বৃহস্পতিবার, ৬ আগস্ট, ২০১৫

সুফী কারা ?

সুফিবাদ (sufism) কি এবং প্রকৃত সুফি কারা
বিশ্বের বিখ্যাত সুফী, দার্শনিক, গবেষক, কবিগণ বিভিন্ন সময়ে আপন দৃষ্টিকোণ ও উপলব্ধি থেকে সুফীবাদকে সংজ্ঞায়িত ও বর্ণনা করেছেন।
অধিকাংশ সুফী দার্শনিকের মতে সুফী শব্দের উতপত্তি ‘সুফ’ শব্দ হতে, যার অর্থ পশম। পূর্বে সংসারত্যাগী সাধু সন্ন্যাসীগণ মোটা কর্কশ পশমী বস্ত্র পরিধান করতেন। এই পশমী কাপড় তাঁদের অতি সাধারণ নির্বিলাস জীবনযাপনেরই পরিচায়ক ছিল।
অনেকের মতে সুফী শব্দের উদ্ভব আরবী ‘সাফা’ শব্দ হতে। যার অর্থ পবিত্রতা,পরিশুদধি। তাঁদের মতে যেসকল মহাত্মাগণ সাংসারিক পাপ-পঙ্কিলতা এবং দুনিয়ার মোহগ্রসতো হতে কায়মনোবাক্যে পবিত্র, তাঁরাই সুফী।
আবার অনেকের মতে ‘আসহাবে সুফফা’ হতে সুফী শব্দের উতপত্তি। নবী করীম (সাঃ) এর সময়ে একদল নবীপ্রেমী সংসারধর্ম ত্যাগ করে নবীজীর (সাঃ) মদীনা মুনাওয়ারাস্থ আবাসস্থল সংলগ্ন স্থানে বসবাস করতেন এবং সর্বদা আল্লাহর ধ্যান ও ইবাদতে মশগুল থাকতেন। তাঁদের আসহাবে সুফফা নামে অভিহিত করা হয়।
বস্তুত পার্থিব কামনা-বাসনা মুক্ত, নির্বিলাস সহজসরল জীবনযাপনকারী মহত সাধু পুরুষগণ যারা সাধারণত্বের সীমা অতিক্রম করতে সমর্থ হয়েছেন, আপন ‘আমিত্ব’ বিনাশে সমর্থ হয়েছেন, পার্থিব জ্ঞানের পাশপাশি যাদের অন্তরে সৃষ্টিকর্তা তাঁর গুপ্ত রহস্যময় জগতকে উন্মুক্ত করেছেন, যারা বহুত্বকে অতিক্রম করে আপন আপন শায়েখের মাধ্যমে একক মহাসত্যকে খুজে পেয়েছেন এবং আপন মহাসত্যের মানবীয় আহসান সুরত বা রুহের দরশন লাভ করেছেন বা আত্মদর্শন হয়েছে তাঁরাই সুফী। ইংরেজীতে সুফী কে Saint বলা হয় । আরবীতে ওলি বা Wali (friend of allah ) বলা হয়। যার নিরলস ভালবাসা-প্রেম-ইশক শুধুমাত্র ঐ এক অদিতীয় মহান সততা (ওয়াহদাতুল ওজুদ) এর (love for only allah ) প্রতি এবং যিনি আললাহতে চিরসথায়ী বা জীবনতো ( life in allah or baka) তিনি ই সুফি বা Saint বা Wali । তাঁরাই প্রকৃত জ্ঞানী, পূর্ণমানব, সিদ্ধপুরুষ, তাঁরাই যোগ্যতম পথপ্রদর্শক, কামেল-ই-ইনসান। তাঁদের শারীরিক অবয়ব ভিন্ন হলেও তাঁদের আত্মা মহাপ্রভুর সত্ত্বায় সম্পূর্ণরূপে বিলীন। তাঁদের কথা-বার্তায়, কাজে-কর্মে, চলনে-বলনে কেবলমাত্র সত্যের নূর তথা আলো প্রকাশিত ও বিচ্ছুরিত হয়। তাঁরা কঠোর আধ্যাত্মিক সাধনার বলে আপন প্রবৃত্তি তথা কামনা, বাসনা, হিংসা, ক্রোধ, লালসা হতে মুক্ত ও পবিত্র বিধায় খোদার খোদায়ীর প্রকাশস্থল সাব্যস্ত হোন। যার ফলে তাঁদের মাধ্যমে প্রায়শ নানান অলৌকিকত্ব প্রকাশ পায়, যা প্রকৃতপক্ষে খোদার কুদরতেরই পরিচায়ক।
তাদের সুরত ও সিফাত সবই আললাহর । তারা আললাহর চরিত্রে চরিত্রবান বা আললাহ রংয়ে রংজিত ।
আল কোরআনে এরশাদ হচ্ছে- সিবগাতাল্লাহ ; ওয়া মান আহসানু মিনাল্লাহি সিবগাতাও ওয়া নাহনু লাহু আবিদুন। অর্থ : আল্লাহর রং গ্রহণ কর এবং আল্লাহর রং অপেক্ষা কার রং অধিক উত্তম ? এবং আমরা তারই ইবাদত করি । (সুরা বাকারা-১৩৮)
রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেন- তাখাল্লাকু বি আখলাকিল্লাহি তাআলয়ূ । অর্থ: তোমরা আল্লাহর চরিত্রে (রংয়ে) চরিত্রবান হয়ে যাও। ( সিররুল আসরার : বড়পীর গাউসুল আযম দস্তগীর, পৃষ্টা-৫০ )
আল্লাহর চরিত্র বলতে কি বুঝায় ? আল্লাহর স্বভাবে স্বভাবিত হওয়া । রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর চরিত্র হলো আল্লাহর চরিত্র । মানুষকে আল্লাহ তার স্বভাব অনুযায়ী সৃষ্টি করেছেন । (সুরা রুম ;৩০) আল্লাহর যে স্বভাবে মানুষ তৈরি সেটাই হলো নুরে মোহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম । সুতরাং নুরে মোহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম তথা আল্লাহ জাল্লা শানুহুর চরিত্রে যিনি চরিত্রবান তিনি সুফি । এদের সমপরকে হাদিসে কুদসীতে এরশাদ হচছে -
“বান্দাগণ নফল ইবাদতের দ্বারা আমার সান্নিধ্যের প্রতি অগ্রসর হতে থাকে যে পর্যন্ত না আমি তাকে ভালোবাসি এবং আমি যখন ভালোবাসি তখন আমি তার শ্রবণশক্তি হয়ে যাই যা দ্বারা সে শ্রবণ করে, আমি তার চোখ হয়ে যাই যা দ্বারা সে দেখে।“ (বুখারী)
তাই তাঁদের কথাবার্তা, কাজকর্ম আপন ইচ্ছায় নয় বরং খোদার ইচ্ছানুযায়ী হয়ে থাকে। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে এরশাদ হচছে -
“হে হাবীব! আপনী যে ধুলি-কণা (মাটির দলা )নিক্ষেপ করেছেন তা আপনি করেনি বরং তা নিক্ষেপ করেছেন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা। “ (সূরা আল আনফাল – আয়াতঃ ১৭)
সৃষ্টির আদিলগ্ন থেকেই যখনই মানবজাতি অন্যায়, অবিচার, অসত্য ও পাপাচারের অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছে তখনই বিশ্বকর্তা মহাপ্রভু আল্লাহ জাল্লা শানুহু স্বীয় নির্ধারিত প্রতিনিধি তথা নবী-রাসুল প্রেরণের মাধ্যমে মানবজাতিকে হেদায়েত ও মুক্তির পথ দেখিয়েছেন। এই সকল নবী-রাসুলগণের প্রত্যেকেই একটি নির্দিষ্ট জাতি, গোত্র, কিংবা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মানবগোষ্ঠীর হেদায়েতের দায়িত্বভার নিয়ে ধরাধমে আগমন করেন এবং স্ব স্ব দায়িত্ব যথার্থতার সহিত সুসম্পন্ন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় মানব ইতিহাসের কোন এক সুকঠিন সন্ধিক্ষণে নিকষ কালো রাত্রির শেষে প্রভাতরবির ন্যায় আবির্ভূত হন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব,অতিমানব সারকারে কায়েনাত, শাহেনশাহে মদীনা, নূরে মুজাসসাম, হুযুর পুর নূর হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা আহমদ মোজতবা সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম। তিনি খোদার খোদায়ীর সর্বশ্রেষ্ঠ নিদর্শন রূপে এ ধরায় আগমন করেন এবং জাতি-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে এমনকি শুধুমাত্র মানবজাতিকে নয় বরং সমগ্র সৃষ্টিজগতকে তাঁর রহমতের আওতাভুক্ত করে ‘রাহমাতুল্লিল আলামীন’ রূপে খোদায়ী প্রশাসনের সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হোন। অতঃপর তিনি বিশ্ববাসীর জন্য খোদাপ্রদত্ত দ্বীনকে পরিপূর্ণতা দান করেন এবং ‘খাতেমুন নবীঈন’ রূপে নবুয়ত যুগের পরিসমাপ্তি ঘোষণা করেন। তার দীন ইসলামকে সারবোজনীন রুপে পরবরতীকে যারা প্রকাশ করেছেন তারাই যুগের ব্যবধানে আহলে বাইত, প্রকৃত সাহাবী, সুফি,গাউস,কুতুব,ওলি ও আউলিয়া নামে পরিচিত।

হে আললাহ ! আমাদের কে সত্য জানার ও বুঝার তৌফিক দিন । আমীন । সুমমা আমীন । আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মোহাম্মদ ওয়ালা আলে মোহাম্মদ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন