভাল দেখলে আমি আল্লাহর প্রশংসা করবো। আর যদি বদ আমল দেখি তাহলে আল্লাহর দরবারে তোমাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করবো।” (হায়াতী খায়রুল্লাকুম তুহাদ্দিসুনা ওয়া ইউহাদ্দাসু লাকুম ওয়া ওয়াফাতী খায়রুল্লাকুম তু’রাদু আ’মালুকুম ’আলাইয়া ফামা রায়াইতু মিন খায়রিন হামিদতু আল্লাহা ওয়া মা রায়াইতু মিন শাররিন এসতেগফারতু আল্লাহা লাকুম) [নোট-৫: হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) থেকে আল-বাযযার নিজ ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে (১:৩৯৭) এটা বর্ণনা করেন নির্ভরযোগ্য সনদে, যার সমর্থন রয়েছে ইমাম সৈয়ুতীর ‘মানাহিল আল-সাফা’ (পৃষ্ঠা ৩১ #৮) এবং ‘আল-খাসাইস আল-কুবরা’ (২:২৮১) কেতাবগুলোতে, আল-হায়তামী (৯:২৪ #৯১), এবং আল-ইরাকীর শেষ বই ‘তারহ আল-তাসরিব’ (৩:২৯৭)-এ, যা আল-বাযযারের এসনাদে জনৈক বর্ণনাকারীর নির্ভরযোগ্যতা সম্পর্কে তাঁরই উত্থাপিত আপত্তিসম্বলিত ‘আল-মুগনিয়ান হামল আল-আসফার’ গ্রন্থের (৪:১৪৮) খেলাফ। শায়খ আবদুল্লাহ আল-তালিদী তাঁর ‘তাহযিব আল-খাসাইস আল-কুবরা’ পুস্তকে (পৃষ্ঠা ৪৫৮-৪৫৯ #৬৯৪) বলেন যে এর সনদ ইমাম মুসলিমের মানদণ্ড অনুযায়ী নির্ভরযোগ্য; আর শায়খ মাহমূদ মামদুহ স্বরচিত ’রাফ’ আল-মিনারা’ কেতাবে (পৃষ্ঠা ১৫৬-১৬৯) এ সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করে একে সহীহ সাব্যস্ত করেন। তাঁদের দু’জনের শায়খ (পীর) আল-সাইয়্যেদ আবদুল্লাহ ইবনে আস্ সিদ্দিক আল-গোমারী (বেসাল-১৪১৩ হিজরী/১৯৯৩) তাঁর একক বিষয়ভিত্তিক ‘নেহায়া আল-আমল ফী শরহে ওয়া তাসহিহ হাদীস ‘আরদ আল-আমল’ গ্রন্থে এই বর্ণনাকে বিশুদ্ধ বলেছেন। এই ছয় বা তারও বেশি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আল-আলবানী ইমাম কাজী ইসমাইলের রচিত ‘ফযল আল-সালাত’ বইটির ওপর লিখিত হাশিয়া বা নোটে (পৃষ্ঠা ৩৭, নোট-১) এই রওয়ায়াতকে দুর্বল বলেছে। দুর্বল সনদসমূহে হযরত আনাস (রা:) হতে এবং উত্তরাধিকারী বকর ইবনে আব্দিল্লাহ আল-মুযানী হতে সাহাবীর সনদবিহীন দুটো বিশুদ্ধ মুরসাল বর্ণনায় ইসমাইল আল-কাজী (বেসাল-২৮২ হিজরী) এটা উদ্ধৃত করেন নিজ ’ফযল আস-সালাত আলান-নবী’ পুস্তকে (পৃষ্ঠা ৩৬-৩৯ #২৫-২৬)। শেষোক্ত সনদটিকে বিশুদ্ধ বলেছেন মোল্লা আলী কারী তাঁর ‘শরহে শেফা’ কেতাবে (১:১০২); শায়খুল ইসলাম ইমাম তাকিউদ্দীন সুবকী স্বরচিত ‘শেফাউস্ সেকাম’ পুস্তকে এবং তাঁর সমালোচক ইবনে আবদ আল-হাদীর কৃত ‘আল-সারিম আল-মুনকি’ বইয়ে (পৃষ্ঠা ২১৭); এবং আল-আলবানী নিজ ‘সিলসিলা দায়িফা’ গ্রন্থে (২:৪০৫)। তৃতীয় আরেকটি দুর্বল সনদে বকর আল-মুযানী থেকে এটা বর্ণনা করেন আল-হারিস ইবনে আবি উসামা (বেসাল-২৮২ হিজরী) তাঁর ’মুসনাদ’ কেতাবে (২:৮৮৪) যা উদ্ধৃত হয়েছে ইবনে হাজরের ‘আল-মাতালিব আল-আলিয়্যা’ পুস্তকে (৪:২৩); আল-মানাবীর রচিত ‘ফায়য আল-কাদির’ (৩:৪০১ #৩৭৭১) কেতাবেও উদ্ধৃত হয়েছে যে ইবনে সা’আদ এটা তাঁর ‘তাবাকাত’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। ইমাম কাজী আয়ায নিজ ‘শেফা’ পুস্তকে (পৃষ্ঠা ৫৮ #৬) এবং আস্ সাখাভী তাঁর ‘আল-কওল আল-বদী’ বইয়ে এটা উদ্ধৃত করেন। আল-আলবানী একে দুর্বল বলার কারণ হিসেবে দেখায় যে কতিপয় হাদীসের বিশারদ মুরজি’ হাদীসবেত্তা আবদুল মজীদ ইবনে আবদিল আযীয ইবনে আবি রাওওয়াদের স্মৃতিশক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তবে ইমাম মুসলিম নিজ সহীহ গ্রন্থে তাঁর সনদ বহাল রাখেন; আর এয়াহইয়া ইবনে মা’ঈন, ইমাম আহমদ, আবু দাউদ, আন্ নাসাঈ, ইবনে শাহীন, আল-খলিলী ও আদ্ দারু কুতনী তাঁকে ‘সিকা’ হিসেবে ঘোষণা দেন; অপর দিকে শায়খ মামদুহ প্রণীত ‘রাফ’ আল-মিনারা’ (পৃষ্ঠা ১৬৩, ১৬৭) কেতাবে বিবৃত হয়েছে যে আয্ যাহাবী তাঁকে নিজ ‘মান তুকুল্লিমা ফীহি ওয়া হুয়া মুওয়াসসাক’ (পৃষ্ঠা ১২৪) পুস্তকে তালিকাবদ্ধ করেন। আল-আরনাওত এবং মা’রুফ তাঁর ‘তাহরির আল-তাকরিব’ গ্রন্থে (২:৩৭৯ #৪১৬০) তাঁকে ‘সিকা’ হিসেবে ঘোষণা করেন; এর পাশাপাশি একই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন ড: নূরুদ্দীন ‘এতর যা উদ্ধৃত হয়েছে তাঁর কৃত আয্ যাহাবীর ‘মুগনী’ সংস্করণে (১:৫৭১ #৩৭৯৩) এবং ড: খালদুন আল-আহদাব নিজ ‘যাওয়াইদ তারিখ বাগদাদ’ পুস্তকে (১০:৪৬৪)। যদি আল-আলবানী কর্তৃক রওয়ায়াতটির এই নিম্ন পর্যায়ভুক্তিকে তর্কের খাতিরে মেনেও নেয়া হয়, তথাপিও দুর্বল মুসনাদ বর্ণনাটির সাথে নির্ভরযোগ্য অপর মুরসাল বর্ণনা যাকে সহীহ বলেছে আলবানী স্বয়ং, তার সমন্বয় সাধন করলে ’হাসান’ বা ’সহীহ’ হিসেবে এটা চূড়ান্ত মান অর্জন করে, এবং মোটেও ‘যয়িফ’ সাব্যস্ত হয় না। উপরন্তু,  শায়খ ইসমাইল আল-আনসারীকে খণ্ডন করার চেষ্টায় আলবানী যে ’কিতাব আল-শায়বানী’ শীর্ষক বই (১:১৩৪-১৩৫) লিখে, তা থেকে শায়খ মামদুহ আলবানীর নিজের কথাই উদ্ধৃত করেন: “নির্ভরযোগ্য মুরসাল হাদীস চার মযহাবে প্রামাণ্য দলিল হিসেবে গৃহীত এবং এ ছাড়াও উসূলে হাদীস ও উসূলে ফেকাহর ইমামদের কাছে গ্রহণযোগ্য। অতএব, এটা প্রত্যেক যুক্তিসঙ্গত চিন্তাধারার মানুষের কাছে সুস্পষ্ট যে কেবল মুরসাল হওয়ার কারণে এ ধরনের হাদীস দলিল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয় বলাটা-ই সমর্থনযোগ্য নয়।” আলবানীর স্ববিরোধিতাই শুধু নয়, তার নিজেকে নিজে পূর্ণ খণ্ডনের বহু উদাহরণেরও একটি এটি।



শায়খ হাসানাইন মোহাম্মদ মাখলুফ তাঁর প্রণীত ‘ফাতাওয়া শরীয়্যা’ (১:৯১-৯২) গ্রন্থে লিখেন: “এই হাদীস বোঝায় যে মহানবী (দ:) তাঁর হায়াতে জিন্দেগীতে তাঁরই উম্মতের জন্যে এক বৃহৎ কল্যাণ, কেননা মহানবী (দ:)-এর উপস্থিতির গোপন রহস্য দ্বারা আল্লাহতা’লা এই উম্মতকে পথভ্রষ্টতা, বিভ্রান্তি ও মতানৈক্য হতে রক্ষা করেছেন এবং তাঁরই মাধ্যমে সুস্পষ্ট সত্যের দিকে মানুষকে পরিচালিত করেছেন; আর মহানবী (দ:)-কে নিজের কাছে ফিরিয়ে নেয়ার পরও তাঁর সদগুণ ও কল্যাণময়তার সাথে আমাদের সম্পৃক্ততা অবিচ্ছিন্ন রয়েছে এবং তাঁর এই উপকারিতা সম্প্রসারিত আকারে আমাদেরকে ছেয়ে আছে। তাঁর উম্মতের কর্ম (আমল) তাঁকে প্রতিদিন দেখানো হয়, আর ভাল দেখলে তিনি আল্লাহর প্রশংসা করেন; ছোট পাপগুলোর জন্যে তিনি আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনার পাশাপাশি বড় পাপগুলো যাতে না হয় তার জন্যেও দোয়া করেন; এটা আমাদের জন্যে পরম ভালাই। অতএব, ‘তাঁর প্রকাশ্য জিন্দেগীতে যেমন উম্মতের জন্যে মঙ্গল বিদ্যমান, তেমনি তাঁর বেসালের পরও তা জারি আছে।’ অধিকন্তু, হাদীসের দ্বারা সাবেত (প্রমাণিত) যে তিনি তাঁর মোবারক রওযায় এক বিশেষ ’অন্তর্বর্তীকালীন’ জীবনে জীবিত যা আল-কুরআনের একাধিক আয়াতে বর্ণিত শহীদদের পরকালীন জীবনের চেয়েও অনেক শক্তিশালী। এই দুই ধরনের পরকালীন জীবনের প্রকৃতি এর দাতা, মহান আল্লাহতা”লা ছাড়া জানা সম্ভব নয়। আল্লাহ সব কিছুই করতে সক্ষম। মহানবী (দ:)-এর প্রতি সম্মানসূচক উপহার হিসেবে তাঁরই উম্মতের সকল আমল ও উম্মতকে তাঁর সামনে দৃশ্যমান করার ব্যাপারটি পুরোপুরিভাবে যুক্তিগ্রাহ্য এবং তা (সহীহ) রওয়ায়াতেও এসেছে। এর অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই; আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে তাঁর নূরের (জ্যোতির) দিকে হেদায়াত দেন; আর আল্লাহ-ই সবচেয়ে ভাল জানেন।”]

/ -- ’আল-মালাউল আলা’ (ঐশী সান্নিধ্য) সম্পর্কে হযরত মু’য়ায ইবনে জাবাল (রা:) ও অন্যান্যদের বর্ণিত বিশুদ্ধ হাদীস:

রাসূলুল্লাহ (দ:) এরশাদ ফরমান, ”আমার প্রভু সুন্দরতম সুরতে আমার কাছে আসেন”; বর্ণনাকারী এ পর্যায়ে বলেন, “আমার মনে হয় তিনি বলেছিলেন, ‘আমার স্বপ্নে’।” অতঃপর মহানবী (দ:) আরও এরশাদ ফরমান, “আল্লাহতা’লা আমাকে জিজ্ঞেস করেন, ’আল-মালাউল আলা’-এর মানে কী [নোট-৬: অর্থাৎ, ‘ফেরেশতাকুল যাঁদের ঐশী সান্নিধ্য দেয়া হয়েছে’; এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন ইবনে আল-আসির তাঁর ‘আন্ নেহায়া’ পুস্তকে, যা অন্যান্যরাও ব্যক্ত করেছেন]। আমি বল্লাম, আমি জানি না। এমতাবস্থায় তিনি আমার দুই কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে তাঁর হাত মোবারক রাখেন, আর আমি আমার অন্তঃস্থলে এক স্নিগ্ধ পরশ অনুভব করি; অতঃপর পূর্ব থেকে পশ্চিমে অবস্থিত যাবতীয় জ্ঞান আমার অধিকারে আসে।” [নোট-৭: এই হাদীস ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করেন তিনটি সনদে, যার দু’টি হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে। ইমাম তিরমিযী ওই দুটোর প্রথমটিতে বলেন, ‘আসমান ও জমিনে অবস্থিত সব কিছুর জ্ঞান’; দ্বিতীয়টিকে তিনি ‘হাসান গরিবের’ পর্যায়ভুক্ত করেন। অপর এসনাদ এসেছে হযরত মু’য়ায ইবনে জাবাল (রা:) থেকে (হাসান সহীহ হিসেবে), যা সুস্পষ্টভাবে বিবৃত করে যে এটা ঘটেছিল হুযূর পাক (দ:)-এর স্বপ্নে। আল-বুখারী পরের এসনাদকে ‘হাসান সহীহ’ হিসেবে ঘোষণা দেন, যা আত্ তিরমিযী তাঁর ’সুনান’ ও ‘এলাল’ গ্রন্থ দুটোতে বর্ণনা করেছেন; আর ইবনে হাজর কৃত ‘আল-এসাবা’ গ্রন্থে (২:৩৯৭) ব্যক্ত মতানুযায়ী এটা অন্যান্য সব সনদ থেকে শ্রেয় এই কারণে যে এর সম্পর্কে মুহাদ্দীসবৃন্দের মধ্যে কোনো মতানৈক্য নেই (দেখুন - ‘আসমা’ হাশেদী সংস্করণ ২:৭৮)। শাকির ও আল-যাইনের বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত শিথিল মানদণ্ড অনুযায়ী ইমাম আহমদও চারটি নির্ভরযোগ্য সনদে এটা বর্ণনা করেছেন: ওগুলোর একটি হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে যার মধ্যে যুক্ত ছিল এই কথা - “আমার মনে হয় তিনি বলেছিলেন, ‘আমার স্বপ্নে’” (শাকির সংস্করণ ৩:৪৫৮ #৩৪৮৪=আল-আরনাওত সংস্করণ ৫:৪৩৭-৪৪২ #৩৪৮৩ এসনাদুহু যাইফ); হযরত মু’য়ায (রা:) থেকে অপর এক রওয়ায়াত যা ইবনে ‘আদীর ’আল-কামিল’ (৬:২২৪৪) গ্রন্থের ভাষ্যানুযায়ী ইমাম আহমদ সুস্পষ্টভাবে সহীহ ঘোষণা করেছেন এবং তাতে এই বক্তব্যও যুক্ত ছিল, “ঘুম থেকে জেগে দেখি আমি আমার প্রভুর সান্নিধ্যে” (আল-যাইন সংস্করণ ১৬:২০০ #২২০০৮); আর অবশিষ্ট দুটো নামহীন সাহাবীদের বরাতে বর্ণিত যার মধ্যে মহানবী (দ:)-এর ঘুমে না জাগ্রতাবস্থায় তা উল্লেখিত হয় নি (আল-যাইন সংস্করণ ১৩:৯৩-৯৪ #১৬৫৭৪=আল-আরনাওত সংস্করণ ২৭:১৭১-১৭৪ #১৬৬২১ ইসনাদুহু যাইফ মুদতারিব; আল-যাইন সংস্করণ ১৬:৫৫৬ #২৩১০৩)। শেষোক্ত এসনাদকে আল-হায়তামী নির্ভরযোগ্য বলেছেন এবং এর পাশাপাশি আত্ তাবারানী কর্তৃক ‘আল-কবীর’ গ্রন্থে (২০:১০৯ #২১৬, ২০:১৪১ #২৯০) উদ্ধৃত ও আল-বাযযার প্রণীত ‘মুসনাদ’ কেতাবে বর্ণিত অন্যান্য রওয়ায়াতকেও তিনি তা-ই বলেছেন; আর তিনি আত্ তাবারানীর ‘আল-কবীর’ (৮:২৯০ #৮১১৭) গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আবু উমামা (রা:)-এর এসনাদকেও ‘হাসান’ বলেছেন। এর জন্যে দেখুন ‘মজমাউল যাওয়াইদ’ (৭:১৭৬-১৭৯)। আত্ তিরমিযী ও ইমাম আহমদের সাতটি রওয়ায়াতকে শায়খ আবদুল কাদের ও শায়খ শু’য়াইব আল-আরনাওত সহীহ বলেছেন ইবনে আল-কাইয়েমের ‘যাদ আল-মা’আদ’ (৩:৩৩-৩৪, নোট-৪) গ্রন্থের ওপর কৃত তাঁদের সংস্করণে। হযরত জাবের ইবনে সামুরা (রা:) থেকে ইবনে আবি ‘আসিমও নিজ ‘আস্ সুন্নাহ’ (পৃষ্ঠা ২০৩ #৪৬৫) পুস্তকে এই হাদীস বর্ণনা করেন যার সনদ আলবানীর মতে ’হাসান’। হযরত আবদুর রহমান ইবনে ‘আইশ (রা:) থেকে এটা আরও বর্ণনা করেছেন আদ্ দারিমী নিজ ‘মুসনাদ’ (২:১৭০ #২১৪৯) কেতাবে এবং দুটো এসনাদে আত্ তাবারানী স্বরচিত ‘আল-আহাদ ওয়াল মাসানী’ (৫:৪৮-৫০ #২৫৮৫-২৫৮৬) বইয়ে; এ ছাড়াও অপর এক সনদে তাঁর ‘মুসনাদ আল-শামিয়ীন’ পুস্তকে (১:৩৩৯ #৫৯৭)। হযরত উম্মে আত্ তোফায়েল (রা:) থেকেও আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-আহাদ’ (৬:১৫৮ #৩৩৮৫) গ্রন্থে আরেকটি বর্ণনা এনেছেন যা ঘোষণা করে, “আমি আমার প্রভুকে দাড়িবিহীন যুবকের সুন্দরতম সুরতে দেখেছি”। তবে এই বর্ণনা আয্ যাহাবী তাঁর কৃত ‘তাহযিব আল-মওদু’আত’ (পৃষ্ঠা ২২ #২২) বইয়ে প্রত্যাখ্যান করেন। এটা সাহাবী হযরত আবু রাফি’ (রা:) থেকে (আল-এসাবা ৭:১৩৪ #৯৮৭৫) আত্ তাবারানী উদ্ধৃত করেন স্বরচিত ‘আল-কবীর’ গ্রন্থে  (১:৩১৭ #৯৩৮)। আবু এয়ালা-ও তাঁর ‘মুসনাদ’ (৪:৪৭৫ #২৬০৮) কেতাবে এই বর্ণনা উদ্ধৃত করেন হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে। এই হাদীসের কিছু ’হাসান’ পর্যায়ের বর্ণনায়, উদাহরণস্বরূপ হযরত আবদুর রহমান ইবনে আইয়্যাশ (রা:) হতে আত্ তাবারানী এবং হযরত আবু উবায়দা ইবনে আল-জাররাহ (রা:) হতে আল-খতীব নিজ ‘তারিখে বাগদাদ’ (৮:১৫১), ’আমার প্রভু আমার কাছে আসেন’ এই কথাটির পরিবর্তে ‘আমি আমার প্রভুকে দেখি’ বাক্যটি যুক্ত আছে; এরই ভিত্তিতে ইবনে কাসীরের সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠিত, যা ইতিপূর্বে উদ্ধৃত হয়েছে। আল-আহদাব নিজ ‘যাওয়াইদ তারিখ বাগদাদ’ (৬:২৫১-২৫৩) গ্রন্থে এবং আল-হায়তামীও সর্ব-হযরত আবু উবায়দা ইবনে আল-জাররাহ (রা:), ইবনে উমর (রা:), আবু হুরায়রা (রা:), আনাস (রা:), সওবান (রা:) ও আবু উমামা (রা:)-এর বরাতে এই হাদীস বর্ণনা করেন, যার ফলে অন্ততঃ এগারোজন সাহাবীর (উম্মে আত্ তোফায়েল বাদে) সূত্র এতে রয়েছে। এই হাদীসের বিভিন্ন সনদ ও বর্ণনার তুলনামূলক বিচার-বিশ্লেষণ এবং এর ওপর আলোচনা করেছেন ইবনে রাজাব তাঁর একক বিষয়ভিত্তিক ’এখতেয়ার আল-আওলা ফী শরহে হাদীস এখতেসাম আল-মালা’ আল-’আলা’ গ্রন্থে (জাসিম আল-দাওসারী সংস্করণ, কুয়েত, দারুল্ আকসা, ১৪০৬)। আরও দেখুন ‘ইবনে আসির কৃত ‘জামে’ আল-উসূল’ (৯:৫৪৮-৫৫০)। এই হাদীসকে সহীহ-মানের চেয়ে নিম্ন পর্যায়ের যাঁরা বিবেচনা করেছেন তাঁরা হলেন আল-বায়হাকী নিজ ‘আল-আসমা’ ওয়া আল-সিফাত’ (কাওসারী সংস্করণ পৃষ্ঠা ৩০০, হাশিদী সংস্করণ ২:৭২-৭৯) কেতাবে, ইবনে আল-জাওযী স্বরচিত ‘আল-এলাল আল-মুতানাহিয়া’ (১:৩৪) পুস্তকে, ইবনে খুযাইমা তাঁর আত্ তাওহীদ (পৃষ্ঠা ২১৪-২২১) বইয়ে এবং আদ্ দারু কুতনী নিজ ‘এলাল’ (৬:৫৬) গ্রন্থে। আস্ সাককাফ এতো দূর গিয়েছিলেন যে তিনি ইবনে আল-জাওযীর ‘দাফ’ শুবাহ আত্ তাশবিহ’ পুস্তকের ওপর নিজস্ব সংস্করণে এই হাদীসকে বানোয়াট বলেছেন - ‘আকওয়াল আল-হুফফায আল-মানসুরা লি বয়ান ওয়াদ’ হাদীস রায়াইতু রাব্বী ফী আহসানি সুরা’।]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন