বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৫

ওহাবিদের ইতাহস -৩

তৃতীয় পর্ব ;- আল্লামা আফন্দি (রহ) 
ওহাবি সকারের মক্কা তায়েফের উপর জুলুম ও অত্যাচারের বর্নানা করেছেন এ ভাবে যে ;- তারা একদল লোক কে কোরান শরীফ পাঠরত দেখতে পেল , তারা তাদের সকলকে হত্যা করল । এর পর তারা বাজারে হামলা করল ও তাদের কে হত্যা করল। এর পর তারা মসজীদের দিকে অগ্রসর হল  ও সেখানে ১ জন কে হত্যা করল। এর সেখানে ২২-২৩ জন লোক ছিল।  তারা একটা দুরভেদ্য দুর্ঘে আশ্রয় নিল।   তিন দিন পর ওহাবি রা তাদের কে নিরাপত্তা দিয়ে বাইরে বার করে আনে ও সকলকে হত্যা করে । তারা তাদের মহিলাদের কে বিবস্ত্র করে বরফ আচ্ছাদিত এলাকায় ছেরে দেয়। তাদের অর্থ সম্পদ সকল কিছু লুট করে নেয়।  তারা কিতাব সমুহ নালা গলি ও নালার মধ্য নিক্ষেপ করল। কিতাব গুলোর মধ্য কোরান শরিফ , বুখারী মুসলিমের মত কিতাব ও ওনেক ফেকাহ কিতাব ছিল  ও কিতাবে সংখ্যা কয়েক হাজার ছিল । তারা এরপর তাদের ঘড়বাড়ি গুলো ধংস স্তুপে পরিনত করল।  এই হত্যাযজ্ঞ ঘটেছিল ১২১৭ হিজরি ( আল ফাজরুস স্বাদীক) পৃ ২২

তায়েফের উপর ওহাবিরা যে পরিমান অত্যাচার ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল তা সেই সময় মক্কা থেকে তারবার্ত্রার মাধ্যমে নিখিল ভারত খেলাফত কমিটিতে পাঠানো হয়েছিল এই ভাবে যে ;- ১১ সেপ্টেম্বর আজ সারা দুনিয়ার প্রায় ২০ হাজার মুসলমান মক্কা শরিফে একত্রিত হয়েছে ও তারা বিশ্ববাসীকে জানিয়েছে যে ওহাবিরা তায়েফে আক্রমণ করেছে ও সেখানে থাকা হাসেমী সৈন্যবাহীনী অত্যন্ত বীরবীক্রমে লড়ীই করেছে । 

ঘটনা ছিল ;- তারা হযরত ইবনে আব্বাস (রা) এর পবিত্র মাযার শরীফ ধংসের পর সেখানকার সকল বাসিন্দাদের নিশ্চন্হ করে দিয়েছে । তাদের মধ্য শিশু নারী  এমন কি বৃদ্ধারাও বাদ পড়েনি । মোট কথা তারা সেখানকার সকল প্রজা ও বিদেশি নাগরিকদের শেষ করে ফেলা হয়েছে । এজন্য মানবতা ও সভ্যতা ও ন্যায় পরয়নতার পতাকা বাগি জাতি সংঘের (যা প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের পর তৈরি করা হয়) কাছে আমরা তুলে ধরছি যাতে এই অত্যাচারীতা কে ধংস করে দেওয়া হয় ও আমাদের কে মুক্তি দেয়া হয় এদের হাত থেকে (১০ সেপ্টেম্বর ১৯২৪) 

মাসয়ালা এ হেজাজ ওয়াব্দে খেলাফত (১৯২৬ ইং পৃ ৪-৫) 

 উল্লেখিত যে এই বার্ত্রার সাথে কমছে কম ৫০ জন আলেমের সই তুলে দেওয়া আছে। যা তুলে ধরা প্রয়োজন মনে করলাম না ।

মক্কা শরিফে হামলা ও দখল (- 

নওয়াব সিদ্দিক হাসান খান ভুপালভী লিখেছেন যে ;- আব্দুল আজীজ দ্বীত্য় বছর একদল সৈন্যবাহীনী তৈরি করে তায়েফে প্রেরন করল । তারা সেখানে হত্যাযজ্ঞ চালানোর পর সেখানে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্টা করল । এর পর তারা সেই বছরই তারা কলনফাযাহ দখল করে নিল । ১৮০৪ সালে আব্দুল আজীজ একদল সৈন্যবাহীনী তৈরি করে নিজের সন্তান সাউদ কে দিয়ে তা মক্কা মুয়াজ্জামায় প্রেরন করল।  তারা মক্কা ধংস করতে তিন মাস মক্কাবাসীদের কে অবরুদ্ধ করে রাখলো। অবশেষে মক্কাবাসী তাদের অনুগত করতে বাধ্য হল । কেউ কেউ নিখেছেন যে সেই সময় তারা মক্কার সুধীজন ও বিশিষ্ট বেক্তি দের কে হত্যা করেছিল ও মক্কার পবিত্র কাবা ঘর কে বিবস্ত্র করে রেখেছিল ও নিজেকে ওহাবি মতবাদ গ্রহন করতে বাধ্য করেছিল । (তরজুমানে ওয়াহহাবিয়া ) ৩৪-৩৫

সরদার মোহাম্ম্দ হাসান বি এ লিখেছেন যে -ওহাবিরা এতই মুর্খ গ্রাম্য ও উগ্র আরব ছিলেন যে তারা একারনে   পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে গিয়েছিল । তারা তুর্কি মুসলমানদের প্রান সংহারকে মৌলিক পুন্য কর্ম (ওয়াজীব) ও দ্বীনের খেদমত মনে করত । সাধারন মুসলমানদের কে মুশরিক বলত ও তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ  ও আক্রমণ করাকে জেহাদ বলত (সাওয়ানিয়্যায় হায়্যাতে সুলতান ইবনে সাউদ) ৫৪ নং পৃ 


ওহাবিরা কাফেরদের কে হত্যা করেনি ;- ১৯২৬ সালের ভারতীয় কেন্দ্রীয় খেলাফত কমিটির নিকট একটা সুস্পষ্ট বিবৃতি আছে যে :- এক শতাব্দীর ও বেশি যুগ ধরে ওহাবিদের হাত কাফেরদের রক্তে রন্জিত হয়নি । যে পরিমান রক্তপাত তারা করেছে তা শুধু মুসলমানদেরই করেছে । তারা ছোট ছোট বিষয় নিয়ে হাজীদের কে মুশরিক ব্'লত। সুলতান আব্দুল আজীজের মুল শক্তি এই নজদীরাই । তাদেরকে যুদ্ধের জন্য এভাবে উদ্ভুদ্ধ তরা হতে যে দেশ দখলের লড়াইকে জেহাদ ফতোয়া দেওয়া হত ও যে দেশ দখলের জন্য যুদ্ধ করা হত সেই দেশের জনসাধারণদের মুশরিক তকমা প্রদান করা হত। আমি বার বার দেখেছি যে , যে হাজী মাকামে ইব্রাহিমের গেট বা তালা স্পর্শ করত তাদের কে বেত দ্বারা প্রবার করা হইত  এবং তাকে হলা হত (ইনতে মুশরিক) তুমি মুশরিক । আর যে হাজী গুলো জান্নাতুল মুআল্লার মাযারগুলো যিয়ারত করতে যেতেন, তাদের বেশিরভাগই মার খেয়ে আসতেন । (মাসয়ালায় হেজাজ ওয়াব্দে খেলাফত) পৃ ১০৪।


মক্কার উপর হামলা ;- সরদার মোহাম্ম্দ হাসান বি এ লিখেছেন যে ;-  সাউদেক সৈন্য বাহিনি তায়েফের উপর সরাসরি হামলা করে লজের দখলদারিত্ব প্রতিষ্টা করল  ও সেখান থেকে পার্শ্ববর্তী অন্চলে সৈন্য পাঠাতে লাগল । মক্কার শাষক শরিফের নিকট তেমন উল্লেখযোগ্য সৈন্য বাহীনি ছিল না । তিনি ওহাবিদের আক্রমণ সয্য না করতে পেরে তিনি জেদ্দায় চলে যান ।  ১৮৫৪ সালে বিনা বাধায় মক্কা দখল করে নেন । 
তাদের ওনেক দিনের ইচ্ছা ছিল যে তারা তাদের মতবাদের প্রচার মক্কা থেকেই করবে  যেখানে সামান্য তম শিরক পাবে তাদের মতে তা তারা নিশ্বেষ করে দিবে । সুতরাং তারা তখনই পবিত্র মাযার গুলো ও যিয়ারতের স্থান গুলো ধংস করে দিল । তারা কাবা ঘরের গিলাফ ছিরে ফেলল । 
তাদের আকিদা বিরুধি যা কিছুই তারা পেল তা তারা ধংস করতে মরিয়া হয়ে উঠল ও তা পুর্ন করল সেই সময় যতটা সম্ভব হয়েছিল (সাওয়ানিয়্যায় সুলতান ইবনে সাউদ) পৃ ৪৮

সরদার মোহাম্মদ হাসান বি এ  ও উপরের বর্নিত কথা গুলোই বলেছেন তবে তিনি আর একটু বেশি বর্নানা করেছেন তা হচ্চ্ যে ;- ইবনে সাউদ  বলেছিলেন সেই সময় মক্কার মুসলমানদের কে উদ্দেশ্য করে  তার সৈন্য বাহীনি কে যে (- মুশরিক বেঁচে যাবে যাক । কিন্তু কেন মাযার ও যিয়ারতের স্থান অবশিষ্ট রাখবে না । 
(সাওয়ানিহে হায়াতে সুলতান ইবনে সাঊদ ) পৃ ১৫৫


ওহাবিদের কথিক লা মাযহাবি (ক্বাযী শওকানির ছাত্র মুহাম্মদ ইবনে নাসির হাযেমী লিখেছেন যে  :- মোহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব নজদীর ছেলে আব্দুল্লাহর ছেলের যুগে তারা ৮ মহররম ১২১৮ হিজরি শনিবার  সকালে তারা মক্কার হামলা চালিয়েছিল (ক)(সাওয়ানিয়াহে হায়্যাতে সুলতান ইবনে সাউদ) পৃ  ৪৮ 

(খ) মোহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব পৃ ৭৩

অথচ পবিত্র মক্কা শরিফের উপর হত্যাকাণ্ড হারাম কিয়ামত পর্যন্ত ;- 

নবী আকরাম সাল্লেল্লাহু আলাইহিস সালাম বলেছেন যে ;- আমার আগে কারো উপর মক্কার হত্যাকাণ্ড বৈধ ছিল না , ও আমার জন্য ও দিনের একটা বিশেষ সময় ব্যাতীত বৈধ করা হয়নি । সুতরাং আল্লাহ তায়ালা নিজে অবৈধ ঘোষনার পরে কিয়ামত পর্যন্ত মক্কার যুদ্ধ করা হারাম ।( মিশকাত ২৩৭-২৩৮) 

যুদ্ধ করা দূরের কথা অস্ত্র উচিত্ ধরা ও হারাম :-

হযরত যাবের (রা) বর্ননা করেছেন যে ;- আমি নবী এ কারীম (সা) কে বলতে শুনেছি যে , তোমাদের মধ্য কারো জন্য মক্কা মুকার্রামায় হাতিয়া উত্তলন করা বৈধ নয় (মুসলিম , মিশকাত , বুখারী) 

তো যে দেশে বা যায়গায় অস্ত্র উত্তলন করা ও বৈধ নয় সেই দেশে হামলা করে দখল করে যারা তারা কতবড় ইমানদার ব্যাক্তি ! তা কি চিন্তা করে দেখেছেন কেউ একবার ? জবাব দিবেন ।

মদিনা মুনাওয়ারায় হামলা ;- ওহাবি নজদিদের প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ মির্যা হায়্যাৎ দেহলবী লিখেছেন যে ;- ১৮০৩ সালের শেষের দিকে তারা মদিনায় দখলদারিত্ব প্রতিষ্টা করল । তারা অন্যান্য কবর ও যিয়ারতের স্থান গুলো ধংস করে নবী পাকের পবিত্র রওজায় আকদাস কে ও ছাড় দেয় নাই । রওজায় আক্কদাসের মনি মুক্তা গুলো তারা লুট করে বরবাদ করে ফেলেছে  ও নবী পাকের কবরের উপড় বিছিয়ে দেওয়া মুল্যবান চাদর মুবারক ও তারা তুলে ফেলেছে (হায়্যাতে তাইয়েবাহ ) ৩৮৫ 

পবিত্র রওজা পাকের গম্বুজে গোলা বর্ষন ;- ইতিহাস বেত্তা সরদার মুহাম্মদ হাসান বি , এ লিখেছেন যে ১৮০৩ সালে আগষ্ট মাসে নজদীরা মদিনা আক্রমণ করে ২৫ তারিখ । সেই সময় আমীর আলীর শাষকগন প্রচার করে যে নজদীরা  পবিত্র গম্বুজের উপর গোলা বর্ষন করেছে । এই খবর প্রচারিত হয়ে গেলে সারা মুসলিম জাহান থেকে ক্ষোভ প্রকাশ হতে থাকে যদিও নজদীরা তা অস্বীকার করেছিল । সারা মুসলিম জাহান আলাদা আলাদা ভাবে চেষ্টা করতে থাকে রওজা পাক হেফাজত করার। এ  দিকে ইরান একটা প্রতিনিধি দল প্রেরন করে  ঘটনার সত্যতা যাচাই করার জন্য । ১৮০২৫ সালের শেষের দিকে উক্ত প্রতিনিধি দল তাদের রিপোর্ট হস্তান্তর করে , ও তাতে যাচাই করে দেখা যায় যে রওজা পাকের উপরের সবুজ গম্বুজে ৫ টা গুলি লেগেছিল ((সাওয়ানিয়াহে হায়্যাতে সুলতান ইবনে সাউদ) পৃ ১৫৭

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন