শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৪

Hajir najir bye kazi bhai 6

ইবনে কাইয়েম আল-জওযিয়া নিজ ‘কিতাবুর্ রূহ’ বইয়ে লিখে:

”প্রকৃতপক্ষে, জীবিত ও মৃতদের রূহ একত্রিত হওয়ার বিষয়টিও সত্য-স্বপ্নেরই রকম-বিশেষ, যেটা মানুষের কাছে অনুভূত বিষয়সমূহের সমশ্রেণীর। তবে এ বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে।

”কারো কারো মতে রূহের মধ্যে সর্বপ্রকার এলম্ (জ্ঞান) বিদ্যমান। কিন্তু জ্ঞানী ব্যক্তিদের পার্থিব কর্মচাঞ্চল্য ও ব্যস্ততা ওই জ্ঞান অর্জনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। তবে নিদ্রাবস্থায় যখন কোনো রূহ সাময়িকভাবে দেহ থেকে বের হয়ে যায়, তখন তা আপন যোগ্যতা ও মর্যাদা অনুযায়ী অনেক বিষয় অবলোকন করে থাকে। আর যেহেতু মৃত্যুজনিত কারণে দেহ থেকে রূহ পুরোপুরি মুক্তি লাভ করে, সেহেতু রূহ জ্ঞান ও চরম উৎকর্ষ লাভ করে। কিন্তু এর মধ্যেও কিছু সত্য ও কিছু ভ্রান্তির অবকাশ রয়েছে। কেননা, মুক্তিপ্রাপ্ত রূহ ছাড়া ওই সব জ্ঞান লাভ করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়।

”কোনো রূহ পুরোপুরি মুক্তি লাভ করা সত্ত্বেও আল্লাহর ওই সব জ্ঞান সম্পর্কে অবহিত হতে পারে না, যেগুলো তিনি তাঁর রাসূল (আ:)-বৃন্দকে প্রদান করে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। আর রূহ পূর্ববর্তী নবী (আ:) ও তাঁদের কওমের বিস্তারিত কোনো তথ্য, যেমন - পরকাল, কিয়ামতের আলামত, কোনো কাজের ভাল-মন্দ ফলাফল, আল্লাহর আদেশ-নিষেধের বিবরণ, আল্লাহ পাকের আসমাউল হুসনা (সুন্দর নামসমূহ), আল্লাহর গুণাবলী, কার্যাবলী ও শরীয়াতের বিস্তারিত বিষয়াদিও জানতে পারে না। কেননা, এ সমস্ত বিষয় শুধু ওহী বা ঐশী প্রত্যাদেশের মাধ্যমে জানা যায়। মুক্তিপ্রাপ্ত রূহের পক্ষে এসব বিষয় জানা সহজ হয়ে ওঠে। তবে ওহীর মাধ্যমে যে জ্ঞান লাভ করা যায়, সেটাই শ্রেষ্ঠ ও সঠিক।” [ইবনে কাইয়েম আল-জওযিয়া কৃত ‘কিতাবুর রূহ’ (১৯৭৫ সংস্করণের ৩০ পৃষ্ঠা; মওলানা লোকমান আহমদ আমীমীর অনূদিত বাংলা সংস্করণের ৪৯ পৃষ্ঠা, ১৯৯৮)।]

’মীলাদ মাহফিলে মহানবী (দ:) আসেন মর্মে বিশ্বাস’ (The Belief that the Prophet Comes to the Milad Meeting) শীর্ষক একটি ওয়েবসাইটে আরেকটি আপত্তি উত্থাপন ও প্রচার করা হয়েছিল, যা নিম্নরূপ:

”কিছু মানুষ বিশ্বাস করেন যে রাসূলুল্লাহ (দ:) মীলাদের মাহফিলে আসেন, আর এই বিশ্বাসের কারণে তাঁরা সম্মানার্থে উঠে দাঁড়ান। এটা একেবারেই মিথ্যা। রাসূলুল্লাহ (দ:) কোনো ঈদে মীলাদ আন্ নবী (দ:) মাহফিলেই আগমন করেন না। তিনি মদীনা মুনাওয়ারায় তাঁর রওযা মোবারকে অবস্থান করছেন এবং ’এয়াওমুল কেয়ামাহ’ তথা কেয়ামত দিবসে (শেষ বিচার দিনে) সেখান থেকে উঠবেন.......নিচের আয়াত ও হাদীস এর সাক্ষ্য বহন করে: রাসূলুল্লাহ (দ:)-কে সম্বোধন করে আল-কুরআনে সুস্পষ্ট এরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় আপনাকেও বেসালপ্রাপ্ত (পরলোকে আল্লাহর কাছে গমন) হতে হবে এবং তাদেরকেও মরতে হবে। অতঃপর তোমরা কেয়ামত দিবসে আপন প্রতিপালকের সামনে ঝগড়া করবে’ (সূরা যুমার, ৩০-৩১ আয়াত)। অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (দ:)-কে সমগ্র মানব জাতির সাথে একযোগে সম্বোধন করা হয়েছে এভাবে - ‘অতঃপর তোমরা এরপরে অবশ্যই মরণশীল। অতঃপর তোমাদের সবাইকে কেয়ামতের দিন পুনরুত্থিত করা হবে’ (সূরা মু’মিনূন, ১৫-১৬ আয়াত)। মহানবী (দ:) স্বয়ং একটি হাদীসে বলেন, ‘কেয়ামত দিবসে আমার রওযা-ই সর্বপ্রথম খোলা হবে এবং আমি-ই সর্বপ্রথম শাফায়াত করবো, আর আমার সুপারিশও সর্বপ্রথম গৃহীত হবে।’ এ সকল আয়াত ও হাদীস (অনুরূপ অন্যান্য দলিলসহ) প্রমাণ করে যে কেয়ামত দিবসে গোটা মানব জাতিকে কবর থেকে পুনরুত্থিত করা হবে, আর রাসূলুল্লাহ (দ:)-ও এর ব্যতিক্রম নন। এ বিষয়ে পুরো উম্মতের এজমা তথা ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।” [নোট-২১: মুফতী এবরাহীম দেসাঈ, ফতোওয়া বিভাগ, জামিয়াতে উলেমায়ে ইসলাম, দক্ষিণ আফ্রিকা।]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন