বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৫

তাকবিয়াতুল ইমান খন্ডন ৪

তাকবিয়াতুল ইমান ------৪ 

বিগত দিনে তাকবিয়াতুল ইমান নিয়ে ৩ টা পোষ্ট করার পর কোন দেওবন্দি বা বালাকোটি গোলাপি সুন্নি রা জবাব দিতে পারে নাই । আমি আজ ও বলছি যে , যদি এমন কেউ থেকে থাকেন যে জবাব দিতে সক্ষম , আমাদের কে বোঝাতে সক্ষম , তিনি দয়া করে যেন আমাদেরকে/আমাকে বুঝিয়ে দেন। 

তাকবিয়াতুল ইমান কিতাবের ৮ নং পেজে নিহত শাহ ইসমাইল বালাকোটি লিখেছেন যে ;- সপ্তাংগে প্রনিপাত(সেজদা করা) তাহার দয়ার জন্য শোকর বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা ,বিপদের সময় সকাতরে ডাকা , তিনি সকল স্থানে হাজীর আছেন ।সকল বস্তু দেখতেছেন , তিনি যাহা ইচ্ছা তাহা করিতে পারেন . এরুপ বিস্বাস করা বা ইত্যাদি কাজ আল্লাহ তায়ালা নিজের জন্য নির্দিষ্ট করেছেন । 


এ বিষয় আওলিয়া আম্বিয়া নবী রাসুল জীন পরী দেও-ভুত কোনই তফাৎ নাই । অর্থাৎ ইহাদের অথবা ইহাদের ছাড়া অন্য কাহাদের  উদ্দেশ্য কোন বেক্তি ঐরুপ কাজ করিলে সে বেক্তি মোশরেক হয়ে যাবে ( তাকবিয়াতুল ইমান ) নিহত শাহ ইসমাইল বালাকোটি লিখিত পৃষ্টা নং ৮ ।

শাহ ইসমাইল দেওবন্দি ও কথিত সুন্নি বা বালকোটি সুন্নি বা গোলাপী সুন্নি বা হানাফি( এই নামে একটা দল আছে ) দের মহান ইমাম ও অমর শহীদ । 

তারা চেতনায় বালাকোট নামে মাহফিল করে কিন্ত্ কারবালার মাহফিল তাদের দিযে আয়োজন করানো সম্ভব হয় না । 


যাক , উপরের কথা গুলো থেকে আমি ওনেক কথায় একমত যে কাউকে সেজদা করা কাহারো নামে পশু জবাই করা এসব ঠিক নয় । বরং হারাম কাজ । 

কিন্তু আমি উপরোক্ত কথা গুলো থেকে কয়েকটা বিষয় একমত নই । যেমন প্রথমত কথা হল যে বিপদে কাউকে সকাতরে ডাকা । 

উল্লেখ্য যে , নিহত শাহ ইসমাইল লিখেচে কাউকে বিপদে সকাতরে ডাকা শিরক । 

কিন্তু বিপদে পড়ে সকাতরে ডাকার প্রমান দেওবন্দিদের কিতাবে বিদ্যমান আছে । দেখুন ;- 

জনাব আশরাফ আলী থানবীর লিখিত কিতাব স্বীয় পীর কেবলা হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজের এ মক্কি (রহ) নামে কারামতে ইমদাদিয়া এর ১৮ নং পৃষ্টায় লিখেছেন যে ;- হাজী সাহেবের কোন এক মুরিদ জাহাজে ছিল , আর ঝড়ে জাহাজের তলা ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাওয়ার উপক্রম হল , উনারা দেখলেন যে এখন মিত্তু ছারা কোন উপায় নেই ,সেই সংকটময় মুহুর্তে স্বীয় পীরের কথা মনে করলেন । কারন এই সময় থেকে অধিক প্রয়োজন আর কোন সময় হতে পারে । আল্লাহ তায়ালা সর্বদ্রোতা , সর্বদ্রষ্টা সব কিছুর আমজান দানকারী । সেই সময় জাহাজ ডোবা থেকে রক্ষা পেল ও সমস্ত লোক বেঁচে গেল । 



এদিকে তো এ ঘটনা সংঘটিত হল , অন্যদিকে ওলীয়ে জাহান (হাজী ইমদাদুল্লাহ ) সাহেব পরের দিন স্বীয় খাদেম কে বললেন আমার কমর টা টিপে দাও , খুবই ব্যাথা করতেছে ।খাদেম কমর টিপতে টিপতে  যখন কোমর থেকে লুংগী একটু হটলো তখন দেখলেন যে , কোমর ক্ষতবিক্ষত ও কয়েক যায়গায় চামড়া উঠে গেছে ।

খাদেম জিগ্গেস করল , হুজুর , ব্যাপার কি , কোমড় কি ভাবে ক্ষত বিক্ষত হল ? 
হাজী সাহেব বললেন ও কিছু না ।

খাদেম পুনরায় জিগ্গেস করলে হাজী সাহেব নিশ্চুপ হয়ে থাকলেন। 
এরপর খাদেম আবার বলেন যে , হুজুর এটা তো আঘাতের চিন্হ , কিন্তু আপনি তো কোন খানেই তাশরিফ নিয়ে যান নি । 


হাজী সাহেব উত্তর দিলেন যে , এক জাহাজ ডুবা যাচ্ছিল , তাতে তোমাদের দ্বীনি সিলসিলার এর ভাই ছিল । তার কান্নাকাটি আমাকে অস্থির করে তুলেছিল । তাই কোমড়ের সাহায্য জাহাজটা উপরে তুলেছি । যখন জাহাজটা আগে বাড়ে তখন আল্লাহর বান্দাগন মুক্তি পেল । তাই হয়ত ঘষাঘষিতে কোমড়ের চামড়ার ব্যাথা অনুভব হচ্ছে । কিন্ত্ এটা কাউকে বলিওনা  ( কারামতে ইমদাদিয়া ) পৃষ্টা নং ১৮ ।

উপরের কথা গুলো যদি আল্লাহ তায়ালার ওয়াস্তে পাঠ করে সুনিপুণ ভাবে নিরপেক্ষ থেকে বিচার করেন তবে দেখবেন যে ;- নিহত বালাকোটি শাহ ইসমাইলের মতে , উক্ত মুরিদ , যিনি বিপদে পড়ে ওনার পীর সাহবে কে ডেকেছিলেন তিনি মুশরিক হয়ে যান । 


দ্বিতিয়ত ;-এমন কি বিপদে সাহায্য করার ইখতিয়ার যেহেতু আল্লাহ কাউকে দেন নাই(আল্লাহ তায়ালা  সমস্ত দুনিয়ায় কাহার ও উপরে কোন প্রকার ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকার দেন নাই এবং কেহ কেহ কাহারো উপকার বা সাহায্য করিতে সমর্থ নহে ;- তাকবিয়াতুল ইমান পৃষ্টা ৭) সেহেতু নিশ্চয় হাজী ইমদাদুল্লাহ সাহেব প্রকৃত পক্ষে আল্লাহ ছিলেন । কারন তিনি সাহায্য করেছেন তার মুরিদ কে । আর আল্লাহ ছারা কেউ কাউকে সাহায্য করতে পারেন না নিহত শাহ ইসমাইল বালাকোটির মতে ।
তা হলে দেখা গেল যে দেওবন্দিদের আল্লাহ ২ জন । এক আল্লাহ উপরে ও দ্বীতিয় আল্লাহ হাজী সাহেব ( নাউযুবিল্লাহ ) এবং তারা সেই মতে মুশরিক প্রমানিত হয় । কারন তাদের সাহায্য কারী তাদের কিতাব থেকে দুই জন । আর সাহায্য আল্লাহ ছারা কেউ করতে পারে না । 

আর তৃতীয়ত ;- আশরাফ আলী থানভী সাহেব ও মুশরিক সাব্যস্ত হন , এই রকম মুশরিকিকি কাহিনি বর্ননা করার কারনে । 

তবু আমরা মুশরিক। তারা মুশরিক নয় । আর শাহ ইসমাইলের কথা গুলো দেওবন্দি জামাতের জন্য নয় ।কথা গুলো আমাদের জন্য ।  কারন আমরা বিপদের সময় আমাদের আঁকা সাল্লেল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম কে ডাকি । ওনার মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য আশা করি । আমরা গাউসে বাগদাদ কে ডাকি , খাজা মুইনুদদিন কে ডাকি যাতে আল্লাহ তার বন্ধুদের ওয়াস্তে আমাদের প্রতি দয়া করেন । 
তাই আমরা তার কথায় মুশরিক । কিন্তু দেওবন্দিরা যখন ডাকে তাদের নিজেদের পীর বুযুর্গদের কে তখন তারা প্রকৃত আল্লাহ কে ডেকে থাকে । তখন আর শিরক হয় না । 

যদি আমি কিছু ভুল বলে থাকি তবে দয়া করে পোষ্ট আকারে আমার ভুল গুলো তুলে ধরে লিখিত জবাব পেশ করবেন।  যাতে করে সকলে দেখে ও তাদের ভুল সংশোধন করার সুযোগ পায় । 

আর জানি , কার কত দম আছে । 

এবার দ্বীতিয়  পয়েন্ট হল যে ;- 
এমন আকিদা রাখা যে ;- তিনি সকল স্থানে হাজীর আছেন , বা দেখতেছেন এমন আকিদা রাখা শিরিক ও বেক্তি মুশরিক হয়ে যায় ( তাকবিয়াতুল ইমান পৃষ্টা নং ৮)

প্রথমত কোন কিছু দেখতেছেন এটার বিষয় দেখুন ;- 
মাওলানা জাকারিয়া তার কিতাব (শরীয়াত ও তরিকত কা তালাজুম ) এ লিখেছেন যে মাওলানা আশরাফ আলী থানবী বলেন যে মাওলানা খলিল আহমাদ সাহেবের কোলে বসতেও আমার ভয় হয় না। কিন্তু শাহ আব্দুর রহিম সাহের এর এত বেশি কাসফ হত যে ওনার মজলিসে বসতেও আমার ভয় হয়। না জানি তিনি আমার মনের কি কি ভেদ জেনে ফেলেন। (শরীয়াত ও তরিকত কা তালাজুম ) ১৯০ নং পৃষ্টা।  

কারো মনের কথা অন্য জন জানতে পারা এটা শাহ ইসমাইলের মতে শিরক । কারন কেউ জানে না কার মনে কি আছে আল্লাহ ছারা।
 আশা করি বুঝতে পেরেছেন যে ;- আবেদুর রহিম সাহেব ও তাদের আল্লাহ । কারন তিনি জানতে পারতেন তার সামনে গেলেই থানভী সাহেবের মনে কি আছে । আর এটা নিশ্চয় মুসরিকি আকিদা : আর তারা এমন বিস্বাস তাদের কিতাবে প্রচার করে । সো তারা উভয় মুশরিক শাহ ইসমাইলের মতে । 

আসলে উক্ত কথা টা ও দেওবন্দি জামাতের জন্য না যা নিহত শাহ ইসমাইল লিখেছে । তা আসলে আমাদের জন্য । আমরা মনে করে থাকি যে , নবী রাসুলগন তাদের উম্মতের বিষয় সজাগ ও তারা জানে আমাদের মনে কি আছে । এ নিয়ে বুখারি সরিফ কিতাবুস সালাত এ একটা হাদীস ও আছে যে আমার নবী বলেছেন যে ;- এই আমার সাহাবা রা , তোমরা কি মনে কর ? আমি কি শুধপ সামনের দিকে দেখি ? আল্লাহর কসম আমি সামনে যেমন দেখি তেমনি পিছনে ও দেখি  ও তোমাদের রুকু সেজদা দিলের মধ্যেকার খুশু বিনয় কোন কিছুই আমার নিকট গোপন নয়( বুখারি শরিফ কিতাবুস সালাত অধ্যায় ) 

কিন্তু এমন মনে করা শাহ ইসমাইলের মতে মুশরিকদের কাজ । 

কিন্তু যখন তাদের বুযুর্গদের বিষয় বর্ননা আসে এমন মনের কথা জানতে পারা তখন এটা হয় তাওহিদি বান্দাদের কাজ । আমাদের নবীর বেলায় তাদের এত দুষমনি এত ফতোয়া কিন্ত যখন তাদের বুযুর্গদের কথা আসে তখন তা হয়ে যায় তাকবিয়াতুল ইমান । বিচার আপনারা করুন 

এর পরে হাজীর মনে করা ;- এর পর রশিদ আহমাদ গান্গুহী তার কিতাব ( ইম্দাদুস সুলুক ) এর ৬৭ নং পৃষ্টায় লিখেছেন যে ;- মুরিদকে বুঝতে হবে যে শায়েখ এর রুহ নির্দিষ্ট কোনো স্থানে স্থির নেই। শায়েখ এর রুহানিয়াত মুরিদ যে খানেই থাকুক সেখানেই পৌছাবে।


উক্ত কথা টা ভাল করে দেখুন । শাহ ইসমাইলের মতে সকল স্থানে হাজীর হওয়া আল্লাহ তায়ালার জন্য নির্দিষ্ট ছিফাত । তা কোন নবী রাসুল পীর পয়গম্বর ওলী আওলিয়া জীন পরী ভুত প্রেতের মধ্য কোন তফাৎ নাই । 

উক্ত কথা থেকে এটা বোঝা গেল যে আল্লাহ তায়ালা ছারা আর কেউই সর্ব স্থানে হাজীর নয় । 

আর উপরে গাংগুহীর কথা থেকে বোঝা গেল যে তিনি আল্লাহ । ও তার মুরিদ যেখানেই হোক না কেন তার রুহানীয়াত সেখানে পৌছে যায় । এ থেকে দেওবন্দিদের একের অধিক আল্লাহ সাবস্ত হয় ও তারা মুশরিক প্রমান হয় । 



হাজির হওয়া নিয়ে যে বক্তব্য এসেছে নিহত শাহ ইসমাইলের তা আসলে দেওবন্দিদের জন্য নয় । বরং তা ও আমাদের জন্য । শাহ ইসমাইল বালাকোটির মতে আল্লাহ ছারা আর কাউকে হাজির মনে করা শিরক , চাহে তা কোন নবী ওলি আওলিয়াই হোক না কেন । 

আর আমরা আমাদের নবী (সা) কে হাজীর মনে করে থাকি , আমাদের নবী আমাদের বিষয় সর্বাত্মক জ্ঞাত  মনে করে থাকি । তাই আমরা শাহ ইসমাইলের মতে মুশরিক । 

কিন্তু গাংগুহি সাহেব যখন তার কিতাবে লিখে হেলেন যে মুরদি কে বুঝতে হবে তার শায়েখের রুহানীয়াত তার নির্দিষ্ট স্থানে স্থির নেই ,  মুরিদ যেখানেই হোক পৌছতে সক্ষম । তখন আর শিরক হয় না । বরং তাওহিদ প্রমান হয় । কারন গাংগুহি তো তাদের আল্লাহ । কারন তার রুহানীয়াত হাজির হতে পারে যেখানেই হোক না কেন তার মুরিদ । 

আর আমরা মুশরিক। কারন আমাদের নবী কে আমরা হাজীর মনে করে থাকি । 

এই হচ্ছে তাদের আকিদার নীতি আমাদের নবী ও কাদের বুযুর্গের বিষয়ে ।

আল্লাহ বিচার করুন । 

আমাদের কে দেওবন্দি ফেতনা ও রাসুলের দুষমনদের থেকে হেফাজত করুন। আমীন । 


সোহেল রানা 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন