শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৪

Hajir najir 2

(৭) مَاكَانَ اللهُ لِيُعَذِّ بَهُمْ وَاَنْتَ فِيْهِمْ
[হে মাহবুব! এটা   আল্লাহর অভিপ্রেত নয়  যে আপনি তাদের মধ্যে থাকাকালে  আল্লাহ তাদের কে শাস্তি প্রদান করবেন।]
অথাৎ খোদার মর্মন্তুদ  শাস্তি তারা পাচ্ছে না- এজন্য যে আপনি তাদের  মধ্যে রয়েছেন আর সাধারন ও সর্বব্যাপী আযাব তো কিয়ামত র্পযন্ত কোন জায়গায় হবে না। এ থেকে জানা যায় যে হুযুর আলাইহি ওয়াসাল্লাম  কিয়ামত পর্যন্ত প্রত্যেক জায়গায় বিদ্যমান থাকবেন। এ সম্পর্কে সুপ্রসিদ্ধ ‘তাফসীরে রূহুল বয়ানে বলা হয়েছে, হুযুর আলাইহিস সালাম প্রত্যেক পুণ্যত্মা ও প্রত্যেক পাপীর সাথে বিদ্যামান আছেন। এর বিশদ বিবরণ এ অধ্যায়ের তৃতীয় পরিচ্ছেদে দেয়া হবে। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন-
وَاعْلَمُوْا اَنَّ فِيْكُمْ رَسُوْلُ اللهِ
[তোমরা জেনে রেখ, তোমাদের মধ্যে রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিরাজমান)। এখানে সমস্ত সাহাবায়ে কিরামকে সম্বোধন করা হয়েছে অথচ তারা বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে বসবাস করতেন সুতরাং স্পষ্টই বোঝা যায় যে হুজুর আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে সব জায়গায় ও তাদের কাছে আছেন।
(৮) وَكَذَا لِكَ نُرِىَ اِبْرَ اهِيْمَ مَلَكُوْتَ السَّموَاتِ وَالْاَرْضِ
এবং এভাবেই হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সমস্ত আসমান ওযমীনে পরিব্যাপ্ত আমার বাদশাহি অবলোকন করাই ।
এ থেকে জানা যায় যে, আল্লাহ তাআলা হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামাকে তার চর্মরোগ সমগ্র জগত দেখার বন্দোবস্ত করেছিলেন। হুজুর আলাইহিস সালামের মরতবা হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম হতে  উর্দ্ধে। অতএব একথা স্বীকার করতেই হবে যে তিনি  (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও  সমগ্র জগত অবলোকন করেছেন । এ আয়াত এর তাৎপর্য ‘ইলমে গায়েব শীর্ষক আলোচনা পুর্ণ বিশ্লেষন করা হয়েছে।
৯) اَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِاَصْحَابِ الْفِيْلِ
হে মাহবুব আপনি কি দেখেননি প্রভু হস্তী বাহিনীর কি অবস্থা করছেন?
১০) اَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِعَادٍ
হে মাহবুব আপনি কি দেখেননী আপনার প্রতিপালক আদ নামক জাতির  সংগে কিরূপ আচরন করেছেন ?
আদ জাতি ও হস্তীবাহিনীর ঘটনাবলী হুজুর আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবির্ভাবের পুর্বেই সংঘটিত হয়েছে অথচ বলা হচ্ছে اَلَمْ تَرَ (আপনি কি দেখেননি?) অর্থাৎ আপনি দেখেছেন। এতে কেউ আপত্তি উত্থাপন করে বলতে পারে য়ে, কুরআন করীমে কাফিরদের প্রসঙ্গেও তো বলা হয়েছে اَلَمْ يَرَوْ اكَمْ اَهْلَكْنَا قَبْلَهُمْ مِنْ قَرْنٍ তারা কি দেখেনি, আমি তাদের আগে কত জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছি), এখানে লক্ষ্যণীয় যে, কাফিরগণ; তাদের আগেকার কাফিরদের ধ্বংস হতে দেখেনি; তবু আয়াতে বলা হয়েছে-তারা কি দেখেনি? সুতরাং, আপনি কি দেখেননি? এ উক্তি থেকে সচক্ষে দেখার ব্যাপারটি প্রমাণিত হয় না। এর উত্তর হচ্ছে- এখানে আয়াতে আগেকার কাফিরদের ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশ, বিধ্বস্ত ঘর-বাড়ী ও ধ্বংসাবশেষ দেখার কথাই বলা হয়েছে। মক্কার কাফিরগণ যেহেতু ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে ভ্রমন করার সময় সেসব স্থান সমূহের পার্শ্ব দিয়া যাতায়াত করতো, সেজন্য বলা হয়েছে এসব ধ্বংসাবশেষ দেখে কেন শিক্ষাগ্রহন করে না? হুজুর আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দৃশ্যতঃ না পৃথিবী পরিভ্রমন করেছেন না আদ' জাতিও অন্যান্য বিধ্বস্ত দেশ সমূহ বাহ্যিকভাবে দেখেছেন। তাই তার ক্ষেত্রে স্বীকার করতেই হবে  যে, এখানে তাঁর নূরে নবুয়াতের মাধ্যমে দেখার কথাই বলা হয়েছে ।
(১১) কুরআন শরীফের অনেক জায়গায় اِذْ  উক্ত হয়েছে, যেমন
وَاِذْقَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَئِكَةِ
(যখন আপনার প্রতিপালক ফিরিশতাদের উদ্দেশ্যে বললেন وَاِذْقَالَ مُوْسى لِقَوْمِه (যখন হযরত মুসা আলাইহিস সালাম স্বজাতির উদ্দেশ্যে বললেন ----) ইত্যাদি। তাফসীরকারকগণ এসব  জায়গায় اُذْكُرْ (ঐ ঘটনাটি স্মরণ করুন।) শব্দটি উহ্য আছে বলে মত পোষণ করেন। লক্ষণীয় যে স্মরণ করুন- একথা দ্বারা সেসব বিষয় বা ঘটনার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়, যা সংঘটিত হতে দেখা গিয়েছে, কিন্তু কালক্রমে সে দিকে বিশেষ দৃষ্টি নিবদ্ধ নেই । এত্থেকে প্রতীয়মান হয় যে ওই সমস্ত বিগত ঘটনাবলী  হুযুর আলাইহিস সালাম অবলোকন করেছেন। তাফসীরে রূহুল বয়ানে উল্লেখিত আছে যে হযরত আদম আলাইহিস সালামের সমস্ত ঘটনাবলী হুযুর আলাইহিস সালাম প্রত্যক্ষ করেছেন। সামনে এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হবে। কেউ আরও একটি আপত্তি উত্থাপন পূর্বক বলতে পারে যে কুরআন কারীমে বনী ইসরাইলকেও তো وَاِذْنَجَّيْنَا كُمْ مِنْ الِ فِرْعَوْنَ (সে সময়ের কথা স্মরণ কর যখন তোমাদেরকে ফিরাউনের বংশধরদের অত্যাচার -উৎপীড়ন থেকে রক্ষা করেছিলাম) । আয়াতের মধ্যে সম্বোধন করা হয়েছে । হুযুর আলাইহিস সালামের যুগের ইহুদীগণ কি উক্ত আয়াতে বর্ণিত ঘটনা সংঘটিত হওয়ার সময় বিদ্যমান ছিল? কিন্তু তাফসীরকারকগণ এখানেও اُذْكُرْ (স্মরণ কর) শব্দ উহ্য আছে বলে স্বীকার করেন। এ উত্তর হবে যে সমস্ত বনী ইসরাইলের ঐতিহাসিক ঘটনাবলী জানা ছিল, তারা ঐতিহাসিক গ্রন্থাবলী অধ্যয়ন করেছিল। সেজন্য তাদের জানা ঘটনাবলী দিকেই তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। পক্ষান্তরে হুযুর আলাইহিস সালাম না কোন ইতিহাসবেত্তার সান্নিধ্যে ছিলেন না শিক্ষা-দীক্ষায় উন্নত কোন গোত্রের মধ্যে লালিত-পালিত হয়েছেন। এমতাবস্থায় তাঁর পক্ষে একমাত্র নূরে নবুওয়াতের মাধ্যম ছাড়া অন্য কোন ভাবে জ্ঞানার্জনের কোন উপায় ছিল কি?
(১২) اَلنَّبِىُّ اَوْلَى بِالْمُؤْمِنِيْنَ مِنْ اَنْ فُسِهِمْ
[নবী মুসলমানদের কাছে তাদের প্রাণের চেয়েও নিকটতর।] দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মওলবী কাসেম সাহেব তার রচিত তাহযীরুন নাস গ্রন্থের ১০ পৃষ্ঠায় লিখেছেনঃ এ আয়াতের اَوْلى  শব্দের অর্থ হচ্ছে নিকটতর। তাহলে এ আয়াতের অর্থ দাঁড়ায় নবী মুসলমানদের কাছে তাঁদের প্রাণের চেয়েও নিকটতর। আমাদের নিকটতম হচ্ছে আমাদের প্রাণ; এ প্রাণ থেকেও নিকটতর হচ্ছেন নবী আলাইহিস সালাম। বলা বাহুল্য যে, অতি নিকটে অবস্থিত বস্তু দৃষ্টিগোচর হয় না।
অত্যধিক নৈকট্যের কারনে আমরা তাকে (প্রয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চোখে দেখতেপাই না।
বিঃদ্রঃ এখানে কিছু সংখ্যক লোক আপত্তি উত্থাপন করে থাকেন যে আপনারা যেহেতু মু্ক্কাল্লিদ আপনারদের জন্য কুরআনের আয়াত ও হাদিছ সমূহ থেকে দলীল প্রমাণ উপস্থাপন করাতো জায়েয নয়।
একজন মুকাল্লিদের উচিত তার বক্তব্যের সমর্থনে (মুজাহিদ ইমাম) এর উক্তি পেশ করা। সুতরাং আপনার কেবল আবু হানিফা (রহঃ) এর উক্তিই পেশ করতে পারেন। এর উত্তর কয়েকভাবে দেয়া যায়। (ক)আপনারা নিজেরাই যেহেতু হাযির ও নাজির না হওয়ার আকীদা পোষন করেন,সেহেতু আপনাদের উচিত ছিল আপন আকীদা এর সমর্থনে ইমাম সাহেব (রহঃ) এর উক্তি উপস্থাপন করা।
(খ) আমি তকলীদের আলোচনায় পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে আকীদা সম্পর্কিত কোন মাসআলায় তাকলিদ হয় না কেবলমাএ ফকীহগণের গবেষণালব্ধ মাসায়েলের ক্ষেত্রে তকলীদ প্রযোজ্য হয়। আলোচ্য বিষয়টি হচ্ছে আকীদা এর একটি মাসআলা।
(গ) মুকাল্লিদ সুস্পষ্ট আয়াত ও হাদিছ সমূহ থেকে দলিল প্রমান উস্থাপন করতে পারে। তবে হ্যা এসব দলীলের ভিত্তিতে নিজে মাসায়েল বরং করতে পারে না। এ প্রসঙ্গে তহাবী শরীফে উল্লেখিত আছেঃ
وَمَا وُهِمَ الْاَحْكَامُ مِنْ تَّحْوِ الظَّاهِرِ وَالنَّصِّ وَالْمُفَسَّرِ فَلَيْسَ مُخْتَصًّا بِه ( اَىْ بِالْمُجْتَهِدِ) بَلْ يَقْدِرُ عَلَيْهِ الْعُلَمَاءُ الْاَعَمُّ
যে সমস্ত আহকাম বা শরীয়ত বিধি কুরআনের যাহির নাস ওমুফাসসার ইত্যাদি প্রকৃতির আয়াত থেকে সরাসরি সুস্পষ্টভাবে বোধগম্য হয় না। এমন কথা বলা যায় না। এসব মাসায়েল বরং সাধারণ আলিমগণও বের করার সামর্থ রাখেন সুবিখ্যাত মুসাল্লামুছ ছবুত নামক উসুলে ফিকহ এর গ্রন্থে উল্লেখিত আছে-
وَاَيْضًا شَاعَوَذَاعَ اِحْتِجَاجُهُمْ سَلْفًا وَخَلْفًا بِالْعُمُوْ مَاتِ مِنْ غَيْرٍ نكير
অথাৎ অধিকন্তু ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত আয়াত থেকে দলীল গ্রহন করার রীতি পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ধর্মীয় মনীষীদের মধ্যে কোনরূপ ওজর আপত্তি ছাড়াই প্রচলিত হয়ে আসছে।
কুরআনে করীমেও ইরশাদ
فَاسْئَلُوْا اَهْلَ الذِّكْرِ اِنْ كُنْتُمْ لَاتَعْلَمُوْن
অর্থাৎ যদি তোমরা না জান তবে জ্ঞানীদের নিকট থেকে জিজ্ঞাসা করো। ইজতিহাদী মাসায়েল যেহেতু আমরা জানি না সেজন্য ইমামদের অনুসরণ করি। আর সুস্পষ্ট অর্থবোধক আয়াতসূমহের অর্থ আমরা বুঝি সেজন্য এসব ব্যপারে তকলীদ নিষ্প্রয়োজন।
(ঘ) হাযির-নাযির এর মাসআলা সম্পর্কে সুবিখ্যাত ফকীহ মুহাদ্দিস ও তাফসীরকারকদের উক্তি সমূহের বিশাদ বর্ণনা পরবর্তী পরিচ্ছেদ সমূহেও করা হবে। গভীর ভাবে চিন্তা-ভাবনা করে দেখবেন যে হাজির-নাজির এর এ আকিদা সমস্ত মুসলমানই পোষণ করে। -সুত্রঃ জাআল হক ১ম খন্ড-

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন